লগইন করুন
এখানে অনুবাদের বিকৃতি ও মিথ্যার একটি নমুনা উল্লেখ করছি। প্রচলিত একটি পুস্তকে লিখিত হয়েছে: ‘‘হাদীস শরীফে বর্ণিত আছেঃ- একদিন বিবি ফাতেমা (রা) হযরত মোহাম্মদ ﷺ-এর কাছে আসিয়া আরজ করিলেন হে পিতঃ! আমাকে সমস্ত দিনই আটা পিষায় ও গৃহ কার্যে নিযুক্ত থাকিতে হয় তাই আমার শরীরটা বেদনা ও দরদযুক্ত হইয়া যায়। অতএব আমাকে একটি বাঁদী ক্রয় করিয়া দিন যাতে সে আমার শরীরটা টিপিয়ে দিতে ও গৃহ কার্যে আমাকে সাহায্য করিতে পারে। তদুত্তরে হুজুর (ﷺ) বলিলেন, হে মাতঃ! স্ত্রী লোকের পক্ষে আপন স্বামীর ও পরিজন পোষনের জন্য আটা পিষা গৃহ কার্যে আঞ্জাম করার ন্যায় পুণ্য কাজ আর কিছুই নাই। কিন্তু বাদী বা চাকরানীর সাহায্য লইলে ততদূর ছোওয়াবের ভাগী হইতে পারিবে না। অতএব আমার উপদেশ মানিয়া সর্বদা নিম্নলিখিত দোয়া পাঠ করিতে থাক, নিশ্চয়ই তোমার শরীরের বেদনা দুর হইয়া যাইবে এবং শরীর সর্বদা সুস্থ ও সবল থাকিবে। আর অতিরিক্ত ছওয়াবও পাইবে। তখন হইতে বিবি ফাতেমা তাহাই করিতেন। দোওয়া:
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ للهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ‘‘.[1]
একটি সহীহ হাদীসের মনগড়া অনুবাদ করে এখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নামে অনেকে মিথ্যা ও মনগড়া কথা বলা হয়েছে। উপরন্তু ফাতিমা (রা) এর জন্য অবমাননাকর কথাবার্তা বলা হয়েছে। মূল হাদীসটি বুখারী, মুসলিম ও অন্য সকল মুহাদ্দিস কাছাকাছি শব্দে সংকলন করেছেন: হাদীসটি নিম্নরূপ:
আলী (রা) বলেন, যাঁতা চালানোর কারণে তাঁর হাতে কী কষ্ট হয় তা জানাতে ফাতিমা (রা) নবীজী ﷺ-এর কাছে গমন করেন। ফাতিমা শুনেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে কিছু যুদ্ধবন্দী দাস-দাসী এসেছে। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাড়িতে যেয়ে তাঁকে পান নি। তখন তিনি আয়েশা (রা)-কে বিষয়টি জানান। যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘরে আসেন তখন আয়েশা বিষয়টি তাঁকে জানান। আলী বলেন, আমরা রাতে বিছানায় শুয়ে পড়ার পরে তিনি আমাদের কাছে আগমন করলেন। তখন আমরা উঠতে গেলাম। তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের জায়গাতেই থাক। তিনি এসে আমার ও ফাতিমার মধ্যখানে বসলেন। এমনকি আমি আমার পেটের উপর তাঁর পদযুগলের শীতলতা অনুভব করলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমার যা চাচ্ছ তার চেয়েও উত্তম বিষয় কি তোমাদের শিখিয়ে দেব না? তোমরা যখন তোমাদের বিছানায় শুয়ে পড়বে তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে। এ আমলটি তোমাদের জন্য দাসীর চেয়েও উত্তম। আলী বলেন, এরপর আমি কখনোই এ আমলটি ত্যাগ করি নি।
এ হলো মূল ঘটনা, যা বুখারী ও মুসলিম সহ সকল মুহাদ্দিস বিভিন্ন সহীহ সনদে সংকলিত করেছেন। অথচ উপরের অনুবাদে সব কিছু বিকৃত করা হয়েছে এবং অনেক মিথ্যা কথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে বলা হয়েছে।[2]
[2] সহীহ বুখারী ৩/১১৩৩, ৩/১৩৫৮, ৫/২০৫১, ৫/২৩২৯, নং ২৯৪৫, ৩৫০২, ৫০৪৬, ৫৯৫৯, সহীহ মুসলিম ৪/২০৯১, নং ২৭২৭, ফাতহুল বারী ১১/১২০।