লগইন করুন
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এক:
আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন সকল মুসলিম বন্দীর আশু মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন, নিজ করুণায় তাদেরকে ধৈর্য্য-শক্তি ও সান্ত্বনা দান করেন, তাদের অন্তরগুলো আত্মপ্রশান্তি ও একীন দিয়ে ভরপুর করে দেন এবং মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথের দিশা দেন যে পথে তাঁর প্রিয়ভাজনগণ (আউলিয়াগণ) সম্মানিত হবেন এবং তাঁর শত্রুরা লাঞ্ছিত হবে।
দুই:
আলেমগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, আটক ও কারাবন্দী ব্যক্তি সালাত ও সিয়াম এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবে না। বরং তাদের উপর ফরজ হল সময় নির্ধারণে যথাসাধ্য চেষ্টা করা। যদি নামাযের সময় শুরু হয়েছে মর্মে প্রবল ধারণা হয়, তবে তিনি সালাত আদায় করে নিবেন। অনুরূপভাবে রমজান মাস শুরু হয়েছে মর্মে তার প্রবল ধারণা হলে তিনি রোজা পালন করবেন। খাবারের সময়গুলো খেয়াল করে অথবা কারাগারের লোকদের জিজ্ঞেস করে তিনি সময় নির্ধারণ করতে পারেন। তিনি যদি সালাত ও সিয়ামের সঠিক সময় জানার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন তবে তার ইবাদত সহিহ হবে ও এর মাধ্যমে তিনি দায়িত্ব মুক্ত হবেন; যদিও পরবর্তীতে তার কাছে প্রকাশ পায় যে, তার ইবাদত যথাসময়ে আদায় হয়েছে অথবা যথাসময়ের পরে আদায় হয়েছে অথবা কোন কিছু প্রকাশ না হোক। এর দলিল হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার বাণী:
( لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْساً إِلاَّ وُسْعَهَا ) [2 البقرة : 286]
“আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।” [ ২ আল-বাক্বারাহ : ২৮৬ ]
এবং আল্লাহ তাআলার বাণী:
( لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْساً إِلَّا مَا آتَاهَا ) [65 الطلاق : 7]
“আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ সামর্থ্য দান করেছেন এর অতিরিক্ত কোনো ভার তিনি তার উপর আরোপ করেন না।” [৬৫ সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব : ৭]
তবে পরে যদি জানতে পারেন যে, তিনি ঈদের দিনগুলোতে রোজা ছিলেন তবে সে রোজাগুলো কাযা করা তার উপর ওয়াজিব। কারণ ঈদের দিনের রোজা সহিহ নয়। যদি পরবর্তীতে তিনি নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন যে, তিনি সঠিক সময়ের পূর্বে সালাত বা সিয়াম পালন করেছেন তাহলে সে নামায পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব।
আল- মূসূআ আল-ফিক্বহিয়্যাহ (২৮/৮৪-৮৫) গ্রন্থে রয়েছে:
“অধিকাংশ ফিকাহ-গবেষকের মতে, যার কাছে মাসের হিসাব সুস্পষ্ট নয় তিনি রমজানের রোজা পালনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবেন না। বরং রোজা পালন তার দায়িত্বে ফরজ হিসেবে থাকবে। যেহেতু তার উপর শরয়ি দায়িত্ব ন্যস্ত এবং তিনি শরয়ি নির্দেশের আওতাভুক্ত। তিনি যদি নিজের বিচার-বুদ্ধি খাটিয়ে রমজান মাস নির্ধারণে যথাসাধ্য চেষ্টা করে রোজা রাখা শুরু করেন এক্ষেত্রে তার পাঁচটি অবস্থা হতে পারে:
প্রথম অবস্থা:
অস্পষ্টতা অব্যাহত থাকা এবং সঠিক সময় তার নিকট পরিষ্ফুট না হওয়া। তার রোজা কি রমজান মাসে পালিত হয়েছে, নাকি রমজানের আগে পালিত হয়েছে, নাকি পরে পালিত হয়েছে এর কিছুই জানতে না পারা – এ ক্ষেত্রে তার পালিত রোজার মাধ্যমে তার দায়িত্ব খালাস হবে, তাকে পুনরায় রোজা রাখতে হবে না। যেহেতু তিনি সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেছেন। অতএব, এর চেয়ে বেশি কিছু তার দায়িত্বে বর্তাবে না।
দ্বিতীয় অবস্থা :
বন্দি ব্যক্তির রোজা রমজান মাসে পালিত হওয়া- এই রোজার মাধ্যমে তার দায়িত্ব খালাস হবে।
তৃতীয় অবস্থা :
বন্দি ব্যক্তির রোজা পালন রমজানের পরে পালিত হওয়া- অধিকাংশ ফিক্বাহ বিশেষজ্ঞগণের মতে এই রোজা পালনের মাধ্যমে তার দায়িত্ব খালাস হবে।
চতুর্থ অবস্থা:
এর দু’টি দিক হতে পারে:
প্রথম দিক: তার রোজা রমজানের পূর্বে পালিত হওয়া এবং রমজান শুরু হওয়ার আগে তিনি তা জানতে পারা। এক্ষেত্রে রমজান মাস শুরু হলে তাকে রমজানের রোজা পালন করতে হবে এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ নির্ধারিত সময়ে তা পালন করার সামর্থ্য তার রয়েছে।
দ্বিতীয় দিক: তার রোজা রমজানের পূর্বে পালিত হওয়া এবং রমজান শেষ হওয়ার আগে তিনি তা জানতে না পারা। এই রোজা পালন তার দায়িত্ব খালাসের জন্য যথেষ্ট হবে কিনা এই ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে-
প্রথম মত: এই রোজা পালন তার দায়িত্ব খালাসের জন্য যথেষ্ট হবে না। বরং এর কাযা পালন করা তার উপর ওয়াজিব। এটি মালেকী, হাম্বলী মাযহাবের অভিমত এবং শাফেয়ী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য মতও এটি।
দ্বিতীয় মত: এই রোজা পালন রমজানের রোজা হিসেবে তার দায়িত্ব খালাসের জন্য যথেষ্ট হবে। যেমনিভাবে আরাফাতের দিন নির্ধারণের ব্যাপারে যদি সন্দেহ দেখা দেয় এবং হজ্জযাত্রীগণ আরাফার দিনের পূর্বেই আরাফাতে অবস্থান নেন তবে তাদের হজ্জ শুদ্ধ হবে – এটি শাফেয়ি মাযহাবের কিছু কিছু আলেমের অভিমত।
পঞ্চম অবস্থা:
“তার কিছু রোযা রমজান মাসে এবং কিছু রোজা রমজানের পরে পালিত হওয়া। যে রোজাগুলো রমজান মাসে অথবা রমজানের পরে পালিত হয়েছে সেগুলো তার দায়িত্ব খালাসের জন্য যথেষ্ট হবে। আর যে রোজাগুলো রমজান মাসের আগে পালিত হয়েছে সেগুলো তার দায়িত্ব খালাসের জন্য যথেষ্ট জন্য হবে না।” সমাপ্ত
দেখুন- আল-মাজমূ (৩/৭২-৭৩), আল-মুগনী (৩/৯৬)
আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।