লগইন করুন
আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাইকে দুর্রা না লাগানোর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে আলেমদের থেকে কয়েকটি মত বর্ণিত হয়েছে।
১) মুমিনরা দুনিয়াতে অপরাধ করলে দুনিয়াতে যদি তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয় তাহলে সেই শাস্তি গুনাহর কাফ্ফারা স্বরূপ। আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই যেহেতু মুনাফেক ছিল এবং তার জন্য যেহেতু পরকালে কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে, তাই তাকে দুর্রা লাগানো হয়নি। যাতে পরকালের শাস্তি সে পূর্ণরূপে ভোগ করতে পারে।
২) সাক্ষী ব্যতীত কারও উপর শরিয়তের নির্ধারিত শাস্তি কায়েম করা যায়না। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার সাথীদের সামনেই বলাবলি করে বেড়াত। অন্যান্য মুসলমানদের সামনে সে মুখ খুলেনি। তাই তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোন সাক্ষী না থাকায় কিংবা সে নিজে স্বীকারোক্তি না দেয়ায় তাকে শাস্তি দেয়া সম্ভব হয়নি।
৩) ব্যভিচারের অপবাদের শাস্তি যেহেতু বান্দার হকের সাথে সম্পৃক্ত, আর আয়িশা (রাঃ) যেহেতু তার শাস্তি দাবী করেন নি, তাই সে শাস্তি হতে রেহাই পেয়েছিল। তা ছাড়া এটি আল্লাহর হক হলেও তা বাস্তবায়নের দাবীর প্রয়োজন রয়েছে।
৪) বলা হয়ে থাকে যে, হদ কায়েম করার চেয়ে অধিক বৃহৎ স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য তার উপর শাস্তি কায়েম করা হয়নি। যেমন তার থেকে নিফাকী প্রকাশ পাওয়ার পরও বৃহৎ স্বার্থে তাকে হত্যা করা হয়নি। আর তা হচ্ছে, তার জাতির প্রচুর লোক মুসলিম ছিল। সে ছিল স্বীয় গোত্রের নেতা। তাই তাকে হত্যা করা হলে মুসলিমদের ঐক্য নষ্ট হতে পারে ভেবে তাকে হত্যা করা হয়নি।
এই যুদ্ধ হতে ফেরার পথেই আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই তার সাথীদের সাথে বলেছিল-
لَئِنْ رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ
‘‘আমরা যদি মদ্বীনায় প্রত্যাবর্তন করি, তবে সেখান থেকে সবল অবশ্যই দুর্বলকে বহিষ্কার করবে’’।[1] যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) এই খবর নাবী (ﷺ) কে বলে দিলেন। আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাইকে ডাকা হলে সে ওযূহাত পেশ করতে লাগল এবং শপথ করে এ কথা বলতে লাগল যে, আমি এ কথা কখনই বলিনি। তার কথা শুনে রসূল (ﷺ) চুপ হয়ে গেলেন। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা যায়েদ বিন আরকামের সত্যতায় এবং মুনাফেক সরদারকে মিথ্যুক প্রতিপন্ন করে সুরা মুনাফিকুন নাযিল করেন। নাবী (ﷺ) তখন যায়েদকে বললেন- সুসংবাদ গ্রহণ কর। আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার প্রশংসায় কুরআন মজীদে সূরা মুনাফিকুন নাযিল করেছেন। তিনি আরও বললেন- তুমি তোমার কানের হক আদায় করেছ। উমার বিন খাত্তাব সেই মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন- হে আল্লাহর রসূল! আপনি হুকুম করুন। আববাদ বিন বিশ্র তার গর্দান উড়িয়ে ফেলুক। রসূল (ﷺ) তখন বললেন- আমি যদি তা করি তাহলে লোকেরা বলাবলি করবে যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর সাথীদেরকে হত্যা করছে।