লগইন করুন
ব্যাংকের সূদকে হালাল করার জন্য আরো একটি যুক্তি এই পেশ করা হয়ে থাকে যে, ব্যাংক অপরের পুঁজি দ্বারা তার বিনা অনুমতিতে ব্যবসা করে, আর ব্যবসায় লাভের অর্থ আল্লাহ হালাল করেছেন। এই জন্য ব্যাংক এবং তাতে টাকা জমাকর্তা উভয়ের জন্য উক্ত লভ্যাংশ গ্রহণ করা হালাল, এই যুক্তির দলীলে উরওয়াহ বিন আবিল জা’দ (রাঃ) এবং হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীস পেশ করা হয়। যাতে বলা হয়েছে যে, নবী করীম (ﷺ) উরওয়াহ (রাঃ)কে একটি কুরবানীর পশু বা ছাগল খরীদ করতে একটি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) প্রদান করলেন। তিনি এ দীনার দ্বারা দুটি ছাগল খরীদ করলেন। অতঃপর একটিকে এক দীনারে বিক্রয় করে সেই দীনার সহ এ ছাগল নবী (ﷺ)কে সমর্পণ করলে তিনি তাঁর ব্যবসায় বর্কতের দুআ দিলেন।[1]
অনুরূপ তিনি হাকীম বিন হিযাম রাঃ কে একটি দীনার দিয়ে একটি কুরবানীর পশু ক্রয় করতে বলেছিলেন। তিনি দীনারটি দিয়ে একটি কুরবানীর পশু ক্রয় করে পুনরায় তা দুই দীনারে বিক্রয় করে দেন। অতঃপর একটি দীনার দ্বারা আবার একটি কুরবানীর পশু ক্রয় করে দীনার সহ পশু নবী (ﷺ)কে প্রদান করেন। তিনি দীনারটিকে সদকাহ করেছিলেন এবং হাকীমের ব্যবসায় বর্কতের দুআ দিয়েছিলেন।[2]
উক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা ব্যাংকের সূদকে এভাবে হালাল করার অপচেষ্টা করা হয়েছে যে, উভয় সাহাবীই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের দেওয়া দীনার দ্বারা তাঁর বিনা অনুমতিতে ব্যবসা করলেন এবং লাভকৃত দীনার সহ ছাগল বা (কুরবানীর পশু) ভেঁড়া নবী (ﷺ)কে সমর্পণ করলেন। অনুরূপ ব্যাংকও জমাকর্তার বিনা অনুমতিতে তার টাকা নিয়ে ব্যবসা করে এবং তার লভ্যাংশ তাকে প্রদান করে।
এই যুক্তির তৃতীয় দলীল গুহাবন্দীদের হাদীস। যাতে বলা হয়েছে যে, তিন ব্যক্তি একটি গিরিগুহায় আশ্রয় নিলে একটি বিরাট পাথর গুহার মুখে পড়ে গেলে তারা সেখানে বন্দী হয়ে পড়ে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ নেক আমলের অসীলা দিয়ে আল্লাহর নিকট দুআ করে; যাতে পাথর সরে গিয়ে তারা সেখান থেকে মুক্তিলাভ করতে পারে। ওদের মধ্যে একজন তার একটি নেক আমল উল্লেখ করে এভাবে দুআ করতে লাগল, ‘হে আল্লাহ! আমি এক ব্যক্তিকে (সাড়ে সাত কিলো) চালের বিনিময়ে একটি মজুর রেখেছিলাম। মজুরী পেশ করলেও সে তা না নিয়ে আমার নিকটেই ছেড়ে চলে যায়। অতঃপর আমি তার মজুরীর চালকে (ব্যবসায় খাটিয়ে) বাড়াতে লাগলাম। অবশেষে সেই চালের টাকা দিয়েই একপাল গাই এবং একটি রাখাল কিনে নিলাম। কিছু দিন পর সেই মজুর তার মজুরী নিতে আমার নিকট এল। আমি রাখাল সহ সমস্ত গাই তাকে দিয়ে দিলাম--।’[3]
উপর্যুক্ত তিনটি হাদীস থেকে নিম্নলিখিত মাসআলা প্রতিপন্ন করা হয়েছেঃ-
ক- অপরের পুঁজি দ্বারা তার বিনা অনুমতিতে ব্যবসাকারী যে লাভ অর্জন করে, তার সবটাই পুঁজিপতিকে দিতে পারে।
খ- সম্পূর্ণ লাভটাই সে নিজে রেখে নিতে পারে।
গ- এ লাভের কিয়দাংশ পুঁজিপতিকে দিয়ে বাকী অংশ নিজের জন্য রাখতে পারে।
ব্যাংকের কারবার এই তৃতীয় প্রকার মাসআলার পর্যায়ভুক্ত। অতএব ব্যাংকের সূদ সূদ নয়; প্রকৃতপক্ষে তা হল ব্যবসার লভ্যাংশ। আর তা নিঃসন্দেহে হালাল।
কিন্তু পূর্বোল্লেখিত তিনটি হাদীসকে নিয়ে যদি গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে বুঝা যাবে যে, এখানে যে কিয়াস করা হয়েছে তা যথার্থ নয়।
নবী (ﷺ) যে উরওয়াহ (রাঃ)কে একটি দীনার দিয়ে ছাগল অথবা কুরবানীর পশু (ভেঁড়া) ক্রয় করতে বলেছিলেন সে ব্যাপারটি প্রতিনিধিত্বের; ‘মুযারাবাহ’ (পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করতে দেওয়ার) ব্যাপার নয়। প্রতিনিধি করার অর্থ হল এই যে, ‘তুমি অমুক কাজে আমার স্থলাভিষিক্ত হও। (বা আমার হয়ে তুমি অমুক কাজ করে দাও।)’ আর উকীল বা প্রতিনিধিকে যে কাজে উকালতি বা প্রতিনিধিত্ব দেওয়া হয়, সে কাজে তার নিজস্ব এখতিয়ার চালনোর অনুমতি থাকে। তাছাড়া সাধারণ অনুমতি থাকলে তো কোন সমস্যায় নেই। কিন্তু যদি সাধারণ অনুমতি না হয়, তাহলে সে কাজে উকিলের নিজস্ব এখতিয়ার তার মুয়াক্কিলের অনুমতি সাপেক্ষ থাকে; মুয়াক্কিল রাজি হলে উকিলের এখতিয়ার সঠিক ও জায়েয, নচেৎ জায়েয নয়। উপর্যুক্ত দুটি হাদীসে আল্লাহর রসূল (ﷺ) ছাগল ও কুরবানীর পশু ক্রয় করার জন্য উল্লিখিত দুই সাহাবীকে নিজের প্রতিনিধি বা উকিল বানিয়েছিলেন। এবারে উরওয়াহ বিন আবিল জা’দ বারেকী (রাঃ) এক দীনারে দুটি ছাগল পেয়ে গিয়েছিলেন, আর এ জন্যই তিনি অতিরিক্ত একটি ছাগল এক দীনারে বিক্রয় করে দিয়েছিলেন।
হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) কুরবানীর এক মেষ ক্রয় করেছিলেন। অতঃপর তা পছন্দ না হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে দুই দীনারের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিয়েছিলেন। তারপর এক দীনারে একটি মেষ ক্রয় করে বাড়তি দীনারসহ তা নবী (ﷺ) কে সোপর্দ করেছিলেন।
এবারে একটু চিন্তা করে দেখলে বোঝা যাবে যে, উভয় সাহাবী নবী (ﷺ) এর অনুমতি ও সন্তোষ বাইরে কিছুই করেননি। আর এ কথা কল্পনাই বা কি করে করা যেতে পারে যে, সাহাবীদ্বয় নবী (ﷺ) এর অনুমতি ছাড়াই সে কাজে নিজেদের ইচ্ছা প্রয়োগ করেছেন? বলা বাহুল্য, তাঁর অনুমতি ও সন্তোষ শুরুতেও ছিল এবং শেষেও। এ কথার স্পষ্ট দলীল এই যে, তিনি তাঁদের এ কাজ পছন্দ করলেন এবং উভয়ের ক্রয়-বিক্রয়ে বর্কতের দুআও দিলেন।
অতএব উভয় সাহাবী রসূল (ﷺ) এর বিনা অনুমতিতেই উক্ত ক্রয়-বিক্রয় করেছিলেন এ কথা বাস্তব থেকে বহু ক্রোশ দূরে। আর তা যে হাদীসকে সঠিক ও যথার্থভাবে বুঝতে অক্ষমতার পরিণতি---তা বলাই বাহুল্য। পরন্তু এই ভুল বুঝার ভিত্তিতেই সমস্ত হাদীসকে সূদ হালালের দলীলরূপে পেশ করা হয়েছে। অথচ যে ব্যাখ্যা ও বুঝের ভিত্তিতে এমনটি করা হয়েছে, তা কোন হাদীস ব্যাখ্যাতাই করে যাননি।[4]
জনৈক পারসী কবি কি সত্যই না বলেছেন,
খিশ্তে আওয়াল চূঁ নেহদ মে’মার কজ্,
তা সুরাইয়্যা মী রসদ দীওয়ার কজ্।
অর্থাৎ, রাজমিস্ত্রি যখন প্রথম ইটটাই টেরা করে গাঁথে, তখন আকাশ পর্যন্ত দেওয়াল টেরা হয়েই উঠে।
পক্ষান্তরে নিজের পুঁজি দিয়ে অপরকে ব্যবসা করতে দেওয়ার অর্থ হল, ‘তুমি আমার টাকা দ্বারা ব্যবসা কর। ব্যবসার লাভ আমরা উভয়ে ভাগাভাগি করে নেব।’ যেমন প্রতিনিধিত্বে লাভ বা নোকসান ভাগাভাগির কোন প্রশ্নই নেই। তবে হ্যাঁ, প্রতিনিধি তার পারিশ্রমিক নিতে পারে। এখানে প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারকে ‘মুযারাবাহ’ (পুঁজি দিয়ে অপরকে ব্যবসা করতে দেওয়া) এর উপর কিয়াস (অনুমিতি) করা হয়েছে, যা যথার্থ ও সঠিক নয়।
ব্যাংক ডিপোজিটারদের পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করে (যদি সঠিক অর্থে ও বাস্তবে সে ব্যবসাই করে। নচেৎ ব্যাংক স্বয়ং নিজে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসা করে না। বরং সে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি প্রভৃতিকে সুদের উপর ঋণ সরবরাহ করে থাকে), তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। আবার শরীয়ত যে ধরনের মুযারাবাহকে বৈধ নিরূপিত করেছে, তার শর্তাবলী ব্যাংকের কারবারে পাওয়া যায় না।
যেমন; মুযারাবাহ উভয় পক্ষ (টাকার মালিক ও ব্যবসায়ী) প্রত্যেক লাভ-নোকসানে সমানহারে শরীক হয়। কিন্তু ব্যাংকে টাকা জমাকর্তা কেবল লাভেই শরীক হয়, নোকসানে হয় না। যাতে মুযারাবাহর শরয়ীরূপ বাতিলে পরিণত হয় এবং লাভের টাকাও সূদ রূপে পরিগণিত হয়ে যায়।
গুহাবন্দীদের হাদীসটিকে আরো একবার মনোযোগ সহকারে পড়লে বুঝতে পারবেন যে, সে ব্যক্তি মজুরের মজুরীর টাকা নিয়ে এ ব্যবসা করেনি। বরং উক্ত ব্যবসা সে নিজের মালিকানাধীন অর্থের মাধ্যমেই করেছিল। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত মজুরকে তার মজুরী দিয়ে দেওয়া না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত মজুরী মজুরের মালিকানাভুক্ত হয় না। কেননা, ধরে নেওয়া যাক, যদি এ চাল মালিকের নিকট হতে চুরি হয়ে যেত বা পুড়ে যেত অথবা কোন প্রকারে নষ্ট হয়ে যেত, তাহলে নোকসান কার হত? মালিকের না মজুরের? আপনি নিশ্চয়ই বলবেন যে, নোকসান মালিকেরই হত। এবারে কি মালিকের এ কথা বলার অধিকার ছিল যে, তোমার চাল নষ্ট হয়ে গেছে, অতএব তুমি আর মজুরী পেতে পার না? নিশ্চয় এ কথা কোন আদালতই মেনে নেবে না।
সুতরাং যদি তাই হয়, তাহলে এ কথা প্রমাণ হল যে, মালিক যা কিছু বাড়িয়েছিল, তা মজুরের মজুরীর চাল থেকে বাড়ায়নি বরং তা নিজের মাল থেকেই বাড়িয়েছিল।[5]
তবুও এ ব্যক্তি মজুরের জন্য যা কিছুই করেছে, তা নিছকভাবে একমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই করেছে। আর এর সাথে যে তার নিজেরও লাভ হবে, ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা পাবে বা ধনবৃদ্ধি হবে এসব উদ্দেশ্য তার মোটেই ছিল না। সুতরাং সে গাইপাল ও রাখাল সেই মজুরকে দিয়ে নিছক অনুগ্রহ ও বদান্যতা প্রকাশ করেছিল। যার ফলেই সে উক্ত কর্মের অসীলা দিয়ে আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করলে তিনি তা শ্রবণ করেছিলেন।
এবারে উক্ত হাদীস দ্বারা এই প্রমাণ করা যে, মালিক তার মজুরের মজুরীর চাল নিয়ে তার অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা করেছিল---সে কথা নিছক ভুলই নয়; বরং ভিত্তিহীন এবং হাস্যকরও। আর এর চাইতে বেশী হাস্যকর কথা হল এই যে, ইমাম বুখারীর মত দূরদর্শী মুজতাহিদকেও এ ব্যাপারে টেনে আনা হয়েছে; বলা হয়েছে ‘‘ইমাম বোখারী (রঃ) এই তৃতীয় প্রকার ব্যবসার বিষয় এভাবে উল্লেখ করেছেন- باب التجارة في مال غيره بغير إذنه!! কিন্তু আপনি পুরো সহীহুল বুখারী পড়ে দেখুন, উক্তরূপ শব্দে কোন ‘বাব’ই খুঁজে পাবেন না। سبحانك هذا بهتان عظيم (এটা একটি বড় অপবাদ এবং সত্যের অপলাপও।)
ইসলামের মত এমন ন্যায় ও নৈতিকতাপূর্ণ দ্বীন সম্বন্ধে কিভাবে একথা বিশ্বাস করা যায় যে, তাতে এক ব্যক্তির মাল-ধনে তার অনুমতি ছাড়াই অপর ব্যক্তির ঠিক মালিকের ন্যায় ইচ্ছামত এখতিয়ার চালানোর অনুমোদন আছে। এটি ইসলামের একটি এমন সন্দিগ্ধ ও বিকৃত ব্যাখ্যা, যা কোন সঠিক চিন্তাবিদ্ মানুষ সঠিক বলতে পারেন না। নিম্নের হাদীসটিকে ঠান্ডা মাথায় পড়ুনঃ-
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন,
لَا يَخْطُبْ أَحَدُكُمْ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ، وَلاَ يَبِعْ عَلَى بَيعِ أَخِيهِ إِلاَّ بِإِذْنِه.
অর্থাৎ, তোমাদের কেউ যেন তার ভায়ের পয়গামের উপর কোন নারীকে পয়গাম না দেয় এবং তার ভায়ের কেনা-বেচার উপর তার বিনা অনুমতিতে কেনা-বেচা না করে।[6]
একটু ভেবে দেখুন, ইসলাম যখন অপরের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর নিজস্ব পয়সা দিয়েও ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করছে, তখন অন্য জনের পয়সা দিয়ে তার অনুমতি ছাড়াই ক্রয় বিক্রয়কে কি করে বৈধ করতে পারে?
পক্ষান্তরে ব্যাংক এবং অনুরূপ কোন সংস্থা নিছক অর্থপূজা, ব্যবসা ক্ষেত্রে একচেটিয়া অধিকার, সুবিধা ভোগ এবং অর্থ শোষণ করার অভিপ্রায়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্যে এই থাকে যে, সূদের লোভ দেখিয়ে জনগণ ও জাতির ধন-মাল যতবেশী আকারে সম্ভব নিজেদের আয়ত্তে আনা হবে এবং এই পদ্ধতিতে নিতান্ত চাতুর্যের সাথে সমগ্র জাতির উপর স্বীয় ক্ষমতা ও শাসন চালানো হবে। যেখানে ইচ্ছা সেখানে দুর্ভিক্ষ আনা যাবে এবং যেখানে ইচ্ছা সেখানে অনাহার সৃষ্টি করে বিনাশ আনয়ন করা হবে। যেখানে ইচ্ছা সেখানে নিজের পছন্দমত শাসন ও রাজনীতি প্রয়োগ করা যাবে। যখন ইচ্ছা তখন মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করা সম্ভব হবে এবং যখন ইচ্ছা তখন মুদ্রামান বর্ধিত করে মার্কেটে ব্যাপক আকারে মন্দা ছড়ানো যাবে। যাকে ইচ্ছা গদিচ্যুত এবং যাকে ইচ্ছা তাকে গদীনশীন করা সহজ হবে।
প্রিয় পাঠক! এবারে আপনি নিজেই ফায়সালা করতে পারেন যে, (মুখলিস সৎব্যবসায়ীর) নিছক দ্বীনদারী ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ভিত্তিতে করা কারবারের উপর নিছক দুনিয়াদারী ও অর্থপিশাচ-সুলভ কারবারকে কিয়াস করা এবং এর ফলে ব্যাংকের কারবারকে বৈধ করা কতদূর সঠিক ও যথার্থ হতে পারে?
পুনরায় আর একবার আপনি তিনটি হাদীসকেই মন দিয়ে পড়ুন এবং দেখুন, তাতে কোথাও কি এমন কথা আছে যে, ‘ভাইসকল! তোমরা আমাদেরকে তোমাদের পুঁজি সোপর্দ কর, আমরা সে পুঁজির হিফাযতও করব এবং উল্টে তার উপর সূদও আদায় করব?’
আরও খেয়াল করে দেখুন, তাতে কি এ ধরনের কোন শর্ত বা নির্ধারণ আছে যে, ‘যদি তোমাদের টাকা আমাদের নিকট এক বছর থাকে, তাহলে ৮% ইনটারেষ্ট দেব, পাঁচ বছর থাকলে ডবল লাভ দেব আর দশ বছর থাকলে তিন ডবল দেব? অর্থাৎ মেয়াদ যত লমবা হবে তত বেশী হারে আমরা তার লভ্যাংশ (?) আদায় করে যাব?’
উপরন্ত বিলম্ব ও সময়ের বিনিময়ে শর্ত ও নির্ধারণের সাথে মূলধন ছাড়া কিছুও বেশী দেওয়া অথবা নেওয়ার নামই হল সূদ। আপনি পুনরায় আর একবার সূদের সংজ্ঞার্থ এবং জাহেলিয়াত যুগের প্রচলিত সূদকে নিয়ে চিন্তা করে দেখুন। তাতে আপনার নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, ব্যাংকের সূদ ও জাহেলিয়াতের সেই সূদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই ; যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করেছেন।
[2] (আবু দাঊদ ৩৩৮৬নং, তিরমিযী ১২৮০নং, হাদীসটি যয়ীফ, দেখুন মিশকাতের টীকা, হাদীস নং ২৯৩৭নং, যয়ীফ আবু দাঊদ ৭৩৩নং, আউনুল মা’বুদ ৯/২৩৮-২৪৩)
[3] (হাদীসটি প্রসিদ্ধ, দেখুন, বুখারী ২৩৩৩নং)
[4] (দেখুন, ফাতহুল বারী ৪/৪৭৭-৪৭৮, ৫/২১, ৬/৭৩৩-৭৩৪, তুহফাতুল আহওয়াযী ৪/৪৬৯-৪৭২, আউনুল মা’বুদ ৯/২৩৮-২৪৩, সুবুলুস সালাম ৩/৫৫, নাইলুল আওতার ৫/২৭০-২৭১, মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/৩৩৪)
[5] (দেখুন, ফাতহুল বারী ৫/২১)
[6] (আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, মুঅত্তা, মিশকাত ৩১৪৪নং)