লগইন করুন
অতঃপর তাবুকে অবস্থানকালে নাবী (ﷺ) দাওমাতুল জান্দালের শাসক উকাইদার বিন আব্দুল মালেক আলকেন্দির কাছে খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) কে পাঠালেন। প্রেরণের সময় তিনি খালেদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) কে বললেন- তুমি গিয়ে দেখবে যে, সে নীল গাভী (বন্য গাভী) শিকারে ব্যস্ত আছে। খালেদ চলতে লাগলেন। তিনি যখন উকাইদারের দুর্গের কাছাকাছি পৌঁছলেন তখন পূর্ণিমার রাত্রিতে দুর্গটি দৃষ্টিগোচর হল। সে তখন স্বীয় স্ত্রীসহ দুর্গের ছাদের উপর ছিল। তখন একটি নীল গাভী এসে শিং দিয়ে প্রাসাদের দরজায় আঘাত করছিল। তখন তার স্ত্রী বলল- আপনি কি কখনও এ রূপ নীল গাভী দেখেছেন? সে বলল- আল্লাহর শপথ! কখনও এরূপ দেখি নি। অতঃপর সে নিজ পরিবারের আরও কয়েকজন লোকসহ ঘোড়ায় আরোহন করে বের হয়ে পড়ল। তাদের মধ্যে উকাইদারের এক ভাইও ছিল। তার নাম ছিল হাস্সান। তারা যখন বের হল তখনই রসূল (ﷺ) এর অশ্বারোহী বাহিনী উকাইদারকে পাকড়াও করল এবং তার ভাই হাস্সানকে হত্যা করে ফেলল। তার গায়ে ছিল স্বর্ণের পাতা অঙ্কিত একটি লম্বা জামা। খালেদ তা ছিনিয়ে রসূল (ﷺ) এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি উকাইদারকে পাকড়াও করে রসূল (ﷺ) এর দরবারে নিয়ে আসলেন।
নাবী (ﷺ) উকাইদারকে হত্যা থেকে বাঁচিয়ে দিলেন এবং জিযিয়া কর প্রদানের বিনিময়ে তার সাথে চুক্তি করলেন। সে ছিল খৃষ্টান। সে ছাড়া পেয়ে স্বীয় দেশে চলে গেল।
ঐতিহাসিক ইবনে সা’দ বলেন- দাওমাতুল জান্দাল জয় করার জন্য নাবী (ﷺ) চারশত বিশজন অশ্বারোহীসহ খালেদকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তা জয় করে উকাইদারের সাথে এই শর্তে চুক্তি করলেন যে, তারা দুই হাজার উট, সাতশত ছাগল, চারশত লৌহ বর্ম এবং চারশত বর্শা (বল্লম) প্রদান করবে। এই মালে গনীমত হতে নাবী (ﷺ) তাঁর অংশ আলাদা করে নিলেন। অতঃপর বাকী সম্পদ ভাগ করতে গিয়ে প্রথমে খুমুস তথা এক পঞ্চমাংশ (১/৫) আলাদা করলেন। অতঃপর অবশিষ্ট সম্পদ তাঁর সাহাবীদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। প্রত্যেক সাহাবী গণীমতের মাল থেকে পাঁচটি করে অংশ পেয়েছিলেন। রসূল (ﷺ) তাবুকে দশ দিনেরও বেশী সময় অবস্থান করেছিলেন। অতঃপর মদ্বীনার দিকে রওয়ানা করলেন।
আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন- তাবুক যুদ্ধে থাকা কালে মধ্যরাতে আমি একবার উঠে একটি অগ্নিশিখা দেখতে পেলাম। আমি সেখানে গিয়ে রসূল (ﷺ), আবু বকর এবং উমার (রাঃ) কে দেখতে পেলাম। সেখানে আরও দেখলাম যে, রসূল (ﷺ)-এর সাহাবী যুল বিজাদাইন মৃত্যু বরণ করেছেন। তাঁর জন্য কবরও খনন করা হয়েছে। নাবী (ﷺ) তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে আছেন। আবু বকর এবং উমার (রাঃ) তাঁকে কবরে নামাচ্ছেন। নাবী (ﷺ) বললেন- তোমাদের ভাইকে আমার নিকটবর্তী কর। তারা তাকে রসূলের নিকটস্ত করলেন। তাঁকে যখন কবরে রাখার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্ত্তত করলেন, তখন তিনি তাঁর জন্য দু’আ করলেন। দু’আয় তিনি বললেন- হে আল্লাহ্! আমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তুমিও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) নাবী (ﷺ) এর পবিত্র জবানে এই দু’আ শুনে বললেন- আফসোস! আমি যদি এই কবরের বাসিন্দা হতাম! (তাহলে আমার খুশ নসীব হত)।
আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (ﷺ) যখন তাবুকে অবস্থান করছিলেন তখন জিবরীল ফিরিস্তা আগমণ করলেন। জিবরীল (আঃ) বললেন- হে মুহাম্মাদ! আপনি মুআবিয়া বিন মুআবীয়া আল-মুযানীর জানাযায় শরীক হোন। এ কথা শুনে নাবী (ﷺ) সাহাবীদেরকে নিয়ে উক্ত সাহাবীর জানাযায় বের হলেন। ঐদিকে জিবরীল ফিরিশ্তা এই সলাতে জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য সত্তর হাজার ফিরিস্তাসহ উপস্থিত হলেন। জিবরীল ফিরিস্তা তাঁর ডান পাখা পাহাড়ের উপর রাখলেন। জিবরীলের পাখার ভারে পাহাড়সমূহ নত হয়ে গেল। তাঁর বাম পাখা রাখলেন যমীনের উপর। এতে যমীনও নত হয়ে গেল। বর্ণনাকারী বলেন- আমরা সেখান থেকে মক্কা ও মদ্বীনা পর্যন্ত দেখতে পেলাম। অতঃপর নাবী (ﷺ) তাঁর সাহাবীগণ, জিবরীল এবং ফিরিস্তাগণ সলাত আদায় করলেন। সলাত শেষে নাবী (ﷺ) জিবরীল (আঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন- মুআবীয়া এত উচ্চ মর্যাদায় কিভাবে পৌঁছল? তিনি বললেন- দাঁড়ানো, বসা, আরোহী এবং পায়ে হাটা তথা সকল অবস্থায় সূরা ইখলাস পাঠ করার কারণে তিনি এই মর্যাদায় পেঁŠছতে সক্ষম হয়েছেন।[1]
তাবুক থেকে ফেরার পথে নাবী (ﷺ) বলেছিলেন, মদ্বীনায় এমন কিছু লোক রয়ে গেছে, যারা আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের কোন পথ অতিক্রম করার সময় এবং কোন উপত্যকা পার হওয়ার সময় তোমাদের সাথেই ছিল। সাহাবীগণ আরজ করলেন- হে আল্লাহর রসূল! তারা কি মদ্বীনাতেই অবস্থান করছে? তিনি বললেন- হ্যাঁ, গ্রহণযোগ্য উযর (অজুহাত) থাকার কারণেই তথা জিহাদে আসতে অক্ষম বলেই তারা আসতে পারেনি।