লগইন করুন
তাশাহুদে বসার পূর্বে তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদা হতে মাথা উঠাতেন। এ সময় তিনি রাফউল ইয়াদাইন করতেন না। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন এবং ডান পা খাড়া রাখতেন। আর উভয় হাতের কনুই উভয় রানের উপর রাখতেন এবং হস্তদ্বয়ের অগ্রভাগ উভয় হাঁটুর উপর রাখতেন। ডান হাতের কনিষ্ঠা এবং অনামিকা আঙ্গুলকে মুষ্ঠিবদ্ধ রেখে বৃদ্ধা ও মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে বৃত্তাকার বানিয়ে শাহাদাত আঙ্গুলি উঠিয়ে রেখে দু’আ করতেন। কিন্তু এ সময় তিনি শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াতেন না। দুই সিজদার মাঝখানে তিনি এই দু’আ পড়তেন-
اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِى وَارْحَمْنِى واجْبُرْنِيْ وَاهْدِنِى وَارْزُقْنِى
‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি আমার উপর রহম কর, আমার ক্ষতিসমূহ পূরণ করে দাও, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত কর এবং আমাকে রিযিক দান কর’’[1]। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) নাবী (ﷺ) হতে এভাবেই বর্ণনা করেছেন।
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নাবী (ﷺ) দুই সিজদার মাঝখানে اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِى বলতেন। অতঃপর তিনি উভয় রানের উপর হাত রেখে পা-দ্বয়ের অগ্রভাগে এবং হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে যেতেন। দাঁড়িয়েই কিরাআত পাঠ শুরু করে দিতেন। প্রথম রাকআতের ন্যায় বিরতি গ্রহণ করতেন না। প্রথম রাকআতের মতই তিনি দ্বিতীয় রাকআত পূর্ণ করতেন। তবে চারটি বিষয়ে পার্থক্য ছিল। (১) প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমার পর যেমন কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন দ্বিতীয় রাকআতে তা করেননি। (২) দু’আয়ে ইসতিফতাহ তথা ছানা পাঠ করেন নি। (৩) তাকবীরে তাহরীমা উচ্চারণ করেন নি এবং (৪) দ্বিতীয় রাকআত প্রথম রাকআতের ন্যায় দীর্ঘ করেন নি।
তিনি যখন তাশাহুদে বসতেন, তখন বাম হাত বাম রানের উপর এবং ডান হাত ডান রানের উপর রাখতেন। শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করতেন। উহাকে সম্পূর্ণ খাড়া করে রাখতেন না এবং সম্পূর্ণরূপে সোজা করেও রাখতেন না; বরং সামান্য পরিমাণ বাঁকা করে রাখতেন এবং নাড়াতেন। কনিষ্ঠা এবং অনামিকা অঙ্গুলিকে মুষ্ঠিবদ্ধ করে ও মধ্যমা অঙ্গুলিকে বৃদ্ধাঙ্গুলির সাথে মিলিয়ে গোলাকার বানিয়ে শাহাদাত অঙ্গুলিকে উঠিয়ে রেখে দু’আ পড়তেন। চোখের দৃষ্টি শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে রাখতেন, বাম হাতের তালু বাম রানের উপর খোলা অবস্থায় রাখতেন এবং তা দিয়ে হাঁটুকে চেপে ধরতেন।
দুই সিজদার মাঝখানে বসার মত করেই তিনি (প্রথম) তাশাহুদে বসতেন। মুসলিম শরীফে আব্দুল্লাহ্ বিন যুবাইর (রাঃ) এর হাদীছে বসার ধরণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল (ﷺ) যখন সলাতে বসতেন তখন বাম পা-কে রান ও নলার মাঝখানে রাখতেন এবং ডান পা বিছিয়ে রাখতেন, তা মূলত শেষ তাশাহুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর ডান পা বিছিয়ে রাখার কথা উল্লেখ করেছেন এবং আবু হামীদ উহা খাড়া রাখার কথা উল্লেখ করেছেন। আসলে উভয় বর্ণনার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কেননা তিনি যেহেতু পায়ের উপর বসতেন না (বরং নিতম্বের উপর বসতেন) তাই ডান দিকে বাম পা বের করে দিতেন। সুতরাং ডান পা খাড়া ও বিছানোর মাঝামাঝি অবস্থায় থাকত। অথবা বলা যায় যে তিনি উভয়টি করতেন। কখনও ডান পা খাড়া রাখতেন আবার কখনও তা বিছিয়ে রাখতেন। পায়ের জন্য এটিই অধিক আরাম দায়ক। আল্লাহই ভাল জানেন।
তিনি এভাবেই সব সময় তাশাহুদে বসতেন। তাশাহুদে তাঁর সাহাবীদেরকে এই দু’আ পড়ার শিক্ষা দিতেন-
التَّحِيَّاتُ لِلهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
‘‘সব রকম মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদতসমূহ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য। হে নাবী! আপনার প্রতি আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের উপর এবং আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রসূল’’।[2]
তিনি খুব দ্রুত এই তাশাহুদ শেষ করতেন। মনে হত তিনি যেন গরম পাথরের উপর বসে আছেন (তাই তিনি দ্রুত উঠে যাচ্ছেন)। এই বৈঠকে নাবী (ﷺ) এবং তাঁর পরিবারের উপর দুরূদ পড়েছেন মর্মে কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।[3] কবরের শাস্তি হতে, জাহান্নামের আযাব হতে, জীবন ও মরণ কালীন ফিতনা হতে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা হতে আশ্রয়ও প্রার্থনা করতেন না। যারা প্রথম তাশাহহুদে উক্ত দু’আ পাঠ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন, তারা শেষ তাশাহুদের ক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীসগুলো থেকেই তা বুঝেছেন।
অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে রানের উপর হাত রেখে পা-দ্বয়ের অগ্রভাগে এবং হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে যেতেন।
সহীহ মুসলিম এবং বুখারীর কতিপয় বর্ণনায় এসেছে যে, প্রথম তাশাহুদ থেকে উঠার সময়ও রাফউল ইয়াদাইন করতেন।[4] দাঁড়িয়ে তিনি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। শেষ দুই রাকআতে তিনি সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য কিছু পড়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
সলাত আদায়কালে তিনি এদিক ওদিক তাকাতেন না। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন- এটি হচ্ছে চুরি। এর মাধ্যমে শয়তান বান্দার সলাত থেকে কিছু অংশ চুরি করে নেয়। নাবী (ﷺ) কখনও বিশেষ প্রয়োজনে এমনটি করতেন। তবে এটি তাঁর সব সময়ের অভ্যাস ছিলনা। একবার তিনি একটি গোত্রের দিকে মুজাহিদ বাহিনী পাঠিয়ে সেদিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। আল্লাহই ভাল জানেন।
[2]. বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ সিফাতুস্ সালাত, বুখারী, তাও. হা/৮৩১, ইফা. হা/৭৯৩, মুসলিম, হাএ. হা/৭৮৩, ইফা. হা/৭৮০, সহীহ তিরমিযী, মাপ্র. হা/২৮৯, নাসায়ী,হা/১১৬২, আবু দাউদ,আলএ.হা/৯৬৮, মিশকাত, মাশা. হা/৯০৯, ৩১৪৯
[3]. ইমাম আবু আওয়ানা ও ইমাম নাসাঈ রহঃ) দুরূদ পড়ার হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ইমাম আলবানী রহঃ) তা গ্রহণ করেছেন।
[4]. সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ দুই রাকআত পড়ে উঠার সময় রাফউল ইয়াদাইন করা, তাও. হা/৭৩৯, আবু দাউদ,আলএ.হা/৭৪১, সহীহ ইবনে মাজাহ, মাশা ও তাও. হা/১০৬১, মিশকাত,হাএ. ও মাশা. হা/৭৯৭,