লগইন করুন
অনেকেই মনে করেন, কাবা ঘরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা হজ্জের সুন্নাত এবং নাবী (ﷺ)-এর অনুসরণের অন্তর্ভুক্ত। তবে এ ব্যাপারে বর্ণিত সকল হাদীস একত্রিত করলে বুঝা যায়, হাজ্জ বা উমরাহ করার সময় কাবা ঘরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন নি; বরং তিনি মক্কা বিজয়ের দিন তাতে প্রবেশ করেছেন। মুলতাযামে অবস্থানের ব্যাপারেও একই কথা। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, মক্কা বিজয়ের দিন তিনি এখানে দাঁড়িয়ে দু’আ করেছেন।
ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) আমর বিন শুআইব (রাঃ) হতে, তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর বুক, চেহারা, তাঁর উভয় বাহু এবং হাত প্রসারিত করে মুলতাযামে রেখে দু’আ করেছেন। এরপর তিনি বলেছেন- আমি রসূল (ﷺ) কে এরূপ করতে দেখেছি।[1] এটি হতে পারে বিদায়ী তাওয়াফের সময়, হতে পারে অন্য সময়ের ঘটনা। কিন্তু মুজাহিদ এবং অন্যান্যগণ বলেন- বিদায়ী তাওয়াফের পর মুলতাযামে সামান্য সময় দাঁড়িয়ে দু’আ করা মুস্তাহাব।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হাজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মাঝখানে দাঁড়িয়ে দু’আ করতেন।
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, নাবী (ﷺ) যখন মক্কা হতে বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন তখনও উম্মে সালামা তাওয়াফ করেন নি। তিনি অসুস্থ ছিলেন। তিনিও যাত্রা করতে চাইলেন। নাবী (ﷺ) তখন তাকে বললেন- যখন ফজরের সলাতের ইকামত দেয়া হবে এবং লোকেরা সলাত আদায় করবে তখন তুমি উটের উপর আরোহন করে তাওয়াফ করবে। তিনি তাই করলেন এবং বের হওয়ার পূর্বে ফজরের সলাত আদায় করেন নি।
এই ঘটনাটি ছিল মদ্বীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফের সময়কার। এটি কুরবানীর দিনের ঘটনা নয়। এ থেকে আরও বুঝা গেল যে, রসূল (ﷺ) সে দিন মক্কায় ফজরের সলাত পড়েছেন। উম্মে সালামা সেদিন ফজরের সলাতে রসূল (ﷺ) কে সূরা তুর পড়তে শুনেছেন। অতঃপর তিনি মদ্বীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।
তিনি যখন ‘রাওহা’ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন একটি কাফেলার সাথে সাক্ষাত হলে তিনি তাদেরকে সালাম দিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন- এরা কোন সম্প্রদায়ের লোক? তারা বলল- মুসলিম। তারা জিজ্ঞেস করলঃ আপনারা কোন্ সম্প্রদায়? বলা হল, তিনি হলেন রসূলুল্লাহ্ (ﷺ)। তখন একটি মহিলা তাঁর শিশুকে উঠিয়ে বলল- হে আল্লাহর রসূল! এরও কি হাজ্জ আছে? তিনি বললেন- হ্যাঁ, তার হাজ্জও বিশুদ্ধ হবে। তোমারও ছাওয়াব মিলবে।
ফেরার পথে তিনি যুল-হুলায়ফায় এসে রাত্রি যাপন করলেন। যখন মদ্বীনা মুনাওয়ারা চোখে পড়ল তখন তিনি তিনবার আল্লাহু আকবার বললেন এবং এই দু’আটি পাঠ করলেন-
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهْوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ سَاجِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ صَدَقَ اللهُ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ
‘‘এক মাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। মালিকানা তাঁরই। সমুদয় প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী, সেজদাহকারী এবং আমাদের রবের প্রশংসাকারী। আল্লাহ্ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং সকল শত্রুদলকে একাই পরাজিত করেছেন।’’ [2]
অতঃপর তিনি দিনের বেলায় মুআররিসের পথ দিয়ে মদ্বীনায় প্রবেশ করলেন। যখন তিনি মদ্বীনা হতে বের হয়েছিলেন তখন শাজারার পথ দিয়ে বের হয়েছিলেন।
[2]. বুখারী, তাও. হা/১৭৯৭, মুসলিম মাশা. হা/৩৩৪৩, আবু দাউদ, আলএ. হা/২৭৭০