লগইন করুন
ব্যাংকের সূদকে বৈধ ও হালাল করার মানসে একটি সন্দিগ্ধ যুক্তি এও পেশ করা হয়ে থাকে যে, যে সূদকে কুরআন হারাম ঘোষণা করেছে তা হল কেবলমাত্র চক্রবৃদ্ধিহারে সূদ। অর্থাৎ অত্যন্ত অধিক পরিমাণের সূদ অথবা ক্রমবর্ধমান সূদের সূদ; যে সূদে সূদখোর অভাবী মানুষের অভাবকে সুযোগরূপে ব্যবহার করে তাকে শোষণ করে ছাড়ে। পক্ষান্তরে স্বল্প পরিমাণের সূদ; যেমন ৮% বা ১০% সূদে শোষণ পাওয়া যায় না। অতএব এমন স্বল্পাকারের সূদ কুরআনে ঘোষিত অবৈধতার পর্যায়ভুক্ত নয়। কারণ আল্লাহ তাআলা সূরা আলে ইমরানের ১৩০ আয়াতে বলেন,
(﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَأْكُلُوا الرِّبا أَضْعَافاً مُضَاعَفَةً وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
অর্থাৎ, হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সূদ ভক্ষণ করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর, তবেই তোমরা সফলকাম হতে পারবে।
যাঁরা আরবী ভাষার বিভিন্ন পরিভাষা ও বাক্ধারা সম্পর্কে অবহিত এবং কুরআন মাজীদের বাগ্বৈশিষ্ট্য ও ভাবধারা সম্বন্ধে অবগত তাঁরা সকলেই জানেন যে, সূদের উক্ত (চক্রবৃদ্ধিহারে) বিশেষণ তার নিকৃষ্টতার যথারীতি প্রচার ও প্রসিদ্ধি তথা বাস্তব প্রেক্ষাপট তুলে ধারণ করার জন্য ব্যবহূত হয়েছে। নচেৎ উক্ত বিশেষণ সূদ হারামের জন্য কোন শর্ত নয়। অর্থাৎ সাধারণ সূদ হারাম হওয়ার ব্যাপারটা উক্ত গুণসাপেক্ষ নয়। কেননা, জাহেলিয়াত যুগের লোকেরা ব্যাপকভাবে ক্রমবর্ধমানহারে দ্বিগুণ-চতুর্গুণ সূদের সূদ নিয়ে যে চরম সীমায় পৌঁছেছিল তাকেই ‘চক্রবৃদ্ধিহার’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আর এ ধরনের বাস্তবসূচক বিশেষণ উক্ত অবৈধতায় শর্ত হিসাবে বিবেচ্য নয়। অর্থাৎ তার অর্থ এই নয় যে, সূদ চক্রবৃদ্ধিহারে না হলে তা গ্রহণ করা বৈধ। তাছাড়া ঃ
﴿وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوسُ أَمْوَالِكُمْ﴾
অর্থাৎ, যদি তোমরা তওবা কর, তাহলে তোমাদের মূলধন তোমাদের অধিকারভুক্ত।[1]
এই আয়াত হতে স্পষ্টাকারে এ কথাই বুঝা যায় যে, মূলধন ছাড়া অন্য কিছু ঋণদাতাদের অধিকারভুক্ত নয়, সুতরাং তা থেকে এক পয়সাও বেশী নেওয়া হারাম হবে।
এতদ্ব্যতীত কম ও বেশী নির্ধারণ করার কষ্টিপাথর কি? সেটা এমন কোন্ নিক্তি যে ১০%কে কম এবং ১২%কে বেশী বলে নিরূপণ করবে? আমরা যদি কুরআনের আয়াতের স্পষ্ট অর্থ গ্রহণ করি তাহলে দেখা যাবে, চক্রবৃদ্ধিহারে বলতে ৬০০% হচ্ছে। কেননা, উক্ত আয়াতে ‘আযআফ’ শব্দটি বহুবচন। আর বহুবচনের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল তিন। এবারে ওকে দ্বিগুণ করলে ৬ হবে। অর্থাৎ ১০০ টাকায় ৬০০ টাকা সূদ হবে। তাহলে কোন জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি কি এ কথা বলতে পারে যে, সূদের এই বিরাট অংক অর্থাৎ ৬০০% হারে সূদ খাওয়াকেই আল্লাহ হারাম করেছেন এবং এর চেয়ে কম অংকের অর্থাৎ ৩০০% অথবা ৪০০% হারে সূদ খাওয়াকে জায়েয করেছেন?!