লগইন করুন
অধিকাংশ সময় তিনি প্রত্যেক সলাতের জন্য নতুন করে ওযূ করতেন। কখনও এক ওযূ দিয়ে একাধিক সলাত পড়তেন। তিনি এক মুদ (আনুমানিক ৫০০ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ করতেন। কখনও তার চেয়ে কম বা বেশী পরিমাণ পানি ব্যবহার করতেন। মূলতঃ তিনি ওযূতে সামান্য পানি খরচ করতেন এবং উম্মাতকে ওযূর মধ্যে পানি অপচয় করতে নিষেধ করতেন।
সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি কখনও ওযূর অঙ্গগুলো একবার করে ধৌত করেছেন। আবার কখনও দুইবার করে আবার কখনও তিনবার করেও ধৌত করেছেন।
আরও প্রমাণিত আছে যে, তিনি কোন কোন অঙ্গ দুইবার আবার কোনটি তিনবার ধৌত করেছেন। কখনও তিনি এক অঞ্জলি পানি দিয়ে কুলি করতেন এবং নাক পরিষ্কার করতেন। কখনও দুই অঞ্জলি দিয়ে আবার কখনও তিন অঞ্জলি দিয়েও অনুরূপ করতেন। এক অঞ্জলি পানি দিয়ে তা করার সময় অর্ধেক মুখে দিতেন আর বাকী অর্ধেক নাকে প্রবেশ করাতেন। দুই বা তিন অঞ্জলি পানির মাধ্যমে কুলি করলে এবং নাক ঝাড়লেও প্রত্যেক অঞ্জলির একাংশ মুখে এবং অন্যাংশ নাকে দেয়াও সম্ভব। আর আলাদাভাবে মুখে পানি দিয়ে কুলি করা এবং তারপর আরেক অঞ্জলি পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করাও বৈধ। তিনি ডান হাতের অঞ্জলি থেকে নাকে পানি প্রবেশ করাতেন এবং বাম হাত দিয়ে নাক ঝাড়তেন ও পরিষ্কার করতেন।
ওযূ করার সময় তিনি পূর্ণ মাথা মাসাহ করতেন। দুই হাত দিয়ে মাথার প্রথম থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত মাসাহ করতেন। মাথার শুধু একাংশ মাসাহ করে অন্যান্য অংশ ছেড়ে দেয়ার কথা সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। তবে তাঁর মাথায় যখন পাগড়ি থাকতো, তখন তিনি মাথার প্রথমাংশ মাসাহ করতেন আর পাগড়ির উপর দিয়ে মাসাহ পূর্ণ করতেন।
কুলি করা এবং নাকে পানি দেয়া ব্যতীত তিনি কখনই ওযূ সমাপ্ত করেন নি। প্রত্যেক ওযূতেই তিনি তা করতেন। জীবনে একবারও এই কাজ দুইটিতে ত্রুটি করেছেন বলে প্রমাণিত হয় নি।
ওযূর মধ্যে কুরআনে বর্ণিত নিয়মে ধারাবাহিকভাবে অঙ্গগুলোকে ধৌত করতেন। অর্থাৎ প্রথমে মুখ, তারপর হাত, অতঃপর মাথা মাসাহ এবং সবশেষে পা ধৌত করতেন। অনুরূপভাবে তিনি অঙ্গগুলো পরপর অর্থাৎ একটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই অন্যটি ধৌত করতেন। কখনও তিনি এর ব্যতিক্রম করেন নি। পায়ে চামড়ার বা সাধারণ মোজা না থাকলে তিনি তা ধৌত করতেন। মাথা মাসাহ করার সময় তিনি কানের ভিতর ও বাহিরের অংশও মাসাহ করতেন। নতুন করে পানি নিয়ে কান মাসাহ করার কথা সহীহ লিষ্টসূত্রে প্রমাণিত নয়। ঘাড় মাসাহ করার ক্ষেত্রে কোন সহীহ হাদীস নেই। ওযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার দু’আর ক্ষেত্রে যতগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোই বানোয়াট। ওযূর শুরুতে নাবী (ﷺ) শুধু বিসমিল্লাহ্ বলতেন। আর শেষে এই দু’আ পাঠ করতেন।
اَشْهَدُ اَنْ لَّا إِلٰهَ اِلَّا ا للهُ وَحْدَه” لَا شَرِيْكَ لَه” وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًاعَبْدُه” وَ رَسُوْلُه”- اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মা‘বূদ নাই তিনি একক ও শরীক বিহীন। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রসূল। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর।[1] সুনানে নাসাঈ এ ব্যাপারে আরেকটি দু’আ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
ওযূর শুরুতে তিনি কখনই نَوَيْتُ বলেন নি অর্থাৎ ওযূর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করেন নি। তাঁর কোন সাহাবী থেকেও এমনটি করার কথা প্রমাণিত নেই। তিনবারের বেশী কখনই তিনি ওযূর অঙ্গগুলো ধৌত করেন নি। অনুরূপ কনুই এবং টাখনুর সীমানা ছেড়ে উপরের দিকে পানি ঢেলেছেন বলে প্রমাণিত হয় নি। ওযূ করার পর কাপড় দিয়ে ভিজা অঙ্গগুলো মুছে ফেলাও তাঁর অভ্যাস ছিলনা। কখনও কখনও তিনি দাঁড়ি খেলাল করতেন, তবে সব সময় তিনি তা করতেন না। আঙ্গুল খেলালের ক্ষেত্রেও অনুরূপ করতেন। সর্বদা তা করতেন না। হাতে পরিহিত আংটিকে নাড়ানোর বিষয়ে একটি যঈফ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।