লগইন করুন
১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,
أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ ﴿191﴾ وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ (الأعراف: 191-192)
‘‘তারা কি আল্লাহর সাথে এমন সব বস্ত্তকে শরিক করে যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট হয়। আর তারা তাদেরকে [মুশরিকদেরকে] কোন রকম সাহায্য করতে পারে না।’’
(আরাফ: ১৯১-১৯২)
২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন,
وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِنْ قِطْمِيرٍ ﴿فاطر: 13﴾
‘‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে [উপকার সাধন অথবা মুসীবত দূর করার জন্য] ডাকো তারা কোন কিছুরই মালিক নয়।’’ (ফাতেরঃ ১৩)
৩। সহীহ বুখারীতে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আঘাত প্রাপ্ত হলেন এবং তাঁর সামনের দাঁত ভেঙ্গে গেলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুঃখ করে বললেন,
كيف يفلح قوم شجو نبيهم فنـزلت ليس لك من الأمر شيئ
‘‘সে জাতি কেমন করে কল্যাণ লাভ করবে, যারা তাদের নবীকে আঘাত দেয়’’। তখন ليس لك من الأمر شئএ আয়াত নাযিল হলো। যার অর্থ হচ্ছে, [আল্লাহর] এ [ফায়সালার] ব্যাপারে আপনার কোন হাত নেই।’
৪। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্নিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফজরের নামাজের শেষ রাকাতে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে سمع الله لمن حمده ربنا ولك الحمد বলার পর এ কথা বলতে শুনেছেন اللهم العن فلانا وفلانا ‘‘আল্লাহ তুমি অমুক, অমুক, [নাম উল্লেখ করে] ব্যক্তির উপর তোমার লানত নাযিল করো।’’ তখন এ আয়াত নাযিল হয় ليس لك من الأمر شئ অর্থাৎ ‘‘এ বিষয়ে তোমার কোন এখতিয়ার নেই।’’ আরেক বর্ণনায় আছে, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফওয়ান ইবনে উমাইয়্যা এবং সোহাইল বিন আমর আল-হারিছ বিন হিশামের উপর বদদোয়া করেন তখন এ আয়াত ليس لك من الأمر شئ নাযিল হয়েছে।
৫। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যখন وأنذر عشيرتك الأقربين নাযিল হলো তখন আমাদেরকে কিছু বলার জন্য দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন,
يا معشر قريش أو كلمة نحوها اشتروا أنفسكم لا أغني غنكم من الله شيئا يا عباس ابن عبد المطلب لا أغني عنك من الله شيئا يا صفية عمة رسول الله صلى الله عليه وسلم لا أغني عنك من الله شيئا ويا فاطمة بنت محمد سليني من مالي ما شئت لا أغني عنك من الله شيئا
‘‘হে কুরাইশ বংশের লোকেরা [অথবা এ ধরণেরই কোন কথা বলেছেন] তোমরা তোমাদের জীবনকে খরিদ করে নাও। [শিরকের পথ পরিত্যাগ করতঃ তাওহীদের পথ অবলম্বন করার মাধ্যমে জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিজেদেরকে বাঁচাও] আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার ব্যাপারে আমি তোমাদের কোন উপকারে আসব না। হে আববাস বিন আবদুল মোত্তালিব আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার ব্যাপারে আমি আপনার জন্য কোন উপকার করতে সক্ষম নই। হে রাসূলুল্লাহর ফুফু সাফিয়্যাহ, আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার ব্যাপারে আমি আপনার কোন উপকার করতে সক্ষম নই। হে মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমা, আমার সম্পদ থেকে যা খুশী চাও। কিন্তু আল্লাহার কাছে জবাবদিহি করার ব্যাপারে তোমার কোন উপকার করার ক্ষমতা আমার নেই।’’
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ-
১। এ অধ্যায়ে উল্লেখিত দু’টি আয়াতের তাফসীর।
২। উহুদ যুদ্ধের কাহিনী।
৩। নামাজে সাইয়্যেদুল মুরসালীন তথা বিশ্বনবী কর্তৃক ‘‘দোয়াতে কনুত’’ পাঠ করা এবং নেতৃস্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক আমীন বলা।
৪। যাদের উপর বদ দোয়া করা হয়েছে তারা কাফের।
৫। অধিকাংশ কাফেররা অতীতে যা করেছিলো তারাও তাই করেছে।
যেমন, নবীদেরকে আঘাত করা, তাঁদেরকে হত্যা করতে চাওয়া এবং একই বংশের লোক হওয়া সত্ত্বেও মৃত ব্যক্তির নাক, কান কাটা।
৬। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর
ليس لك من الأمرشيئ নাযিল হওয়া।
৭। أو يتوب عليهم أن يعذبهم এরপর তারা তাওবা করলো।
আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করলেন, আর তারাও আল্লাহর উপর ঈমান আনলো।
৮। বালা-মুসীবতের সময় দোয়া-কুনুত পড়া।
৯। যাদের উপর বদ দোয়া করা হয়, নামাজের মধ্যে তাদের নাম এবং তাদের পিতার নাম উল্লেখ করে বদ দোয়া করা।
১০। ‘‘কুনুতে নাযেলায়’’ নির্দিষ্ট করে অভিসম্পাত করা।
১১। وأنذر عشيرتك الأقربين নাযিল হওয়ার পর পর নবী জীবনের ঘটনা।
১২। ইসলামের দাওয়াত প্রচারের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অক্লান্ত
১৩। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দূরবর্তী এবং নিকটাত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে বলেছেন لا أغني عنك من الله شيئا [আল্লাহর কাছে জবাব দিহি করার ব্যাপারে আমি তোমার সাহায্য করতে পারব না’’] এমনকি তিনি ফাতেমা রা.কেও লক্ষ্য করে বলেছিলেন,
يا فاطمة لا أغني عنك من الله شيئا
‘‘হে ফাতেমা, আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার ব্যাপারে তোমার কোন উপকার আমি করতে সক্ষম হবো না’’।] তিনি সমস্ত নবীগণের নেতা হওয়া সত্ত্বেও নারীকুল শিরোমণির জন্য কোন উপকার করতে না পারার ঘোষণা দিয়েছেন। আর মানুষ যখন এটা বিশ্বাস করে যে, তিনি সত্য ছাড়া কিছুই বলেন না, তখন সে যদি বর্তমান যুগের কতিপয় খাস ব্যক্তিদের অন্তরে সুপারিশের মাধ্যমে অন্যকে বাঁচানোর ব্যাপারে যে ধ্যান-ধারণার সৃষ্টি হয়েছে তার দিকে দৃষ্টিপাত করে, তাহলে তার কাছে তাওহীদের মর্মকর্থা এবং দ্বীন সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতার কথা সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়বে।