লগইন করুন
রাসূলুল্লাহ ﷺ অলৌকিকভাবে মাতৃগর্ভে স্থান নেন এবং মাতৃগর্ভ থেকে অলৌকিকভাবে বের হয়ে আসেন মর্মে নানা রকমের গল্প প্রচলিত। এগুলি সবই সনদবিহীন, দলীলবিহীন ও মনগড়া মিথ্যা। বিশ্বের কোনো গ্রন্থে এ মর্মে সনদ-সহ কোনো সহীহ বা যয়ীফ হাদীস পাওয়া যায় না।
এখানে একটি কথা বোধ হয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না। আমাদের মধ্যে অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে বা অজ্ঞতাবশত মনে করেন, অলৌকিকত্ব সম্ভবত মর্যাদার মাপকাঠি। এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। এ ভুল ধারণাকে পূঁজি করে খৃস্টান মিশনারিগণ আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে অপপ্রচার চালান। তাদের একটি লিফলেটে বলা হয়েছে: কে বেশি বড়: হযরত মুহাম্মাদ ﷺ না ঈসা মসীহ? ঈসা মসীহ বিনা পিতায় জন্মলাভ করেছেন আর মুহাম্মাদ ﷺ-এর পিতা ছিল। ঈসা মসীহ মৃতকে জীবিত করতেন কিন্তু মুহাম্মাদ ﷺ করতেন না। ঈসা মসীহ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেন নি কিন্তু মুহাম্মাদ ﷺ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছেন।... এভাবে মুসলিম আকীদার কিছু বিষয়কে বিকৃত করে এবং প্রচলিত ভুল ধারণাকে পূঁজি করে তারা মুসলিম জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
অলৌকিকত্ব কখনোই মর্যাদার মাপকাঠি নয়। নবীদেরকে আল্লাহ অলৌকিকত্ব বা মুজিযা প্রদান করেন হেদায়েতের প্রয়োজন অনুসারে, মর্যাদা অনুসারে নয়। মর্যাদার মানদন্ড আল্লাহর ঘোষণা। এছাড়া দুনিয়ার ফলাফল আমরা পর্যালোচনা করতে পারি। মিশনারি প্রতারণার একটি দিক দেখুন:
ঈসা (আঃ)-এর জন্ম অলৌকিক। এছাড়া মৃতকে জীবিত করা, অন্ধকে বা কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করা ইত্যাদি মুজিযা তাকে প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মর্যাদা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি নয়। কারণ প্রথমত আল্লাহর ঘোষণা। দ্বিতীয়ত জাগতিক ফলাফলও তা প্রমাণ করে। প্রচলিত বাইবেল থেকে বিচার করলে বলতে হবে যে, হেদায়েতের ক্ষেত্রে ঈসা (আঃ)-এর দাওয়াতের ফল সবচেয়ে কম। আল্লাহর হুকুমে তিনি রুগীকে সুস্থ করেছেন ও মৃতকে জীবিত করেছেন। বরং বাইবেল পড়লে মনে হয় জিনভুত ছাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিশেষ কাজই তাঁর ছিল না। কিন্তু তিনি অনেক অবিশ্বাসীকে বিশ্বাসী করতে বা অনেক মৃত হৃদয়কে জীবিত করেতে পারেন নি। আল্লাহর হুকুমে তিনি অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দিয়েছেন, কিন্তু বিশ্বাসে অন্ধকে চক্ষু দান করতে পারেন নি। মাত্র ১২ জন বিশেষ শিষ্যের বিশ্বাসও এত দুর্বল ছিল যে, একজন তাঁকে কয়েকটি টাকার বিনিময়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করল এবং তাঁর প্রধান শিষ্য তাঁর গ্রেফতারের পর পুলিশের ভয়ে তাঁকে অস্বীকার করেন ও গালি দেন! [1] কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম বইটি পড়ে বিস্তারিত জানুন।
পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে অনেক অলৌকিকত্ব প্রদান করেছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় অলৌকিকত্ব হলো লক্ষাধিক মানুষকে বিভ্রান্তির অন্ধত্ব থেকে বিশ্বাসের আলোক প্রদান করা ও লক্ষাধিক মৃত হৃদয়কে জীবন দান করা। কাজেই অলৌকিকত্ব সম্পর্কে মিথ্যা, দুর্বল বা অনির্ভরযোগ্য কথাবার্তাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা, সেগুলোকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর মর্যাদার মাপকাঠি বা নবুয়তের প্রমাণ মনে করা ইসলামের মূল চেতনার বিপরীত। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর মর্যাদা, নুবুওয়াত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে কুরআনই যথেষ্ট। এর পাশাপাশি সহীহ হাদীসগুলির উপর আমরা নির্ভর করব। আমাদের মানবীয় বুদ্ধি, আবেগ বা যুক্তি দিয়ে কিছু বাড়ানো বা কমানোর কোনো প্রয়োজন আল্লাহর দীনের নেই।