হাদীসের নামে জালিয়াতি সালাত ও আনুষঙ্গিক প্রসঙ্গ - (গ) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বিষয়ক ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৫. মুত্তাকী আলিমের পিছনে সালাত নবীর পিছনে সালাত

জামাআতে সালাত আদায়ের কারণে সাওয়াব বৃদ্ধির কথা সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি। বিভিন্ন হাদীসে কুরআনের তিলাওয়াত ও জ্ঞানে পারদর্শী, হাদীসের জ্ঞানে পারদর্শী, হিজরত ও অন্যান্য নেক আমলে অগ্রবর্তী ব্যক্তিগণকে ইমামতি প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ইমামের ‘তাকওয়া’ বা ‘ইলমের’ কারণে মুক্তাদিগণের ‘সাওয়াব’ বা ‘বরকত’ বেশি হবে, এরূপ অর্থে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি। এ অর্থে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সবই অত্যন্ত যয়ীফ অথবা বানোয়াট। এইরূপ একটি ভিত্তিহীন কথা:

مَنْ صَلَّى خَلْفَ عَالِمٍ تَقِيٍّ، فَكَأَنَّمَا صَلَّى خَلْفَ نَبِيٍّ

‘‘যে ব্যক্তি কোনো মুত্তাকি আলিমের পিছনে সালাত আদায় করল, সে যেন একজন নবীর পিছনে সালাত আদায় করল।’’

ফিক্হের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘হেদায়া’-র প্রণেতা আল্লামা আলী ইবনু আবী বাক্র মারগীনানী (৫৯২ হি) জনশ্রুতির উপর নির্ভর করে এ কথাটিকে হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, এ কথাটি কোনো হাদীস নয়। কোনো সহীহ বা যয়ীফ সনদে তা কোনো গ্রন্থে সংকলিত হয় নি। এজন্য আল্লমা যাইলায়ী, ইরাকী, ইবনু হাজার, সুয়ূতী, সাখাবী, তাহির পাটনী, মোল্লা আলী কারী, আজলূনী প্রমুখ মুহাদ্দিস এ কথাটিকে জাল হাদীস হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছেন।[1]

[1] মারগীনানী, হেদায়া ১/৫৭; যাইলায়ী, নাসবুর রাইয়াহ ২/২৬; ইবনু হাজার, আদ-দিরাইয়া ১/১৬৮; সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৩১১; মোল্লা আলী কারী, আল-মাসনূ, পৃ. ১৫২; আল-আসরার, পৃ. ১৪৭, ২৩৫; আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৩৭, ১২২, ৩৩৭; তাহির পাটনী, তাযকিরাতুল মাউদূ‘আত, পৃ. ৪০; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/৫৫।