লগইন করুন
এবারে আসুন, আমরা দেখি, জাহেলিয়াতের সুদ কেমন ছিল; যে সুদের অবৈধতার উপর কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে এবং যে ব্যাপারে নবী (ﷺ) এর রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা।
জাহেলিয়াতের যুগে কারবারের যে পদ্ধতিকে ‘রিবা’ বা সুদ বলা হত তার বিভিন্ন ধরন একাধিক বর্ণনায় পাওয়া যায়।
কারবারের একটি ধরন এরূপ ছিল;
হযরত কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘জাহেলিয়াত যুগের সুদ ছিল এই যে, এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে কোন মাল বিক্রয় করত এবং দাম মিটাবার জন্য একটি সময় নির্ধারিত করত। এবারে সেই নির্দিষ্ট সময় ও মেয়াদ পূরণ হওয়ার পর যদি ক্রেতার নিকট দাম মিটাবার মত অর্থ না হত, তাহলে বিক্রেতা তার (ক্রেতার) উপর অতিরিক্ত অর্থ চাপিয়ে দিত এবং (দাম মিটাবার) সময় আরো বাড়িয়ে দিত।’[1]
মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘জাহেলিয়াতের সুদ এই ছিল যে, এক ব্যক্তি কারো নিকট ঋণ করত এবং বলত, যদি তুমি আমাকে ঋণ পরিশোধে এতটা সময় দাও, তাহলে আমি তোমাকে এত এত বেশী দেব।’[2]
আবু বাকার জাসসাস (রাহিমাহুল্লাহ)-এর প্রতিপাদন অনুসারে জাহেলিয়াত যুগের প্রচলিত সুদ ছিল এই যে, ‘তারা একে অন্যের নিকট ঋণ গ্রহণ করত এবং আপোসে এই চুক্তি করে নিত যে, এত সময় (ঋণ রাখলে) আসল ছাড়া আরো এত টাকা বাড়তি আদায় করতে হবে।’ (আহকামুল কুরআন, ১ম খন্ড)
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযীর প্রতিপাদন মতে, জাহেলিয়াত যুগের লোকেদের মধ্যে এই রীতি ছিল যে, ‘এক ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা ধার দিত, অতঃপর সে তার (ঋণগ্রহীতার) নিকট থেকে মাসিক হারে সুদ হিসাবে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ওসুল করত। এর পর যখন ঋণ পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়কাল শেষ হয়ে যেত, তখন ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে আসল টাকা চাওয়া হত। সে সময় পরিশোধ করতে না পারলে তাকে পুনরায় অতিরিক্ত সময় অবকাশ দেওয়া হত এবং সেই সঙ্গে সুদের পরিমাণও দেওয়া হত বাড়িয়ে। (তফসীরে কাবীর ২/৩৫১)
উপরে উল্লিখিত সুদের সংজ্ঞার্থ এবং জাহেলিয়াত যুগের প্রচলিত সুদী কারবার নিয়ে যদি একটু চিন্তা-ভাবনা করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে, বর্তমান যুগে ব্যাংকসমূহে যে সুদী কারবার চলছে, তা হুবহু জাহেলিয়াত যুগে প্রচলিত সুদী কারবার সমূহের অন্যতম; যার অবৈধতার ব্যাপারে সারা মুসলিম উম্মাহ একমত।[3]
জাহেলিয়াত যুগে উক্ত প্রকার সুদী কারবার প্রচলিত ছিল। যাকে আরববাসিগণ সুদ বলত। সেই কারবারকেই কুরআন মাজীদে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তারা উক্ত সুদী কারবারকে ব্যবসার মত বৈধ ও জায়েয মনে করত; যেমন বর্তমান জাহেলিয়াত যুগেও তাই মনে করা হয়।
ইসলাম আমাদেরকে এই শিক্ষা দিয়েছে যে, ব্যবসার ফলে মূলধনে যে অতিরিক্ত অর্থ বৃদ্ধি পায় সেই অর্থ এ অর্থ থেকে ভিন্নতর যা সূদী কারবারে বৃদ্ধি পায়। প্রথম প্রকার অতিরিক্ত অর্থ হালাল। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় প্রকার অতিরিক্ত অর্থ হারাম।
আল্লাহ তাআলা জাহেলিয়াত যুগের এ লোকদের ধারণাকে খন্ডন করে বলেন:
﴿ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبا وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبا ﴾
অর্থাৎ তা এই জন্য যে, তারা বলে ব্যবসা তো সুদের মতই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। (সূরা বাক্বারাহ ২৭৫ আয়াত) এ ব্যাপারে মুসলিমের জন্য আবশ্যক এই যে, সে ব্যবসা এবং সুদী কারবারের মধ্যে পার্থক্য জানবে, সুদের বৈশিষ্ট্য চিনবে এবং তার সর্বনাশিতার ব্যাপারে সম্যক্ জ্ঞান লাভ করবে। তাহলেই সে জানতে পারবে, ইসলাম কোন্ ভিত্তিতে তা হারাম নিরূপণ করেছে।
[2] (&ঐ ৩/৬২)
[3] জাহেলিয়াতের যুগেও যে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সুদের উপর ঋণ নেওয়া-দেওয়া হত, তা বিশেষভাবে প্রতিপাদিত করেছেন মওলানা মওদূদী। দেখুন, সুদ ও আধুনিক ব্যাংকিং ১৭২-১৮০ পৃঃ, আরো দেখুন, ডক্টর ইউসূফ কারযবীর ফাওয়াইদুল বুনূক ৩০-৩১ পৃঃ - অনুবাদক।