লগইন করুন
সূদ খাওয়ার বহু ধরনেরই বাহানা ও পথ রয়েছে যা গণনা করা সম্ভব নয়। প্রত্যেক যুগেই সূদখোর লোকেরা সুদ খাওয়ার নিত্যনতুন পথ ও পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে এবং তার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর শরীয়তকে ধোঁকা দিতে প্রয়াস পেয়েছে। এই ধরনের কিছু পথ ও পদ্ধতির কথা আমরা এখানে উল্লেখ করছিঃ-
১- বাই-এ ঈনাহঃ-
এই ব্যবসার পদ্ধতি এই যে, এক ব্যক্তি কোন জিনিস নির্দিষ্ট মেয়াদ দিয়ে ধারে বিক্রয় করে, অতঃপর সেই জিনিসকেই নগদে তার থেকে কম দামে ক্রয় করে। (যেমন এক ব্যক্তির অর্থের প্রয়োজন হল। ঋণ কোথাও না পেয়ে এক গাড়ির ডিলারের নিকট গেল। ডিলারের নিকট থেকে ধারে ৫০ হাজার টাকায় একটি গাড়ি কিনল। অতঃপর সেই গাড়িকেই ঐ ডিলারের নিকট নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে বিক্রি করল। যার ফলে ১০ হাজার টাকা ডিলারের পকেটে অনায়াসে এসে গেল।)
সত্যানুসন্ধানী উলামাগণ এই প্রকার ক্রয়-বিক্রয়কে সূদী কারবার বলে আখ্যায়ন করেছেন। উক্ত উলামাবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ ও কুরতুবী প্রমুখ। আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ লিখেছেন, আব্দুল্লাহ বিন আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহুকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদ দিয়ে হারীরাহ (আটা ও দুধ দ্বারা প্রস্ত্তত এক প্রকার খাদ্য) ধারে বিক্রয় করল। অতঃপর সে তা অপেক্ষাকৃত কম দামে খরিদ করে নিল। (এরূপ ক্রয়-বিক্রয় জায়েয কি?) উত্তরে তিনি বললেন, ‘সে তো দিরহামকে দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করেছে, হারীরাহ কেবল উভয়ের মাঝে এসে গেছে।’ (আর বিদিত যে, দিরহামকে দিরহামের বদলে কমবেশী করে ক্রয়-বিক্রয় হারাম বা সূদ।)
অনুরূপ একই বিষয়ে আনাস বিন মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এরূপ করা সেই ক্রয়-বিক্রয়ের পর্যায়ভুক্ত যাকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল হারাম ঘোষণা করেছেন। আর এই অভিমতই অধিকাংশ উলামা; ইমাম আবু হানীফা, মালেক, আহমদ (রঃ) প্রমুখগণের।
এদের নিকটেও উক্ত লেন-দেন হারাম ও নাজায়েয।[1]
২- তাওয়ার্রুক ব্যবসাঃ-
১০০ টাকার জিনিসকে ১২০ টাকায় ধারে কিনে তা ব্যবহার করা অথবা তা অল্পদরে অন্যের নিকট বিক্রি করে তার মূল্য ব্যবহার করাকে মাসআলা-এ তাওয়ার্রুক বলা হয়। (যেমন এক ব্যক্তির অর্থের প্রয়োজন হলে ঋণ করার চেষ্টা সত্ত্বেও ঋণ না পেলে সে কোন গাড়ির দোকানে গেল। সেখানে ৫০ হাজার টাকা দামের গাড়ি ৬০ হাজার টাকায় ধারে কিনে তা ৪০ বা ৫০ হাজার টাকায় অন্য ব্যক্তিকে নগদ বিক্রয় করে সে পয়সা কাজে লাগাল।
অথবা গাড়ির প্রয়োজনে এভাবে গাড়ি নিয়ে তা ব্যবহার করল। এমন লেনদেনকে তাওয়ার্রুক বলে।[2]
বহু উলামার নিকট উক্ত প্রকার লেন-দেন সূদের পর্যায়ভুক্ত। উমার বিন আব্দুল আযীয বলেন, ‘তাওয়ার্রুক হল সূদের ভাই।’[3]
৩- দুই ব্যবসায়ীর মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যস্থতাঃ-
উক্ত ব্যবসা এই রূপ যে, ঋণদাতা ও গ্রহীতা নির্দিষ্ট টাকার কোন সুদী কারবারে চুক্তিবদ্ধ হয়। অতঃপর উভয়ে বাজারে কোন দোকানদারের নিকট এসে চুক্তি পরিমাণ টাকার পণ্য ঋণদাতা খরীদ করে নেয়। অতঃপর সে ঋণগ্রহীতার নিকট উক্ত পণ্য ধারে বিক্রয় করে। পুনরায় ঋণগ্রহীতা এ পণ্য ঘুরে দোকানদারকে কমদরে বিক্রয় করে। এইভাবে দোকানদার এই সূদী কারবারে মধ্যস্থতা করে। টাকা পরিশোধের সময় বেশী পায় ঋণদাতা। মাঝখান থেকে মধ্যস্থতার নামে লাভ হয় দোকানদারেরও। আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, ‘এ কারবার সূদী কারবারের পর্যায়ভুক্ত।’[4] শায়খ ইবনে উসাইমীন বলেন, ‘এ কারবার নিঃসন্দেহে হারাম।’[5]
৪- ঋণ পরিশোধ করার নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হলে ঋণকে ব্যবসায় পরিণত করাঃ- তা এই রূপে যে, ঋণ পরিশোধ করার নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে এবং ঋণ গ্রহীতা তা পরিশোধ না করতে পারলে ঋণদাতা অধিক অর্থ নিয়ে এ ঋণকে অন্য কারবারে পরিবর্তন করে দেয়। এরূপ করা সূদ খাওয়া। যার হারাম হওয়াতে কোন সন্দেহ নেই।[6]
[2] (আশ্ শারহুল মুমতে ৮/২৩১)
[3] বর্তমান বিশ্বের সত্যানুসন্ধানী উলামাগণের নিকট তাওয়ার্রুক কিছু শর্তে বৈধ। প্রথমতঃ এ ব্যক্তি ঋণ করার চেষ্টা সত্ত্বেও কোথাও সত্যিই যদি ঋণ না পায়। দ্বিতীয়তঃ সে যদি সত্যসত্যই টাকা বা এ জিনিসের অভাবী হয়। তৃতীয়তঃ যে জিনিস বিক্রয় হচ্ছে তা যেন বিক্রেতার নিকটে থাকা অবস্থায় বিক্রয় হয়। (দেখুন, আশ্ শারহুল মুমতে, ইবনে উসাইমীন ৮/২৩৩, আল মুদায়ানাহ ৭ পৃঃ, কিতাবুদ্দা’ওয়াহ ইবনে বায ১৮৮ পৃঃ) -অনুবাদক
[4] (ফতোয়া ইবনে তাইমিয়াহ ২৯/৪৪১)
[5] (আল- মুদায়ানাহ ৮পৃঃ)
[6] প্রকাশ যে, কারো জিনিস বন্ধক রেখে ঋণ দিয়ে এ জিনিস ব্যবহার করা বৈধ নয়। বৈধ নয় জমি বন্ধক নিয়ে ধান খাওয়া। বন্ধক নিয়ে জমির মালিক হওয়া যায়না। তবে তার সম্পূর্ণ ফসল কি করে হালাল হবে? সুতরাং জমি বন্ধক নিয়ে তার চাষ যদি ঋণদাতাই করে তাহলে জমির মালিকের সাথে একটা ভাগচুক্তি করে করাই হারাম থেকে বাঁচার পথ। অবশ্য গাই বন্ধক নিলে যেহেতু তাকে খাওয়াতে হবে সেহেতু তার দুধপান করা বৈধ। (দ্রষ্টব্য, ফিকহুস সুন্নাহ ৩/১৭১)