লগইন করুন
إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمداً عبده ورسوله، أما بعد :
ইসলাম বিশ্বজনীন ও কালজয়ী ধর্ম। এর আহকাম ও নির্দেশাবলী ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ। ইসলাম শান্তি, সন্ধি ও নিরাপত্তার ধর্ম। ইসলাম ভ্রাতৃত্ববোধ সম্প্রীতি, মিলন, সহানুভূতি ও সমবেদনার ধর্ম। ইসলাম উন্নয়ন ও বদান্যতার ধর্ম। যার আহকাম ও নীতিমালায় রয়েছে সরলতা ও উদারতা।
সঙ্কীর্ণতা, কঠিনতা, জটীলতা ও কষ্ট-সমষ্টির নাম ইসলাম নয়। সভ্যতা ও সংস্কৃতির কোন কোণকেই ইসলাম তার অনুসারীদের বিবেকে অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে না। বৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থ-বিনিয়োগ করার সঠিক পথে কোন প্রতিবন্ধ সৃষ্টি করে না। নিষেধ করে না শিল্প, কারিগরি ও কৃষিকার্যে উৎকর্ষসাধন ও বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনকে বরং ইসলাম তো এই ধরনের কর্মসমূহকে মুসলিম জনগণের সাফল্যের সোপান এবং সুখ ও কল্যাণ লাভের উপকরণরূপে নির্ধারণ করেছে। ইসলাম সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীকে সুস্পষ্টভাবে উৎসাহদান করে এবং এই শিক্ষা দেয় যে, মানুষের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপার্জন তাই; যা সে নিজ হাত দ্বারা করে থাকে।[1]
কিন্তু বর্তমান যুগে উপার্জনের বিভিন্ন নিত্য-নতুন পদ্ধতি ও প্রণালী আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এরই জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কোম্পানী, ব্যাংক প্রভৃতি; যে সব প্রতিষ্ঠান আজকের সকল অর্থনৈতিক আইন-কানুনের উপর নিজের কবজা ও অধিকার জমিয়ে বসে আছে। এই সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার লেন-দেন ও তার নিয়ম-নীতি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করাও আমাদের জন্য জরুরী হয়ে গেছে।
ফকীহগণ বলেন, ﻣﻦ جهل بأهل زمانه فهو جاهل
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তার সমসাময়িক যুগের লোকেদের অবস্থা সম্বন্ধে জ্ঞান রাখে না; অর্থাৎ তার নিজের যুগের লোকেদের জীবন-পদ্ধতি, তাদের সাময়িক পরিস্থিতি ও জীবিকানির্বাহের ধারা তথা তাদের প্রকৃতি ও রুচি সম্বন্ধে যে অবগত নয় সে অজ্ঞ ও জাহেল।[2]
একজন আলেমের জন্য যেমন কুরআন ও সুন্নাহর বিভিন্ন আহকাম জানা জরুরী, ঠিক তেমনিই তার সমসাময়িক কালের আচরিত প্রথা ও ট্রেডিশন এবং সমকালীন মানুষের অবস্থা সম্বন্ধে জ্ঞান লাভও জরুরী। এ ছাড়া শরীয়তের বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েলের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে তিনি পেঁŠছতে পারেন না। হানাফী মযহাবের ফকীহগণের মধ্যে এক ফকীহ ইমাম মুহাম্মদ রাহিমাহুল্লাহ ফিক্হী মাসায়েল লিপিবদ্ধ করার সময় নিয়মিত বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের নিকট বসতেন, তাদের লেন-দেনের রীতিধারা বুঝতেন এবং মার্কেটে কোন্ ধরনের বাণিজ্য-নীতি প্রচলিত তা লক্ষ্য করতেন। কারণ ঐ শ্রেণীর জ্ঞান লাভ একজন আলেমের জন্য এবং বিশেষ করে একজন মুফতীর জন্য ফরয। যাতে করে ঐ শ্রেণীর কোন সমস্যা বা প্রশ্ন তাঁর নিকট এলে তিনি তার প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে দস্ত্তরমত অবগত হন। নচেৎ এ ছাড়া তিনি কোন সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতেই পারেন না। পরন্তু এ কথাও বলা হয়েছে যে, যখন কোন সমাজে কোন অবৈধ কাজ-কারবার শুরু হয়, তখন আলেম ও মুফতীর কর্তব্য কেবল সেই কাজ বা কারবার হারাম ও অবৈধ ফতোয়া দেওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় না; বরং ইসলামী আহবায়ক হিসাবে তাঁর জরুরী কর্তব্যের মধ্যে ঐ কাজও শামিল যে, তিনি তা অবৈধ চিহ্নিত করার পরপরই তার বিকল্প বৈধ পদ্ধতি ও কারবার কি; তাও বাতলে দেবেন। এবং সেই বিকল্প ব্যবস্থা যেন হয় আমলের যোগ্য এবং শরীয়তের মোতাবিকও।
ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যখন স্বপ্নের বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করা হল, তখন সাত বছর খরা বা অনাবৃষ্টি আসবে ঐ খবর তো পরে বললেন; কিন্তু তার পূর্বেই তিনি ঐ খরার কবল হতে মুক্তি লাভের উপায় বলে দিলেন; বললেন, ঃ
﴿فَمَا حَصَدْتُمْ فَذَرُوهُ فِي سُنْبُلِهِ إِلاَّ قَلِيلاً مِمَّا تَأْكُلُونَ﴾
অর্থাৎ- তোমরা খেতের যে শস্য সংগ্রহ করবে তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা ভক্ষণ করবে তা ব্যতীত বাকী শস্যকে শীষ সমেত রেখে দেবে। (সূরা ইউসুফ ৪৭ আয়াত)
উক্ত আয়াত হতে এ কথাই বুঝা যায় যে, সৎপথের আহবায়কের জন্য কোন হারাম কাজকে কেবল হারাম চিহ্নিত করে দেওয়াই যথেষ্ট নয়; বরং তার সঙ্গে সাধ্যমত ঐ হারাম কাজ থেকে মুক্তি লাভের বিকল্প পথও বলে দেওয়া আবশ্যক। আর সেই পথ তিনি তখনই বলতে পারেন, যখন তিনি ঐ কাজের প্রকৃতত্ব সম্বন্ধে যথাযথ অবগত হবেন।
উক্ত কথার প্রতি লক্ষ্য রেখে একাজ জরুরী মনে করা হয়েছে যে, নব জীবিকানির্বাহ পদ্ধতি এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত সেই সকল জ্ঞাতব্য-বিষয় একত্রে সঞ্চিত হোক যার প্রয়োজনীয়তা অনুরূপ কোন সমস্যার সমাধান দানের সময় একজন আলেমের নিকট দেখা দিতে পারে।
যেহেতু ব্যাংক তথা অন্যান্য অর্থ-বিনিয়োগ সংক্রান্ত সংস্থা ও কোম্পানীর ভিত্তিই পুঁজিপতিত্ব ও সুদের উপর সেহেতু সুদের প্রকৃতত্ব ও মূলতত্ত্ব জেনে নেওয়া জরুরী। উদাহরণ স্বরূপ মনে করুন, এক ব্যক্তি নিজের পকেট থেকে মাত্র ১০লাখ টাকা কোন ব্যবসায় লাগাল। আর ৯০লাখ টাকার লোন নিল ব্যাংক থেকে। এভাবে সে এক কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসা করল। ধরে নিন্, ঐ ব্যবসায় তার ৫০ শতাংশ লাভ হল এবং এক কোটি টাকা দেড় কোটি টাকায় পরিণত হল। এবারে এ পুঁজিপতি ৫০ লাখ টাকার লাভ থেকে মাত্র ১৫ লাখ টাকা সূদ হিসাবে ব্যাংককে দেবে। যা থেকে ব্যাংক নিজের লাভ রেখে বড় জোর ১০ অথবা ১২ লাখ টাকা সেই শত শত জনগণের মাঝে বন্টন করবে যাদের আমানত তার নিকট জমা (ডিপোজিট) আছে। যার স্পষ্ট পরিণতি এই যে, উক্ত ব্যবসায় যে সমস্ত শত শত লোকের ৯০ লাখের পুঁজি বিনিয়োগ করা ছিল এবং প্রকৃতপক্ষে যাদের পুঁজির বলে এত পরিমাণ লাভ অর্জন সম্ভব হল, তাদের ভাগে এল মাত্র ১০ অথবা ১২ লাখ টাকা। পক্ষান্তরে যে পুঁজিপতি কেবলমাত্র ১০ লাখ টাকার পুঁজি-বিনিয়োগ করেছিল তার ভাগে এ ব্যবসার লাভ স্বরূপ গেল ৩৫ লাখ টাকা! পরন্তু মজার কথা এই যে, উক্ত ১৫ লাখ টাকা যা ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে এবং তার মাধ্যমে যে (১০ বা ১২ লাখ) টাকা জনসাধারণের নিকট পৌঁছেছে সেই টাকাকে পুঁজিপতি নিজের উৎপাদন বাবদ মূল খরচের মধ্যে গণ্য করে; আর যে টাকা অবশেষে তার পকেটে পড়ে না বরং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পকেটে পড়ে। কারণ এ ব্যবসায়ে পুঁজিপতি যে সমস্ত পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করেছে তার মূল্য নির্ধারণকালে ব্যাংককে প্রদত্ত সূদের অর্থকেও সে এ মূল্যের মধ্যে শামিল করে। আর এইভাবে বাস্তবপক্ষে তার নিজের পকেট থেকে একটি পয়সাও খরচ হয় না। পক্ষান্তরে যদি তার এ ব্যবসা কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা কোন দুর্ঘটনার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তার ক্ষতিপূরণ বহন করে বীমা কোম্পানী। আর এ বীমা কোম্পানীতেও সঞ্চিত থাকে হাজার হাজার জনসাধারণের অর্থ; যারা মাসিক বা বাৎসরিক হিসাবে নিজেদের উপার্জিত অর্থের কিছু অংশ সেখানে জমা করে থাকে। অথচ না তাদের কোন বাণিজ্যশালায় আগুন লাগে, আর না-ই তারা কোন দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। সুতরাং সাধারণতঃ তারা অর্থ জমাই করে যায়, ছাড়ানোর পালা খুব কমই পড়ে।
অপর দিকে এমনও পুঁজিপতি আছে, যার ব্যবসায়ে খুব বড় নোকসান ঘটে গেলে সে ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। যার ফলে সে ব্যাংকের দেউলিয়া হয়ে যায়। এমত পরিস্থিতিতে এ পুঁজিপতিদের তো খুব কম অঙ্কের টাকাই নষ্ট হয়। কিন্তু পূর্ণ নোকসান সেই অর্থ জমাকর্তাদের হয় যাদের অর্থবলে এ পুঁজিপতিরা ব্যবসা করে থাকে। (কারণ ব্যাংক তখন তাদের জমা রাখা টাকা ফেরৎ দিতেও অসমর্থ হয়।)
মোট কথা সুদের এই নীতির কারণেই জাতির সমস্ত পুঁজিকে কেবল কয়েকটি বড়বড় পুঁজিপতি তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। আর এর বিনিময়ে জাতিকে প্রত্যর্পণ করে কিঞ্চিৎ পরিমাণ অংশ। পরন্তু এই কিঞ্চিৎ অংশকেও উৎপাদিত পণ্যদ্রব্যের আসল মূল্য গণ্য করে পুনর্বার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে ওসুল করে নেয় এবং নিজেদের ঘাটতিও পূরণ করে জনসাধারণের সঞ্চিত অর্থ থেকে। (কারণ জনসাধারণ তাদের নির্ধারিত মূল্যেই উক্ত পণ্যদ্রব্য ক্রয় করতে বাধ্য।) এইভাবে সুদের সমষ্টিগত গতিমুখ এই পরিণতির দিকে থাকে যে, জনসাধারণের সঞ্চয়ের কারবার সংক্রান্ত লাভ অধিকাংশ বড় পুঁজিপতিদের নিকট পৌঁছে এবং জনসাধারণ তদ্বারা যথাসম্ভব কম উপকৃত হয়। অতএব এইভাবেই আর্থিক উচ্ছ্বাসের গতিমুখ সর্বদা পুঁজিপতিদের দিকেই থেকে যায়। এ ধরনের পরিণাম ও ফল দেখার পরেও অনেকে ব্যাংকের সুদকে বৈধ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ উচিত ছিল, ব্যাংকের সুদকে বৈধ প্রতিপাদন করার পরিবর্তে খোদ ব্যাংককেই ইসলামিক রূপ দান করা। অর্থাৎ ব্যাংকের নিয়মনীতিকে ইসলামী কানুনের ছাঁচে ঢেলে তার উপর আমল করার চেষ্টা করা হত এবং জগতের মানুষকে এ জানিয়ে দেওয়া যেত যে, ইসলামী নীতির উপর আমল করলে এই এই উপকার সাধন হয়। বিশ্ববাসীকে এই ভরসা দেওয়া যেত যে, ইসলামী কানুনের উপর আমলের মাধ্যমেই মানব-জাতি সুখ-সমৃদ্ধি ও সফলতার পথে ধাবমান হতে পারে। হয়তো ঐ শ্রেণীর মানুষদের প্রচেষ্টা ঠিক এ ব্যক্তির মতই; যে চিনির ডিববার উপরে লিখে রাখে ‘এটা লবণের ডিববা।’ তার উদ্দেশ্য থাকে, যাতে পিঁপড়ের দল ধোঁকা খেয়ে চিনির কথা বুঝতে না পারে। কিন্তু ডিববার উপর পরিবর্তিত নাম দেখে পিঁপড়ে ধোকা খায় না। বরং তারা নিজেদের প্রাকৃতিক ইন্দ্রিয় দ্বারা আসল ব্যাপার জেনে চিনি পর্যন্ত পৌঁছেই যায়। তদনুরূপ আপনি ব্যাংকের সুদের নাম যাই রাখুন না কেন; তার নাম ‘মুনাফা’ রাখুন অথবা ‘বোনাস’ (Bonus) ‘লভ্যাংশ’ রাখুন অথবা ‘অনুগ্রহ’, নাম পরিবর্তনে বস্ত্তর আসলত্ব ও প্রকৃতত্ব পরিবর্তিত হয়ে যায় না। মুমিন নিজের ঈমানী অন্তর্দৃষ্টিতে তাকে সুদই বুঝবে।
শ্রদ্ধেয় পাঠকবৃন্দ! আপনাদের দৃষ্টি সম্মুখে এই পুস্তিকায় ব্যাংকের সুদ হারাম হওয়ার ব্যাপারে প্রামাণিক পর্যালোচনা করা হয়েছে। সর্বাগ্রে কুরআন ও হাদীস থেকে সুদের অবৈধতা বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর সুদ ও ব্যবসার মধ্যে পার্থক্য এবং প্রাক ইসলামী জাহেলিয়াত যুগের সুদের কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর ইসলাম সুদকে ব্যাহত করার যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে সে পদ্ধতির কথা বড় চিত্তাকর্ষক ভঙ্গিমাতে বর্ণনা করা হয়েছে। এর পরে সুদের চারিত্রিক, সামাজিক, আর্থ-সামাজিক তথা জীবন ও জীবিকা-নির্বাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
অতঃপর কোম্পানী এবং তার লেন-দেন পদ্ধতি, ব্যাংক ও তার এতিহাসিক পটভূমিকা, ব্যাংকের শ্রেণীভেদ এবং তার বিভিন্ন ফাংশন প্রাঞ্জল ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর ব্যাংকের সর্বনাশিতা দেখানো হয়েছে।
অতঃপর ব্যাংকের সুদকে বৈধকারীদের দলীলসমূহকে সমালোচনামূলক বিচার-বিবেচনা করা হয়েছে এবং হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিমায় সে সব দলীলের জওয়াব দেওয়া হয়েছে।
অতঃপর ব্যাংকের সুদ হারাম হওয়ার উপর বিভিন্ন কন্ফারেন্স্ ও ফিক্হ একাডেমিতে সবর্ববাদিসম্মতিক্রমে যে রায় পাস হয়েছে তার সিদ্ধান্ত-নামা এবং এই সিদ্ধান্তের সপক্ষে রায়দাতাদের নামের তালিকা পরিবেশিত হয়েছে ।
মিসরের এক মুফতী উক্ত সুদ বৈধ হওয়ার ব্যাপারে যে ফতোয়া দিয়েছেন, তার প্রতিবাদে আযহার ইউনিভার্সিটির উলামায়ে কেরামের একটি টিম মক্কা মুকার্রামায় একটি ইলমী বিবৃতি প্রকাশ ও প্রচার করেন, সেই বিবৃতিপত্রে স্বাক্ষরকারীদের নাম তাঁদের স্বাক্ষর-সহ দেখানো হয়েছে। পরিশেষে ব্যাংকের বিকল্প ব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র পেশ করা হয়েছে। অতঃপর আলোচিত হয়েছে বীমার কথা। বীমার বিভিন্ন শ্রেণীসমূহের মধ্য হতে ‘সোশল ও মিউচিউল ইনস্যুরেন্স’ এর বৈধতার উপর মক্কায় যে সর্ববাদিসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল তার খসড়া পেশ করা হয়েছে; যাতে স্বাক্ষরকারী উলামাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত উলামাবৃন্দ সকল ধরনের ‘কমার্সিয়াল ইনশ্যুরেন্স’কে হারাম ঘোষণা করেছেন।
আর সবশেষে উল্লেখ করা হয়েছে বীমার বিকল্প ব্যবস্থাও।
অনুরূপ বিভিন্ন আলোচনার সাথে পুস্তিকাটি এখন আপনার হাতে। এই পুস্তিকার মূল উদ্দেশ্য হল, ব্যাংকের সুদের ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিকোণের বিশদ ব্যাখ্যা; কারো সমালোচনা করা নয়। (ব্যাংকের সুদ বৈধকারীদের) বিভিন্ন দলীলসমূহকে বিচার-বিবেচনা করতে গিয়ে যদি কোন ব্যক্তিত্বের সমালোচনা এসে পড়েছে, তবে তা ঠিক সেই পর্যায়ের; যেমন আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রাহিমাহুল্লাহ শাইখুল ইসলাম ইসমাঈল আল- হারাবী রাহিমাহুল্লাহ প্রসঙ্গে বলেছিলেন,
شيخ الإسلام حبيب إلينا، ولكن الحق أحب إلينا منه.
অর্থাৎ, শায়খুল ইসলাম আমাদের প্রিয় পাত্র; কিন্তু আমাদের নিকট ‘হক’ হল তাঁর চেয়েও অধিক প্রিয়।
এর সাথে সাথে আমি সেই বন্ধু ও সঙ্গীদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি যাঁরা এই পুস্তিকার পান্ডুলিপি প্রস্ত্তত করার সময় বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ দিয়ে, বিভিন্ন বই-পুস্তক সংগ্রহ করে, হাওয়ালাসহ হাদীস উদ্ধৃত করে অথবা অন্য কোন প্রকার প্রয়োজনে আমার সহায়তা করেছেন।
আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি আমাকে হক কথা বলতে, লিখতে এবং হক কথার তবলীগ ও প্রচার করতে তওফীক ও প্রেরণা দিন।
এই নগণ্য আমল ও কর্মকে তাঁর সন্তুষ্টি ও প্রসন্নতার অসীলা বানিয়ে নিন, এই পুস্তিকা দ্বারা মুসলিম জনগণকে উপকৃত করুন এবং তাদের জন্য হেদায়েতের অসীলা করুন, আর যাদের জীবন ভুল পথে পরিচালিত---বিশেষ করে ব্যাংকের সুদের ব্যাপারে যারা ভুল রাস্তা অবলম্বন করেছে তাদেরকে সরল পথের দিকে ফিরে আসার তওফীক দান করুন। আমীন।
এই পুস্তিকা পাঠ করার পর যদি একটি মুসলিম ভাইও ব্যাংকের সুদ খাওয়া থেকে তওবা করার তওফীক লাভ করেন তাহলে আমরা জানব যে, আমাদের শ্রম সার্থক হয়েছে। আর প্রকৃত হেদায়েতের মালিক আল্লাহ।
তিনিই প্রার্থনা শ্রবণ ও মঞ্জুরকারী।
يا مقلب القلوب ثبت قلوبا على دينك، وصل اللهم وسلم وبارك على نبيك محمد وعلى آله وصحبه أجمعين، يا رب العالمين.
ইসলাম ও মুসলিমদের খাদেম
মুশ্তাক আহমদ কারীমী
মদীনা ত্বাইয়্যিবা, সউদী আরব
তারীখ ২৩/৩/ ১৯৯৭ ঈসায়ী
রবিবার ১৪/১১/১৪১৭হিঃ
[2] (শরহে উকূদি রসমিল মুফতী ৯৮ পৃঃ)