লগইন করুন
সাধারণভাবে জালিয়াতের স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। এজন্য মুহাদ্দিসগণ মুলত এর উপর নির্ভর করেন না। তাঁরা সনদ নিরীক্ষার মাধ্যমে ‘স্বীকৃতির পর্যায়ের তথ্যাদি’ সংগ্রহ করে সেগুলোর ভিত্তিতে জালিয়াতি নির্ণয় করেন। এজন্য নিরীক্ষাই জালিয়াতি নির্ণয়ের প্রধান পন্থা। প্রধানত দুটি কারণে মুহাদ্দিসগণ হাদীসকে জাল বা মিথ্যা বলে গণ্য করেন: (ক) হাদীসের সনদে মিথ্যাবাদীর অস্তিত্ব ও (খ) হাদীসের কোনো সনদ না থাকা।
মূলত, প্রথম কারণটিই জালিয়াতি নির্ধারণের মূল উপায়। দ্বিতীয় পর্যায়টি ইসলামের প্রথম অর্ধ সহস্র বৎসরে দেখা যায় নি। হিজরী ৪র্থ/৫ম শতক পর্যন্ত কোনো মানুষই সনদ ছাড়া কোনো হাদীস বলতেন না বা বললে কেউ তাতে কর্ণপাত করতেন না। এজন্য জঘন্য জালিয়াতকেও তার মিথ্যার জন্য একটি সনদ তৈরি করতে হতো। পরবর্তী যুগগুলোতে ক্রমান্বয়ে মুসলিম সমাজে কিছু কিছু কথা হাদীস নামে প্রচারিত হয় যেগুলো লোকমুখে প্রচারিত হলেও কোনো গ্রন্থে সনদসহ পাওয়া যায় না। স্বভাবতই মুসলিম উম্মাহর আলিমগণ একবাক্যে সেগুলোকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও জাল বলে গণ্য করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে প্রচারিত সকল প্রকারের মিথ্যা বা ভিত্তিহীন কথাকে প্রতিহত করা এবং তাঁর নামে প্রচলিত কথার উৎস ও সূত্র নির্ণয় করার বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর আলিমগণ ছিলেন আপোষহীন। এজন্য আমরা দেখতে পাই যে, ৭ম/৮ম হিজরী শতাব্দী থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত অগণিত জানবাজ মুহাদ্দিস তাঁদের জীবনপাত করেছেন এ সকল প্রচলিত ‘কথা’র সূত্র বা উৎস সন্ধান করতে। দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রায় অর্ধ সহস্র বৎসর ধরে লেখা অগণিত হাদীস, ফিকহ, তাফসীর, ইতিহাস, ভাষা, সাহিত্য, জীবনী ইত্যাদি সকল প্রকার পুস্তক-পুস্তিকার মধ্যে তাঁরা এগুলো সন্ধান করেছেন। এ সন্ধানের পরেও যে সকল হাদীস নামে প্রচলিত কথার কোনো ‘সনদ’ তাঁরা পান নি সেগুলোকে তাঁরা ‘ভিত্তিহীন’, ‘সূত্র বিহীন’, বানোয়াট ও মিথ্যা বলে গণ্য করেছেন।