লগইন করুন
উত্তর: হে প্রশ্নকর্তা! আপনি জেনে রাখুন এবং যারা এ প্রোগ্রাম[1] বা অনুষ্ঠান শুনছেন তারা সকলেই জেনে রাখবেন যে, প্রত্যেক মুমিনের জন্য শরী‘য়তের বিধিবিধানের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান কারণ হল আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূলের বাণী বা বক্তব্য; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ ﴾ [الاحزاب: ٣٦]
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ের ফয়সালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোন (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়।”[2]
সুতরাং যে কেউ আমাদেরকে কোনো বস্তু ওয়াজিবকরণ অথবা নিষিদ্ধকরণের ব্যাপারে আল-কুরআন ও আস-সুন্নাহ’র হিকমত ও তাৎপর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, তার উত্তরে আমরা বলব: এ ব্যাপারে অন্যতম প্রধান কারণ হল আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূলের বাণী বা বক্তব্য; আর এ কারণটিই প্রত্যেক মুমিনের জন্য যথেষ্ট; আর এ জন্যই যখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞেস করা হল, ঋতুবর্তী নারীর কি অবস্থা— সে সাওমের কাযা আদায় করবে, অথচ সালাতের কাযা আদায় করবে না? তখন জবাবে তিনি বলেন:
« كَانَ يُصِيبُنَا ذَلِكَ فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلاَ نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ » . ( متفق عليه ) .
“আমরা এ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম; তখন আমাদেরকে সাওমের কাযা আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; সালাতের কাযা আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়নি।”[3] কেননা, আল্লাহর কিতাব অথবা তাঁর রাসূলের সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত ‘নস’ তথা বক্তব্য প্রত্যেক মুমিনের জন্য শরী‘য়ত সাব্যস্ত হওয়ার আবশ্যকীয় ‘ইল্লাত বা কারণ; কিন্তু জনগণ কর্তৃক আল্লাহর বিধানসমূহের হিকমত ও তাৎপর্য অনুসন্ধান করাটা দোষের নয়; কারণ, এটা তার আস্থা ও বিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়, তাছাড়া এটা ইসলামী শরী‘য়তের মর্যাদা বর্ণনা করে, যেহেতু বিধিবিধানসমূহ তার হেতু বা যৌক্তিকতার সাথে সংযুক্ত; আর তাছাড়া এর দ্বারা কিয়াসের ক্ষেত্র তৈরি হয়, যখন শরী‘য়তের বক্তব্য দ্বারা নির্ধারিত এ বিধানটির ‘ইল্লত বা কারণ অপর কোনো বিষয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, যার ব্যাপারে শরী‘য়তের কোনো ‘নস’ বা স্পষ্ট বক্তব্য নেই। সুতরাং শর‘য়ী হিকমত ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানার এ তিনটি উপকারিতা রয়েছে।
এগুলোর পর ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে আমরা বলতে চাই যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে স্বর্ণ পরিধান করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে পুরুষদের জন্য, নারীদের জন্য নয়; আর এর কারণ হল, স্বর্ণ হল সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের বস্তু, যার দ্বারা মানুষ সুসজ্জিত হয় এবং সুন্দর রূপ ধারণ করে; সুতরাং এটা হল সৌন্দর্য ও অলঙ্কার; আর পুরুষের উদ্দেশ্য এসব বিষয় নয়, অর্থাৎ সেই পুরুষ (পরিপূর্ণ) মানুষ নয়, যে অন্যের দ্বারা পরিপূর্ণতা অর্জন করে, বরং পুরুষ সেই, যে নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ; কেননা, তার মধ্যে পুরুষত্ব আছে; তাছাড়া অপর ব্যক্তিকে তার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সুন্দর সাজ গ্রহণ করা পুরুষের কোনো প্রয়োজন নেই; তবে নারীর বিষয়টি তার বিপরীত; কেননা, নারী অসম্পূর্ণ, তার সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা বিধানের প্রয়োজন রয়েছে; তাছাড়া সর্বোচ্চ মানের অলঙ্কার দ্বারা তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে, এমনকি তার ও তার স্বামীর মাঝে বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতার জন্য এ ধরনের সুসজ্জিত হওয়ার বিষয়টি দাবি করে; সুতরাং এ কারণেই নারীর জন্য স্বর্ণের অলঙ্কার পরিধান করার বিষয়টি বৈধ করে দেওয়া হয়েছে, পুরুষের জন্য নয়; আল্লাহ তা‘আলা নারীর গুণ বা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন:
﴿ أَوَ مَن يُنَشَّؤُاْ فِي ٱلۡحِلۡيَةِ وَهُوَ فِي ٱلۡخِصَامِ غَيۡرُ مُبِينٖ ١٨ ﴾ [الزخرف: ١٨]
“আর যে অলঙ্কারে লালিত-পালিত হয় এবং সে বিতর্ককালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ, সে কি? (আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত হবে?)।”[4] আর এরই মাধ্যমে পুরুষদের উপর স্বর্ণ পরিধান করা নিষিদ্ধকরণের মধ্যকার শর‘য়ী হিকমত ও তাৎপর্য স্পষ্ট হয়ে যায়। তাই এ প্রসঙ্গে আমি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি ঐসব পুরুষদের নসিহত করার জন্য, যারা স্বর্ণের অলঙ্কার পরিধান করে বিপথগামী হয়েছে; কেননা, তারা এর দ্বারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্য হয়ে গেছে এবং তারা নিজেদেরকে নারীদের সাথে সম্পৃক্ত করেছে; আর তারা অলঙ্কার হিসেবে পরিধানের জন্য আগুনের জ্বলন্ত অঙ্গার তাদের হাতে তুলে নিয়েছে, যা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। সুতরাং তাদের জন্য জরুরি হল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট তাওবা করা; আর যদি তারা শরী‘য়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে রৌপ্যের অলঙ্কার পরিধান করতে চায়, তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই; অনুরূপভাবে স্বর্ণ ব্যতীত অন্যান্য খনিজ পদার্থ থেকে তৈরি আংটি পরিধান করতেও তাদের জন্য দোষের কিছু হবে না, যদি তা অপচয় বা ফিতনার পর্যায়ে না পৌঁছায়।
[2] সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬
[3] বুখারী ও মুসলিম (হাদিস নং- ৭৮৯)।
[4] সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ১৮