লগইন করুন
পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে কুরবানী যবেহর সময় ঈদের খুতবা শেষ হলে শুরু হয়। কুরবানী দাতার জন্য সুন্নত যে, সে তা হতে খাবে, আত্মীয়-স্বজনকে (তারা কুরবানী দিক, চাই না দিক) হাদিয়া দেবে এবং গরীবদেরকে সদকাহ করবে। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে বলেন,
(فَكُلُوْا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيْرَ)
অর্থাৎ, অতঃপর তোমরা তা হতে ভক্ষণ কর এবং নিঃসব অভাবগ্রস্তদেরকে ভক্ষণ করাও। (সূরা হাজ্জ ২৮ আয়াত)
(وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَافَّ فَإِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ كَذَلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُون)
অর্থাৎ, আর (কুরবানীর) উঁটকে করেছি আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের অন্যতম; তোমাদের জন্য তাতে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় ওগুলির উপর (নহর করার সময়) তোমরা আল্লাহর নাম নাও। অতঃপর যখন ওরা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তোমরা তা হতে আহার কর এবং আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকে ও যাচ্ঞাকারী অভাবগ্রস্তকে। এইভাবে আমি ওদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা হাজ্জ ৩৬ আয়াত)
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (কুরবানীর মাংস) তোমরা খাও, জমা কর, এবং দান কর।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘তা খাও, খাওয়াও এবং জমা রাখ।’’[1]
উপর্যুক্ত আয়াত বা হাদীসে খাওয়া, হাদিয়া দেওয়া ও দান করার কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ বিবৃত হয়নি। তবে অধিকাংশ উলামাগণ মনে করেন যে, সমস্ত মাংসকে তিন ভাগ করে এক ভাগ খাওয়া, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া দেওয়া এবং এক ভাগ গরীবদেরকে দান করা উত্তম।
কেউ চাইলে সে তার কুরবানীর সমস্ত গোশ্ত্কে বিতরণ করে দিতে পারে। আর তা করলে উক্ত আয়াতের বিরোধিতা হবে না। কারণ, ঐ আয়াতে নিজে খাওয়ার আদেশ হল মুস্তাহাব বা সুন্নত। সে যুগের মুশরিকরা তাদের কুরবানীর মাংস খেত না বলে মহান আল্লাহ উক্ত আদেশ দিয়ে মুসলিমদেরকে তা খাবার অনুমতি দিয়েছেন। অবশ্য কেউ কেউ খাওয়া ওয়াজেবও বলেছেন।[2] সুতরাং কিছু খাওয়াই হল উত্তম।
কুরবানীর মাংস হতে কাফেরকে তার অভাব, আত্মীয়তা, প্রতিবেশ অথবা তাকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করার জন্য দেওয়া বৈধ। আর তা ইসলামের এক মহানুভবতা।[3]
তিন দিনের অধিক কুরবানীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ হওয়া সংক্রান্ত হাদীসটি মনসুখ (রহিত) হলেও যেখানে দুর্ভিক্ষ থাকে সেখানে তিন দিনের অধিক মাংস জমা রাখা বৈধ নয়।[4]
কুরবানীদাতা পশু যবেহ করার পর চুল, নখ ইত্যাদি কাটতে পারে। তবে এতে কুরবানী দেওয়ার সমান সওয়াব লাভ হওয়ার কথা ঠিক নয়। যেমন কুরবানী দিতে না পারলে মুরগী কুরবানী দেওয়া বিদআত।
আর দাড়ি কোন সময়কার জন্য চাঁছা বৈধ নয়। কিন্তু বহু মানুষ আছে যারা কুরবানী করার সাথে সাথে নিজের দাড়িও কুরবানী (?) করে থাকে! কেউ কেউ তো নামাযে বের হওয়ার পূর্বেই দাড়ি চেঁছে সাজ-সজ্জা করে। অথচ সে এ কাজ ক’রে তিনটি পাপে লিপ্ত হয়ঃ (১) দাড়ি চাঁচার পাপ (২) পাপ কাজের মাধ্যমে ঈদের জন্য সৌন্দর্য অর্জন করার পাপ এবং (৩) কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চুল (দাড়ি) কাটার পাপ।[5]
অনুরূপভাবে অধিকাংশ দাড়ি-বিহীন হাজীদেরকে দেখা যায় যে, তারা ইহরামের কারণে দাড়ি কিছু বাড়িয়ে থাকে। অতঃপর যখন হালাল হবার সময় হয়, তখন মাথার কেশ মুন্ডনের পরিবর্তে তারা তাদের দাড়ি মুন্ডন করে থাকে! অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেশ মুন্ডন করতে উৎসাহিত করেছেন এবং দাড়ি বর্ধন করতে আদেশ করেছেন। অতএব ‘ইন্নালিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজেঊন।’
পরন্তু এই অপকর্মে কয়েকটি বিরুদ্ধাচরণ রয়েছে। (১) দাড়ি বর্ধনের উপর রসূলের আদেশ উল্লংঘন এবং তাতে তাঁর বিরোধিতা। (২) কাফেরদের প্রতিরূপ ধারণ। অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য ধারণ করে সে তাদেরই শ্রেণীভুক্ত।’’ (৩) নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন। অথচ তিনি নারীদের আকৃতি ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। (৪) (আল্লাহর বিনা অনুমতিতে) আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন এবং শয়তানের প্রতিজ্ঞার আনুগত্য। যেহেতু সে আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে;
যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
(لَعَنَهُ اللهُ وَقَالَ لأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيباً مَفْرُوضاً- وَلأضِلَّنَّهُمْ وَلأمَنِّيَنَّهُمْ وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الأَنْعَامِ وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ وَمَنْ يَتَّخِذْ الشَّيْطَانَ وَلِيّاً مِنْ دُونِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَاناً مُبِيناً)
অর্থাৎ, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন। সে (শয়তান) বলে, ‘আমি তোমার বান্দাদের একটা নির্দিষ্ট অংশকে (নিজের দলে) গ্রহণ করবই। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবই, তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই, আমি তাদেরকে নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই, এবং তাদেরকে অবশ্যই নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই।’ আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা নিসা ১১৮-১১৯)
বলাই বাহুল্য যে, দাড়ি রাখা সকল নবীর সুন্নত (তরীকা)। আর তা মৌলবী-অমৌলবী ও হাজী-অহাজী প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজেব। কেউ দাড়ি না রাখলে, তার কাবীরা গোনাহ হবে।
[2] (তফসীর ইবনে কাষীর ৩/২৯২, ৩০০, মুগনী ১৩/৩৮০, মুমতে ৭/৫২৫)
[3] (মুগনী ১৩/ ৩৮১, ফাতহুল বারী ১০/৪৪২)
[4] (ফাতহুল বারী ১০/২৮, ইনসাফ ৪/১০৭)
[5] (সালাতুল ঈদাইন, আলবানী ৪০পৃঃ)