লগইন করুন
এভাবে সাহাবীগণ হাদীস বর্ণনা ও গ্রহণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতেন। পাশাপাশি তাঁরা অন্য সবাইকে এভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে উৎসাহ ও নির্দেশ প্রদান করতেন। এক্ষেত্রে কোনোরূপ অবহেলা বা ঢিলেমি তাঁরা সহ্য করতেন না। তাঁরা বিনা যাচাইয়ে হাদীস গ্রহণ করতে নিষেধ করতেন। অনেক সময় কারো হাদীস বর্ণনায় অনিচ্ছাকৃত ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বা শ্রোতাদের মধ্যে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তাঁকে হাদীস বলতে নিষেধ করতেন। এখানে কয়েকটি নমুনা উল্লেখ করছি।
১. আবু উসমান আন-নাহদী বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেন,
بِحَسْبِ الْمَرْءِ مِنَ الْكَذِبِ أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
‘‘একজন মানুষের মিথ্যা বলার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে সবই বর্ণনা করবে।’’[1]
২. আবুল আহওয়াস বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা) বলেন:
بِحَسْبِ الْمَرْءِ مِنَ الْكَذِبِ أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
‘‘একজন মানুষের মিথ্যা বলার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে সবই বর্ণনা করবে।’’[2]
৩. সাহাবী আব্দুর রাহমান ইবনু আউফ (রা) এর পুত্র মদীনার প্রখ্যাত আলিম, ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইবরাহীম ইবনু আব্দুর রাহমান (৯৫ হি) বলেন:
بَعَثَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ، وَإِلَى أَبِي الدَّرْدَاءِ، وَإِلَى أَبِيٍ مَسْعُوْدٍ الأَنْصَارِيِّ فَقَالَ: مَا هَذَا الْحَدِيْثُ الَّذِيْ تُكْثِرُوْنَ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ؟ فَحَبَسَهُمْ بِالْمَدِيْنَةِ حَتَّى اسْتُشْهِدَ.
‘‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা), আবু দারদা (রা) ও আবু মাসঊদ (রা) কে ডেকে পাঠান। তিনি তাঁদেরকে বলেন: আপনারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এত বেশি হাদীস বলছেন কেন? এরপর তিনি তাঁদেরকে মদীনাতেই অবস্থানের নির্দেশ দেন। তাঁর শাহাদত পর্যন্ত তাঁরা মদীনাতেই ছিলেন।’’[3]
এ তিনজন সাহাবী হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) তাঁদের নির্ভুল হাদীস বলার ক্ষমতা বা যোগ্যতার বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করেন নি। কিন্তু বেশি হাদীস বললে কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল হতে পারে। বিশেষত, কূফা বা সিরিয়ার মত প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে ইসলামী বিজয়ের সে প্রথম দিনগুলোতে অধিকাংশ নও মুসলিম অনারব বসবাস করতেন, তাদের মধ্যে বেশি হাদীস বর্ণনা করলে অনেক শ্রোতা তা সঠিকভাবে হৃদয়ঙ্গম ও মুখস্থ করতে পারবেন না বলে আশঙ্কা থাকে। এজন্য হাদীসের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য উমার ইবনুল খাত্তাব তাঁদেরকে মদীনায় অবস্থানের নির্দেশ প্রদান করেন।
অন্য ঘটনায় আমরা দেখতে পাই যে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) নিজে কুরআন ও হাদীসের কিছু বিষয় হজ্জ মাওসূমে মক্কায় জনসমক্ষে আলোচনা করতে চান। কিন্তু সাহাবী আব্দুর রাহমান ইবনু আউফ (রা) তাঁকে বলেন যে, মক্কায় উপস্থিত অগণিত অনারব ও নওমুসলিম হজ্জ-পালনকারী হয়ত আপনার কথা ঠিকমত বুঝতে পারবেন না। এতে ভুল বুঝা ও অপব্যাখ্যার সুযোগ এসে যাবে। কাজেই আপনি মদীনায় প্রত্যাবর্তন করার পরে বিষয়গুলো আলোচনা করবেন। উমার (রা) এ পরামর্শ অনুসারে মক্কায় বিষয়গুলো আলোচনার সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করেন।[4]
[2] মুসলিম, আস-সহীহ ১/১১।
[3] তাবারানী, আল-মু’জামুল আউসাত ৪/৮৬, নং ৩৪৪৯; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১৪৯; যাহাবী, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৭/২০৬, ১১/৫৫৫।
[4] বুখারী, আস-সহীহ ৬/২৫০৩-২৫০৪।