লগইন করুন
রমাযান বিদায় নিল। ফিরে আসবে আবার প্রায় এক বছর পর। রমাযান চলে গেল। কিন্তু রমাযান পরে মুসলিমের অবস্থা কি, কর্তব্য কি? রমাযানের আমল ভরা দিনগুলি শেষ হয়ে গেল, কিন্তু মুমিনের আমল তো কোন দিনকার জন্য শেষ হওয়ার নয়। যেহেতু যিনি রমাযানের প্রভু, তিনিই শা’বান ও শওয়াল তথা বাকী মাসসমূহ ও সারা বছরের প্রভু।
মুসলিমের কর্তব্য হল, রমাযান মাসে যে সব নেক আমলে অভ্যাসী হয়েছে সেই সব আমল বন্ধ না করে একটানা নিয়মিত করে যাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন,
(وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْن)
অর্থাৎ, মৃত্যু আসা অবধি তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত করতে থাক। (কুরআনুল কারীম ১৫/৯৯)
আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সেই আমল অধিক পছন্দনীয়, যা লাগাতার করে যাওয়া হয়; যদিও বা তা পরিমাণে কম হয়।’’[1]
শেষ হয়ে গেল সবুরের মাস। আর সবুর হল পরহেযগার মানুষদের সম্বল। বলা বাহুল্য, যেমন সে এ মাসে বড় প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে আমল-ইবাদত করেছে, তেমনি পরের মাসগুলিতেও যেন সেই প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম বাকী থাকে। তার সমস্ত আমল এমন হওয়া উচিত, যেন সে তা রমাযানেই করছে।
রোযার মাস বিদায় নিয়ে চলে গেল। কিন্তু রোযা বিদায় নেয় নি। যেহেতু রমাযানের রোযা ছাড়াও অন্যান্য সুন্নত ও নফল রোযা রয়েছে; তা যেন তার আমলের খাতা থেকে বাদ না পড়ে।
নামায ও কিয়ামের মাস ফুরিয়ে গেল। কিন্তু নফল নামায ও কিয়াম কেবল রোযার মাসেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রত্যেক রাতের একটি অংশ তাহাজ্জুদের জন্য মুসলিমের খাস হওয়া উচিত।
এই মাসে সকল মসজিদের ইমাম ও মুসল্লীগণ তাঁদের অন্যান্য (বেনামাযী) ভাইদেরকে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়ে মসজিদে দেখে শত খুশী হয়েছেন, যারা রমাযানভর পাঁচ অক্ত্ ফরয নামায যথা নিয়মে আদায় করেছে, বরং তারা নিয়মিতভাবে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামাযও পড়েছে। পরন্তু তাঁদের আনন্দ আরো বৃদ্ধি হতে থাকে; যদি ঐ ভায়েরা উক্ত অবস্থাতেই প্রতিষ্ঠিত থেকে যায়। (অর্থাৎ বার মাসই নামায পড়ে।) নচেৎ ‘‘কিয়ামতে বান্দার নিকট থেকে অন্যান্য আমলের পূর্বে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেওয়া হবে। সুতরাং নামায সঠিক হলে তার অন্যান্য আমলও সঠিক বিবেচিত হবে। (নচেৎ না।)’’[2]
নেক আমল বা কোনও সৎকর্ম আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার অন্যতম লক্ষণ এই যে, আমলকারী ঐ কর্মের পরে পুনরায় অন্যান্য সৎকর্ম করে থাকে। সুতরাং রমাযানের পর আপনার অন্যান্য নেক আমল করতে থাকা এই কথারই লক্ষণ যে, আপনার রোযা ও তারাবীহ মহান আল্লাহ কবুল করে নিয়েছেন। আর হ্যাঁ, খবরদার পুনরায় আপনি আপনার সেই অবস্থায় ফিরে যাবেন না, যে অবস্থা ছিল রমাযানের পূর্বে। মহান আল্লাহ বলেন,
(وَلاَ تَكُوْنُوْا كَالَّتِيْ نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ أَنْكَاثاً)
অর্থাৎ, তোমরা সে নারীর মত হয়ো না, যে তার সুতা মজবুত করে পাকাবার পর ওর পাক খুলে নষ্ট করে দেয়।’’ (কুরআনুল কারীম ১৬/৯২)
ভাই মুসলিম! আপনি আপনার ঔদাস্য বর্জন করুন। আরামের নিদ্রা থেকে জেগে উঠুন। আপনার সফরের জন্য কিছু পথের সম্বল সংগ্রহ করে নিন। আল্লাহ রববুল আলামীনের প্রতি প্রত্যাবর্তন ও রুজু করুন। হয়তো বা আপনি তাঁর সাড়া পাবেন। তাঁর রহমত ও করুণা অর্জন করে আপনি সৌভাগ্যবান হবেন। আল্লাহর অলীদের পথের পথিক হয়ে তাঁদের সাথে গিয়ে মিলিত হতে পারবেন।
আল্লাহ ও তাঁর জাহান্নামের ভয়ে নয়নাশ্রু বিগলিত করে রমাযান মাসকে বিদায় জানান। যে ছিল প্রিয়তম, সে বিদায় নিল। তাতে তো আপনার চোখে পানির স্রোত নামারই কথা। কি জানি আবার আগামী বছরে সেই প্রিয়তমের সাথে আপনার সাক্ষাৎ হবে কি না? আবার আপনি ঐ ফরয রোযা পালন করার তওফীক লাভ করবেন কি না? পুনরায় ঐ উদ্দীপনার সাথে জামাআতে ঐ তারাবীহর নামায পড়তে সুযোগ পাবেন কি না?
কাজ শেষে মজুরকে তার মজুরী দিয়ে দেওয়া হয়। আমরা আমাদের কাজ তো শেষ করলাম। কিন্তু হায়! যদি আমরা আমাদের মধ্যে কার কাজ মহান আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়েছে তা জানতে পারতাম, তাহলে তাকে তার উপর মোবারকবাদ জানাতাম। আর কার কাজ গৃহীত নয়, তা জানতে পারলে তার সাথে বসে সমবেদনা ও শোক প্রকাশ করতাম।[3]
[2] (আহমাদ, মুসনাদ, সুনানে আরবাআহ; আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ, ত্বাবারানী, মু’জাম, প্রমুখ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৩৫৮নং)
[3] (তাওজীহাতুন অফাওয়াএদ লিসসা-য়েমীনা অসসায়েমাত ১০১-১০৬পৃঃ থেকে সংক্ষেপিত)