লগইন করুন
ব্যাংকের সূদ হালাল করার লক্ষ্যে আরো একটি খোঁড়া যুক্তি এই বলে পেশ করা হয় যে, ব্যাংকের সূদ সেই জাহেলিয়াতের সূদ থেকে ভিন্নতর যাকে আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে হারাম করেছেন এবং সেরূপ সূদখোরের বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের তরফ থেকে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাকে ভীতিপ্রদর্শন করেছেন। কারণ, কতিপয় সলফদের উক্তিমতে জাহেলিয়াতের সূদ এরূপ ছিল যে, এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কর্জ দিত। অতঃপর সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে বলত, ‘আমার ঋণ পরিশোধ করে দাও, নচেৎ এর উপর সূদ দাও।’ অবশ্য জাহেলিয়াতের সূদ যে এরূপ ছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সে যুগে কেবলমাত্র এই এক রকমই সূদ যে প্রচলিত ছিল না---তাও সত্য।
কেননা, বহুসংখ্যক দলীল ও ঘটনা এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, ঋণ-চুক্তির প্রারম্ভেই সূদ নেওয়ার শর্ত আরোপ করা হত; যেমন, বাণিজ্যিক কাফেলার লোকেরা এরূপ করত। আল্লামাহ আবু বক্র জাস্সাস (রঃ) তাঁর ‘আহকামুল কুরআন’ নামক তফসীরগ্রন্থে লিখেছেন যে, যে ধরনের সূদ সে যুগের আরবদের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং যে ধরনের সূদ ছাড়া তারা অন্য সূদ জান্ত না---তা এই যে, জাহেলিয়াতের লোকেরা একে অন্যের নিকট ঋণ করার সময় আপোসে মূলধন ছাড়া এত টাকা বাড়তি আদায় করতে হবে---এই চুক্তি নিষ্পন্ন করে নিত।
প্রায় অনুরূপ কথাই ইমাম ত্বাবারী এবং আল্লামা রাযীও তাঁদের তফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
পরন্তু তর্কের খাতিরে যদি এ কথাও মেনে নেওয়া যায় যে, জাহেলিয়াতের সূদ যুক্তিতে উপস্থিত সূদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল; অর্থাৎ জাহেলিয়াতের সূদ ঋণ পরিশোধের জন্য নির্ধারিত প্রথম মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকেই শুরু হত, তাহলে দ্বিতীয় প্রকার সূদ অর্থাৎ চুক্তির গোড়াতেই শর্তারোপিত সূদ অধিকতর হারাম হওয়া উচিত। কারণ উপরোক্ত কথাগুলির সারমর্ম এই যে, জাহেলিয়াতের যুগে ঋণ দেওয়ার শুরুতে বিনা সূদে ঋণ দেওয়া হত এবং সূদ নেওয়া ঠিক তখন থেকে শুরু হত, যখন ঋণ পরিশোধ করার নির্ধারিত মেয়াদ পার হয়ে যেত এবং ঋণগ্রহীতা তার ঋণ পরিশোধ করতে পারত না।
যার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, শুরুতেই ঋণের উপর আরোপিত শর্ত অনুযায়ী সূদ খাওয়া অধিকরূপে হারাম ও নাজায়েয। আর ব্যাংক এই দ্বিতীয় প্রকার কারবারই করে থাকে। কেননা, ব্যাংকে ঋণগ্রহীতার উপর সূদের হিসাব প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে যায়। পরন্তু জাহেলিয়াতের প্রথম প্রকার সূদও ব্যাংকের বর্তমান লেনদেনে পাওয়া যায়। কারণ ঋণ শোধ করার নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে এবং ঋণগ্রহীতা ব্যাংকের ঋণ আদায় করতে না পারলে তাকেও বলা হয় যে, ‘হয় তোমার ঋণ পরিশোধ কর, না হয় আরো সূদ আদায় কর।’ এ ছাড়া যদি পরিশোধে একটা মাত্র দিন বিলম্ব হয়ে যায়, তাহলে সেই দিনের সূদও তার উপর জুড়ে দেওয়া হয়। এবং এইভাবে যতদিন বিলম্ব হয়, তত দিনের সূদ তার ঘাড়ে হিসাবমত চাপিয়ে দেওয়া হয়।