লগইন করুন
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন- এ পর্যন্ত আমরা নাবী (ﷺ)-এর পবিত্র জীবনীর বিভিন্ন দিক, ইবাদতের মধ্যে তাঁর সুন্নাতে তাইয়্যেবা এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় তাঁর জিহাদগুলোর বিবরণ পেশ করেছি। এখন আমরা কয়েকটি পর্বে নাবী (ﷺ) এর ঐ সমস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করব, যা তিনি নিজে গ্রহণ করেছেন এবং অন্যদেরকে গ্রহণ করতে বলেছেন। আমরা আরও উল্লেখ করব যে, কোন রোগের জন্য তিনি কি চিকিৎসা গ্রহণ করা বৈধ করেছেন। সেই সাথে তিবেব নববীর ঐ হিকমতগুলোও উল্লেখ করব, ডাক্তারগণের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যে পর্যন্ত পৌঁছতে অক্ষম।
কেননা তিব্বে নববী হচ্ছে নাবী (ﷺ) এর মুজেযার অংশ। আধুনিক চিকিৎসা যতই উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জন করুক না কেন, তা মুজেযায়ে নববীর পর্যায়ে পৌঁছতে সম্পূর্ণ অক্ষম।
সুতরাং আমরা এখানে আল্লাহর উপর ভরসা করে শুধু ঐ সমস্ত রূহানী ও কুদরতী ঔষধের বর্ণনা করব, যার দ্বারা নাবী (ﷺ) চিকিৎসা করেছেন এবং যা বৈধ বলে অনুমোদন করেছেন। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) নাবী (ﷺ) হতে বর্ণনা করেনঃ
الْعَيْنُ حَقٌّ وَلَوْ كَانَ شَيْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ
‘‘বদ নযর (বদ নযরের প্রভাব) সত্য। কোন জিনিষ যদি তাকদীরকে অতিক্রম করতে পারত, তাহলে বদ নজর তাকে অতিক্রম করত।’’[1]
عَنْ أَنَسٍ أَنّ رَسُوْلَ اللهِ صلّى الله عليهِ وسلّمَ رخّصَ فِي الرُّقْيَةِ مِنَ الْعَيْنِ وَالْحُمَّةِ وَالنَّملةِ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (ﷺ) বদ নযর, বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছুর কামড় এবং ফুসফুসের আচ্ছাদক আবরণের স্ফীতি ও প্রদাহ জনিত রোগের (ফোঁড়ার) চিকিৎসায় ঝাড়-ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন।[2]
নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ্ শরীফে বর্ণিত আছে যে, একদা আমের ইবনে রাবীয়া সাহল ইবনে হুনাইফের কাছ দিয়ে অতিক্রম করল। সাহ্ল ইবনে হুনাইফ (রাঃ) তখন গোসল করতে ছিলেন। আমের ইবনে রাবীয়া সাহলকে দেখে বলল, আমি আজকের মত লুকায়িত সুন্দর চামড়া আর কখনো দেখিনি। এ কথা বলার কিছুক্ষণ পর সাহ্ল অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁকে নাবী (ﷺ) এর কাছে নিয়ে এসে বলা হল, সাহ্ল বদ নযরে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বললেন, তোমরা কাকে সন্দেহ করছ? তারা বলল, আমের ইবনে রাবীআকে। অতঃপর নাবী (ﷺ) এর কাছে আমেরকে আনয়ন করা হলে তিনি বললেন- কেন তোমাদের কেউ তার ভাইকে হত্যা করতে চায়? তুমি তার জন্যে বরকতের দু’আ করলে না কেন? অতঃপর তিনি আমেরকে বললেন- তুমি তার জন্য তোমার শরীর ধৌত কর। সে তার মুখমণ্ডল, কনুইসহ উভয় হাত এবং হাটু পর্যন্ত এমনকি লুঙ্গীর নীচ পর্যন্ত একটি পাত্রে ধৌত করল। অতঃপর সেই পানি সাহলের শরীরে ঢেলে দেয়া হল।[3]
আব্দুর রাজ্জাক মা’মার থেকে, মা’মার তাউস থেকে আর তাউস তার পিতা হতে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন যে, العَيْنُ حَقٌّ وَإِذَا اسْتَغْسِلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَغْتَسِلْ" ‘‘বদ নযরের প্রভাব সত্য, তোমাদের কাউকে যখন গোসল করতে বলা হয়, তখন সে যেন গোসল করে’’।[4]
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন- বদনযর প্রয়োগকারীকে আদেশ করা হবে, সে যেন একটি পাত্র থেকে পানি উঠিয়ে কুলি করে। অতঃপর কুলির পানি সেই পাত্রে নিক্ষেপ করে। তারপর সেই পাত্রে তার মুখমণ্ডল ধৌত করবে। অতঃপর সে তার বাম হাত ধৌত করবে। অতঃপর ডান হাঁটুর উপর পানি ঢালবে। তারপর ডান হাত পানির মধ্যে ডুবাবে। অতঃপর বাম হাঁটুর উপর পানি ঢেলে লুঙ্গির নীচের অংশ ধৌত করবে। আর পাত্রটি যেন যমীনের উপর না রাখা হয়।
অতঃপর এই পানি বদনযরে আক্রান্ত রোগীর শরীরে পিছন দিক থেকে এক সাথে ঢেলে দেয়া হবে।[5]
[2]. সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সালাম, ইবনে মাজাহ, তাও. হা/৩৫১৬
[3]. ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তিবব।
[4]. মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হা/ ১৯৭৭০, এই হাদীছের সনদ মুত্তাসেল।
[5]. এই পদ্ধতি আলেমদের অভিজ্ঞতা দ্বারা পরিক্ষিত।