লগইন করুন
বুদ্ধিবৃত্তিক ও অলৌকিক সকল পন্থায় পরাজিত হয়ে কুরায়েশ নেতারা এবার আপোষমুখী পদ্ধতি গ্রহণ করল। ‘কিছু গ্রহণ ও কিছু বর্জন’-এর নীতিতে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে আপোষ করতে চাইল। কুরআনের ভাষায়وَدُّوْا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُوْنَ ‘তারা চায় যদি তুমি কিছুটা শিথিল হও, তাহ’লে তারাও নমনীয়তা দেখাবে’ (ক্বলম ৬৮/৯)। এ বিষয়ে তাদের প্রস্তাবগুলি ছিল নিম্নরূপ :
(ক) একদিন রাসূল (ছাঃ) কা‘বায় তাওয়াফ করছিলেন। এমতাবস্থায় আসওয়াদ বিন আবদুল মুত্ত্বালিব, অলীদ বিন মুগীরাহ, উমাইয়া বিন খালাফ, ‘আছ বিন ওয়ায়েল প্রমুখ মক্কার বিশিষ্ট নেতৃবর্গ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এসে আপোষ প্রস্তাব দিয়ে বলেন,
يَا مُحَمَّدُ، هَلُمَّ فَلْنَعْبُدْ مَا تَعْبُدُ، وَتَعْبُدُ مَا نَعْبُدُ، فَنَشْتَرِكُ نَحْنُ وَأَنْتَ فِي الْأَمْرِ، فَإِنْ كَانَ الَّذِي تَعْبُدُ خَيْرًا مِمَّا نَعْبُدُ، كُنَّا قَدْ أَخَذْنَا بِحَظِّنَا مِنْهُ، وَإِنْ كَانَ مَا نَعْبُدُ خَيْرًا مِمَّا تَعْبُدُ، كُنْتَ قَدْ أَخَذْتَ بِحَظِّكَ مِنْهُ
‘হে মুহাম্মাদ! এসো আমরা ইবাদত করি তুমি যার ইবাদত কর এবং তুমি পূজা কর আমরা যার পূজা করি। আমরা এবং তুমি আমাদের কাজে পরস্পরে শরীক হই। অতঃপর তুমি যার ইবাদত কর, তিনি যদি উত্তম হন আমরা যাদের পূজা করি তাদের চাইতে, তাহ’লে আমরা তার ইবাদতে পুরাপুরি অংশ নিব। আর আমরা যাদের পূজা করি, তারা যদি উত্তম হয় তুমি যার ইবাদত কর তাঁর চাইতে, তাহ’লে তুমি তাদের পূজায় পুরাপুরি অংশ নিবে’ (ইবনু হিশাম১/৩৬২)।[1] ইবনু জারীর-এর বর্ণনায় এসেছে,ونُشركُكَ في أَمرِنا كُلِّهِ، فإن كان الذي جِئتَ به خيرًا مما بأيدينا، كنا قد شَرِكناكَ فيه ‘আমরা তোমাকে আমাদের সকল কাজে শরীক করব। অতঃপর তুমি যে দ্বীন নিয়ে এসেছ, তা যদি আমাদের দ্বীনের চাইতে উত্তম হয়, তাহ’লে আমরা সবাই তোমার সাথে তাতে শরীক হব। আর যদি আমাদেরটা উত্তম হয়, তাহ’লে তুমি আমাদের কাজে শরীক হবে এবং তাতে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করবে’। তখন অত্র সূরা নাযিল হয়।
(খ) যদি তুমি আমাদের কোন একটি মূর্তিকে চুমু দাও, তাহ’লে আমরা তোমাকে সত্য বলে মেনে নিব। (গ) তারা একথাও বলেছিল যে, তুমি চাইলে আমরা তোমাকে এত মাল দেব যে, তুমি সেরা ধনী হবে। তুমি যাকে চাও, তার সাথে তোমাকে বিয়ে দেব। আর আমরা সবাই তোমার অনুসারী হব। কেবল তুমি আমাদের দেব-দেবীদের গালি দেওয়া বন্ধ কর। যদি তাতেও তুমি রাযী না হও, তাহ’লে একটি প্রস্তাবে তুমি রাযী হও, যাতে আমাদের ও তোমার মঙ্গল রয়েছে। আর তা হ’ল, (ঘ) তুমি আমাদের উপাস্য লাত-উযযার এক বছর পূজা কর এবং আমরা তোমার উপাস্যের এক বছর পূজা করব। এইভাবে এক বছর এক বছর করে সর্বদা চলবে’। তখন সূরা কাফেরূন নাযিল হয় (কুরতুবী) এবং তাদের সাথে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘোষণা করা হয়।[2]
সূরা কাফেরূন নাযিলের কারণ হিসাবে বর্ণিত উপরোক্ত বিষয়গুলির সূত্র যথার্থভাবে ছহীহ নয়। তবে এগুলির প্রসিদ্ধি অতি ব্যাপক। যা ইবনু জারীর, কুরতুবী, ইবনু কাছীরসহ প্রায় সকল প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থে এসেছে। অতএব সূত্র দুর্বল হ’লেই ঘটনা সঠিক নয়, তা বলা যাবে না। কেননা সূরা কাফেরূনের বক্তব্যেই ঘটনার যথার্থতা প্রতীয়মান হয়।
[2]. আর-রাহীক্ব পৃঃ ৮৪-৮৫; তাফসীর ইবনু জারীর, কুরতুবী, ইবনু কাছীর প্রভৃতি; ইবনু হিশাম ১/৩৬২। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৩৫৪); মা শা-‘আ ৫১ পৃঃ।