লগইন করুন
গারানীক্ব কাহিনীর সাথে যুক্ত হ’ল অত্র ঘটনা। ইবনু ইসহাক বলেন, মক্কাবাসীদের ইসলাম কবুলের খবর শুনে হাবশার মুহাজিরগণের অনেকে মক্কায় ফিরে আসেন। যাদের সংখ্যা ছিল ৩৩ জন। তাদের মধ্যে ছিলেন ওছমান বিন মাযঊন ও তার সাথীগণ। তারা সাগর পার হয়ে এসেই মিথ্যা খবর সম্পর্কে জানতে পারেন। তখন তাদের অনেকে ফিরে যান ও অনেকে গা ঢাকা দেন। কেউবা মক্কার কোন কোন নেতার আশ্রয়ে থাকেন। এমনিভাবে ওছমান বিন মাযঊন থাকেন ধনাঢ্য নেতা অলীদ বিন মুগীরাহ্র আশ্রয়ে। কিন্তু যখন তিনি দেখেন যে, অন্য মুসলমানেরা নির্যাতিত হচ্ছে। অথচ তিনি নিরাপদে আছেন, তখন তিনি উক্ত আশ্রয় পরিত্যাগ করেন এবং বলেন, আল্লাহর কসম! একজন মুশরিকের আশ্রয়ে আমার দিবারাত্রি শান্তির সাথে অতিবাহিত হচ্ছে, অথচ আমার সাথী দ্বীনী ভাইয়েরা আল্লাহর পথে নানাবিধ নির্যাতন ভোগ করছে। যা আমার ভোগ করতে হচ্ছে না। এটা আমার জন্য অত্যন্ত বড় ধরনের ত্রুটি। অতঃপর তিনি কুরায়েশদের মজলিসে গিয়ে বসেন, যেখানে কবি লাবীদ বিন রাবী‘আহ নিজের কবিতা পাঠ করছিলেন। এক পর্যায়ে লাবীদ বলেন, أَلاَ كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلاَ اللهَ بَاطِلُ ‘মনে রেখ আল্লাহ ব্যতীত সকল বস্ত্ত মিথ্যা’। ওছমান বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। অতঃপর লাবীদ বললেন, وَكُلُّ نَعِيمٍ لاَ مَحَالَةَ زَائِلُ ‘আর প্রত্যেক নে‘মত অবশ্যই বিদূরিত হবে’।[1] ওছমান বললেন, আপনি মিথ্যা বলেছেন। نَعِيمُ الْجَنَّةِ لاَ يَزُولُ ‘জান্নাতের নে‘মতরাজি নিঃশেষিত হবে না’। লাবীদ বললেন, হে কুরায়েশগণ! আল্লাহর কসম! এ ব্যক্তি সর্বদা তোমাদের সাথী (কবি)-কে কষ্ট দিতে থাকবে। কখন এ লোক তোমাদের মাঝে এসেছে? উত্তরে জনৈক ব্যক্তি বলল, إنَّ هَذَا سَفِيهٌ فِي سُفَهَاءَ مَعَهُ، قَدْ فَارَقُوا دِينَنَا، فَلاَ تَجِدَنَّ فِي نَفْسِكَ مِنْ قَوْلِهِ ‘লোকটি তার সাথী বেওকুফদের মধ্যকার একজন বেওকুফ। ওরা আমাদের দ্বীন থেকে পৃথক হয়ে গেছে। অতএব আপনি ওদের কথায় কিছু মনে নিবেন না’। কিন্তু ওছমান উক্ত কথার প্রতিবাদ করলেন। ফলে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে গেল। তখন ঐ লোকটি উঠে তার চোখে থাপপড় মেরে আহত করে দিল। পাশে বসে অলীদ সবকিছু দেখছিলেন। তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে ভাতিজা! তোমার চোখটা অবশ্যই সুন্দর ছিল এবং তুমি একটা নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলে। জবাবে ওছমান বললেন, بَلْ وَاللهِ إنَّ عَيْنِي الصَّحِيحَةَ لَفَقِيرَةٌ إلَى مِثْلِ مَا أَصَابَ أُخْتَهَا فِي اللهِ ‘বরং আমার সুস্থ চোখটি তার সাথী চোখটির ন্যায় আল্লাহর রাস্তায় আহত হবার অপেক্ষায় রয়েছে’।[2]
বলা হয়ে থাকে যে, ওছমান বিন মাযঊনই প্রথম ছাহাবী, যিনি মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন এবং বাক্বী‘ গোরস্থানে সমাহিত হন। কথাটি কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত নয়। বরং এর ভিত্তি হ’ল ওয়াক্বেদীর বর্ণনা, যা মাতরূক বা পরিত্যক্ত’।[3]
[2]. ইবনু হিশাম ১/৩৬৪-৭১; বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ২/২৯১; সনদ ‘মুরসাল’; মা শা-‘আ ৬৩ পৃঃ।
[3]. আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩০৬০-এর আলোচনা দ্রঃ; মা শা-‘আ ৬৪ পৃঃ।