লগইন করুন
উপরের হাদীসটি জাল হলেও ইসলামে জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি হিসেবে চিন্তা-গবেষণাকে উৎসাহ দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত। কুরআন ও হাদীসে ‘তাফাক্কুর’ ও ‘তাদাববুর’-কে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কুরআনের আয়াতসমূহ নিয়ে, পূর্ববর্তী জাতিগুলোর পরিণতি নিয়ে, মহাবিশ্বের সকল সৃষ্টি, প্রাণী, গ্রহ, নক্ষত্র, মানবীয় প্রকৃতি ইত্যাদি নিয়ে তাফাক্কুর বা চিন্তা-ভাবনা করতে কুরআনে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।[1] তবে প্রচলিত অর্থে ধ্যান করতে কুরআন হাদীসে কোথাও নির্দেশ দেওয়া হয় নি।
এছাড়া পরবর্তী যুগের সূফীগণের মধ্যে প্রচলিত ‘মুরাকাবা’ শব্দটিকে এক্ষেত্রে বিকৃত অর্থে ব্যবহার করা হয়। মুরাকাবা অর্থ ধ্যান নয়। মুরাকাবা অর্থ পর্যবেক্ষণ বা নিয়ন্ত্রণ (supervision/control)। ইমাম গাযালীর এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ও তাসাউফ বিষয়ক অন্যান্য গ্রন্থ পাঠ করলে পাঠক দেখবেন যে, তাসাউফের পরিভাষায় ‘মুরাকাবা’ অর্থ আত্ম-পর্যবেক্ষণ বা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ সর্বদা নিজের কর্মকান্ড নিজেই পর্যবেক্ষণ করা এবং নিজের আমলের উন্মতি-অবনতির বিষয়ে আত্ম-সমালোচনা ও আত্ম-পর্যবেক্ষণ।
‘ধ্যান’ (meditation) বলতে বর্তমানে এক ধরনের মিথ্যা কল্পনার মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখা বুঝানো হয়। এরূপ মিথ্যা কল্পনার মধ্যে ডুবে থেকে কিছু সময়ের জন্য নিজের মনকে বাস্তব দুশ্চিন্তা, হতাশা ইত্যাদি থেকে বিমুক্ত রাখা হয়। আত্ম-উন্নয়ন, মনোসংযোগ বৃদ্ধি, হতাশা-মুক্তি ইত্যাদির জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়:
(ক) এরূপ মিথ্যা কল্পনায় নিমগ্ন থাকাকে ইসলামী তাফাক্কুর অথবা ‘মুরাকাবা’ বলে আখ্যায়িত করা ইসলামের নামে মিথ্যাচার।
(খ) আত্মউন্নয়ন, মনোসংযোগ এবং দুশ্চিন্তা-হতাশা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর যিকর ও দুআ অনেক বেশি কার্যকর। জোর করে মনকে মিথ্যা কল্পনায় নিমগ্ন না রেখে যথাসম্ভব মনোযোগ সহকারে সামান্য সময় আল্লাহর যিকর ও দুআ করলে অনেক বেশি জাগতিক-মানসিক ফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি সাওয়াব ও আত্মিক উন্নতি তো অপরিসীম।