লগইন করুন
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এক:
আপনি আমাদের সাথে যেমন স্পষ্টবাদী হয়েছেন আমরাও আপনার সাথে স্পষ্টবাদী হব। আপনি কি আমাদের কাছে এজন্য মেইল করেছেন যে, আমরা আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিব?! আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার জন্য কাউকে অনুমতি দেয়ার অধিকার তো আমাদের নেই। নাকি আপনি চাচ্ছেন যে, আমরা আপনাকে ব্যভিচার বৈধ বলে ফতোয়া দিব?! কোন মুসলমানের পক্ষে এ ফতোয়া দেয়া সম্ভব নয়। যেনা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই যেনার শাস্তি বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপে হত্যা নির্ধারণ করেছেন এবং এ গুনাহর সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিধান আরোপ করেছেন। যেমন- যেনাকারী তওবা না করা পর্যন্ত তাকে বিয়ে করতে দেয়া হবে না। এ গুনার কারণে আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে শাস্তির কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন: আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের একটি চুল্লিতে ব্যভিচারী নর-নারীকে উলঙ্গ অবস্থায় একত্রিত করবেন। সেখানে জাহান্নামের আগুন তাদেরকে পোড়ানো হবে। তাদের বিকট শব্দ শুনা যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি যেনা করতে চায় আমাদের কাছে তার জন্য অনুমতি নেই। আমাদের কাছে যেনা বৈধ মর্মে কোন ফতোয়া নেই।
দুই:
আগেই বলেছি আমরা আপনার সাথে স্পষ্টবাদী হব, আপনি যেমন আমাদের সাথে স্পষ্টবাদী হয়েছেন। ধরুন, আপনি যে কঠিন ও কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন –আল্লাহ না করুন- আপনার বোন বা মা যদি সে অবস্থার মধ্যে পড়ে এবং আপনি যা করতে চাচ্ছেন তারাও তা করতে চায় তখন তাদের এই চাওয়ার ব্যাপারে আপনার মতামত কি হবে?! আমরা আপনার উত্তর জানি; সুতরাং উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু এ ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি- আপনি যা করতে চাচ্ছেন সেটা কত বড় জঘন্য।
আচ্ছা এ প্রসঙ্গ বাদ দিন; অন্য প্রসঙ্গে আসুন। এ বিশ্বে এমন কত যুবক আছে যারা যেনা করতে চাচ্ছে। হতে পারে তাদের অনেকে – আপনার মত- সম্ভ্রান্ত। হতে পারে সেও এমন কঠিন ও কষ্টকর অবস্থা সইতে পারছে না। সেও যেনা করতে চাচ্ছে এবং সে যে মহিলার সাথে যেনা করতে চাচ্ছে – আল্লাহ না করুন- সে আপনার বোন অথবা আপনার মা। আপনি তখন কি বলবেন?! আমরা আপনার উত্তর জানি; সুতরাং উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। জেনে রাখুন, আমরা যদি আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিই এর অর্থ হলো আমরা আপনার বোন ও মায়ের জন্যেও যেনা করার অনুমতি দিলাম। আমরা যদি আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিই এর অর্থ হলো আমরা মানুষকে আপনার বোন ও মায়ের সাথে যেনা করার অনুমতি দিলাম। ইসলামের মত পবিত্র শরিয়তে যা হওয়া অসম্ভব। আপনার বোন ও মায়ের ইজ্জত ইসলামী শরিয়তের মাধ্যমে সুরক্ষিত। আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবিধানের মাধ্যমে সংরক্ষিত। যে ব্যক্তি এ ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করবে সে দুনিয়া ও আখেরাতে এর সাজা পাবে। আপনি দেখলেন তো ইসলামী শরিয়া কিভাবে আপনার পরিবারের ইজ্জত-আব্রুর হেফাযত নিশ্চিত করেছে। সুতরাং আপনি কিভাবে প্রত্যাশা করেন যে, আমরা আপনাকে অন্য নারীদের ইজ্জত কলঙ্কিত করার অনুমতি দিব এবং বলব, ঠিক আছে যেনা করুন; অসুবিধা নেই!!
আমরা আপনার সামনে যে উদাহরণটি তুলে ধরলাম সেটি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সর্বোত্তম ব্যক্তি, যিনি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি জানেন, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেন। যখন এক যুবক এসে তাঁর কাছে যেনা করার অনুমতি চাইল তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি কি তোমরা মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে? তুমি সেটা তোমার বোনের জন্য পছন্দ করবে? আমরা আশা করব, আপনি সচেতনভাবে অনুধাবন করবেন যে, আমরা যে উদাহরণটি পেশ করেছি এর মাধ্যমে শুধু আপনি যা করতে চাচ্ছেন সে বিষয়টির কদর্যতা তুলে ধরা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কারণ ইচ্ছা হলেই মানুষের ইজ্জত হরণ করা বৈধ নয়। বরং তা পবিত্র শরিয়তের মাধ্যমে সংরক্ষিত। পূর্বোক্ত হাদিসটির পরিপূর্ণ ভাষ্য ও এ হাদিস বিষয়ক আরো কিছু সুন্দর কথা 52467 নং প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিন:
প্রিয় ভাই, আপনি কি ভাবছেন যেনা করার মাধ্যমে যৌন উপভোগ করে আপনি প্রশান্তি পাবেন – আল্লাহ আপনাকে এ গুনাহ দূরে রাখুন ও পবিত্র রাখুন?! যদি আপনি এমনটি ভেবে থাকেন তাহলে মহা ভুলের মধ্যে আছেন। বরং যেনাতে লিপ্ত হওয়া মানে দেহ, মন ও দ্বীনদারির উপর অতি তিক্ত কিছু পরিণামের দুয়ার খোলা। যেনা হচ্ছে- দ্বীনদারির হরাস, তাকওয়ার বিলুপ্তি, ব্যক্তিত্বের বিচ্যুতি, আত্মসম্মানের স্খলন, খেয়ানত, লজ্জাশীলতার হরাস, আল্লাহর নজরদারির অনুভূতিহীনতা, হারামের ব্যাপারে বেপরোয়া ইত্যাদি মন্দের মূল। যেনা অবধারিত করে দেয়: আল্লাহর অসন্তুষ্টি, চেহারায় কালি পড়া ও নিষ্প্রভ হওয়া, অন্তর মরে যাওয়া ও নূর চলে যাওয়া, হৃদয় সংকীর্ণ হওয়া ইত্যাদি। আমরা 20983 নং প্রশ্নের জবাবে এ পরিণামগুলো পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরেছি। সে উত্তরটি পড়তে পারেন। ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) এর ‘রওদাতুল মুহিব্বীন’ কিতাব থেকে আমরা এ বিষয়গুলো উদ্ধৃত করেছি।
চার:
প্রিয় ভাই, আসুন আপনাকে জিজ্ঞেস করি- আপনি নামায রোজা কেন করেন? যদি তা এ কারণে করে থাকেন- এটাই আপনার প্রতি ধারণা- যে, আল্লাহ আপনার উপর নামায পড়া ও রোজা রাখা ফরজ করেছেন এবং এ দুটো বর্জন করা হারাম করেছেন। তাহলে আমরা আপনাকে বলব, অনুরূপভাবে আল্লাহ আপনার উপর আপনার যৌনাঙ্গ হেফাযত করাকে ফরজ করেছেন এবং যেনা করা হারাম করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করি না যে, আপনি বিশ্বাস করেন- আল্লাহ আপনাকে নামায আদায়কালে দেখতে পাচ্ছেন। এ কারণে আপনি প্রশান্তচিত্তে বিনম্রভাবে নামায আদায় করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে নামায পড়েন। ঠিক তেমনি আপনি যখন যেনা করবেন তখনও তো আল্লাহ আপনাকে দেখবেন! যেহেতু আপনার ঈমান আপনাকে দিয়ে সুন্দরভাবে নামায আদায় করায় তাই আমাদের ধারণা আপনার সে ঈমান আপনাকে যেনা থেকেও বিরত রাখবে। কারণ আমরা আপনার প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করি। আমরা মনে করি, আপনি জানেন যে, এটি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা নয়; অথচ আল্লাহ আপনাকে ইসলামের নেয়ামত দান করেছেন। আপনাকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা দিয়েছেন। এ মহান নেয়ামতগুলোর শুকরিয়া এভাবে করতে হয় না।
পাঁচ:
আপনার হয়তো স্মরণে নেই যে, আপনি যে কঠিন ও কষ্টকর অবস্থার মধ্যে আছেন যদি এতে সবর করেন তাহলে আপনি সওয়াব পাবেন। মুমিনেরা তো মুসিবতের সময় ধৈর্য ধারণ করে থাকে এবং আনন্দের সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে থাকে। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এটা করে না। মুসিবতে ধৈর্য রাখে, আনন্দকালে শুকরিয়া আদায় করে। যেদিন আপনি আপনার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবেন সেদিন আপনি আপনার আমলনামায় এর সর্বোত্তম পুরস্কার পাবেন, ইনশাআল্লাহ। আপনি 71236 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়তে পারেন। সেখানে বিপদ মুসিবতে মুমিনের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
ছয়:
আপনার হয়তো স্মরণে নেই যে, আপনার দুআ বিফলে যায়নি। আপনি যে তাগিদ দিয়ে বলছেন আপনার দুআ কবুল হয়নি এটা আপনার ভুল। দুআ কবুলের তিনটি অবস্থা হতে পারে। এক. আপনি যা চেয়েছেন সাথে সাথে আল্লাহ সেটা দিয়ে দেয়া। দুই. দুআ অনুপাতে আপনার বালা-মুসিবত দূর করে দেয়া। তিন. আপনাকে আখেরাতে সওয়াব দেয়া, আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন আপনি তা দেখবেন। কিন্তু আপনি ভেবেছেন দুআ কবুল হওয়া মানে- আপনি যা তলব করেছেন শুধু সেটা দিয়ে দেয়া। তাই আপনি বলেছেন, আল্লাহ আপনার দুআ কবুল করেননি। নিঃসন্দেহে এটি আপনার ভুল ধারণা। বান্দা কর্তৃক আল্লাহর কাছে দুআ করাটা একটি মহান ইবাদত। দুআর মাধ্যমে বান্দা স্রষ্টার কাছে তার দ্বীনতা, হীনতা তুলে ধরে। শয়তান সর্বদা চেষ্টা করে বান্দাকে দুআ থেকে বিমুখ রাখতে। তাই সে বান্দার অন্তরে অবিলম্বে তার মাকছাদ পূর্ণ হওয়ার বাসনা ঢুকিয়ে দেয়। ফলে সে বিরক্ত হয়ে দুআ ছেড়ে দেয়।
ইবনে বাত্তাল (রহঃ) বলেন: জনৈক আলেম বলেন: বান্দা তখনি দুআর প্রতিদান অবিলম্বে পেতে চায় যখন দুআর উদ্দেশ্য হয়: প্রার্থনার মাকছাদ অর্জন। ফলে মাকছাদ অর্জিত না হলে দুআ চালিয়ে যাওয়াটা তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে বান্দার দুআ করার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ: আল্লাহকে ডাকা, তার কাছে চাওয়া, সর্বদা নিজের দৈন্যতা প্রকাশ করা, কখনো দাসত্বের বৈশিষ্ট্য ও আলামত পরিত্যাগ না করা, আদেশ ও নিষেধের অনুগত থাকা।[শারহ সহিহ মুসলিম (১০/১০০)]
দুআ কবুলের শর্তগুলো জানতে 13506 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
দুআ কবুল হওয়ার প্রতিবন্ধকতাগুলো জানতে 5113 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
দুআ করার আদব বা শিষ্টাচারগুলো জানতে 36902 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
দুআ কবুল হওয়ার সময় ও স্থানগুলো জানতে 22438 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
সাত:
এই বিস্তারিত আলোচনার পর আমরা যেন আপনাকে বলতে শুনছি, “আমি যেনা করতে চাই না”। আমরা আপনার ব্যাপারে এই ধারণাই পোষণ করি। প্রকৃতপক্ষে যেনা করার অনুমতির জন্য আপনি আমাদের কাছে ইমেইল করেননি। অথবা আমরা আপনাকে যেনা করা জায়েয ফতোয়া দিব সে উদ্দেশ্যে প্রশ্নটি পাঠাননি। যেহেতু আপনি জানেন যে, সেই অধিকার আমাদের নেই। যদি আপনি যেনা করতেই চাইতেন তাহলে আমাদেরকে ইমেইল না করেই যেনা করে ফেলতেন। কারণ আমরা তো আর আপনাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে পারছি না বা আপনি আমাদের কর্তৃত্বাধীনও নন যে, আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিবেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, আপনি যে মুসিবতের মধ্যে আছেন আপনি আপনার ভাইদের কাছে সে ব্যাপারে অভিযোগ করতে চেয়েছেন এবং আপনি চেয়েছেন আপনার ভাইয়েরা যেন আপনাকে এমন কিছু নসীহত, দিকনির্দেশনা ও উপদেশ দেয় যাতে আপনি যেনা না করেন। আমরা সে দায়িত্ব নিয়ে আপনার পাশে দাঁড়ালাম। দেরীতে বিয়ের যে পরীক্ষার মধ্যে আপনি আছেন এ অবস্থায় আমরা আপনাকে ধৈর্য রাখার উপদেশ দিচ্ছি। এ দীর্ঘ বছর ধরে দ্বীনদারি ও আত্মসম্মান হেফাযত করতে পারায় আমরা আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি আপনি যদি আপনার রবের সাহায্য চান তাহলে আপনি এর চেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও আপনার দ্বীনদারি ও আত্মসম্মান রক্ষা করতে পারবেন।
আমরা আপনাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং সৎ পাত্রী খুঁজে পেতে আরো জোর প্রচেষ্টা চালাবার পরামর্শ দিচ্ছি। নেক আমলের মাধ্যমে আপনার রবের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন ঈমানকে আপনার কাছে প্রিয় করে দেন, সুশোভিত করে দেন। কুফর, পাপ, অবাধ্যতাকে আপনার কাছে নিন্দনীয় করে দেন। আপনাকে সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমরা আশা করব আপনি 20161 নং ও 11472 নং প্রশ্নোত্তরদ্বয়ও পড়বেন।
আল্লাহই উত্তম তাওফিকদাতা।