লগইন করুন
১। আল্লাহ্ তা‘আলার যিকির করার সময়:
এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে সাধারণ যিকির, কুরআন তিলাওয়াত, কাবা শরীফ তওয়াফ ইত্যাদি। এসব কারণে ওযূ করা মুস্তাহাব।
عَنِ الْمُهَاجِرِ بْنِ قُنْفُذٍ، أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ يَبُولُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّى تَوَضَّأَ، ثُمَّ اعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ " إِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا عَلَى طُهْرٍ أَوْ قَالَ: عَلَى طَهَارَةٍ "
অর্থাৎ: আল-মুহাজির বিন কুনফুয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, একদা তিনি নাবী করীম (ﷺ) এর খেদমতে এমতাবস্থায় পৌঁছলেন যখন তিনি (স:) পেশাবরত ছিলেন। তিনি তাঁকে সালাম দেন। কিন্তু নাবী করীম (ﷺ) উযু না করা পর্যন্ত তার সালামের জবাব থেকে বিরত থাকেন। অতঃপর তিনি তার নিকট ওযর পেশ করে বলেন: আমি পবিত্র হওয়া বা পবিত্রতা অর্জন করা ব্যতীত অলস্নাহ তাআলার নাম স্মরণ করা অপছন্দ করি।[1]
যদিও এটি অবশ্যক নয়, কেননা সহীহ মুসলিমে (৪/৬৮) আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘‘মহানাবী (ﷺ) সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র যিকির করতেন’’।
২। ঘুমানোর সময়:
عَنِ البَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: " إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ، فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيْمَنِ، ثُمَّ قُلْ: اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ...
অর্থাৎ: বারা বিন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী (ﷺ) বলেছেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করে নিবে। তার পর ডান পার্শে শুয়ে বলবে হে আল্লাহ্! আমার জীবন আপনার কাছে সমর্পণ করলাম, ....।[2]
৩। জুনুবী ব্যক্তি যখন খাওয়া, পান করা, ঘুমানো কিংবা পুনরায় সহবাস করার ইচ্ছা করবে:
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا كَانَ جُنُبًا، فَأَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أَوْ يَنَامَ، تَوَضَّأَ وُضُوءَهُ لِلصَّلَاةِ»
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) যখন জুনাবী অবস্থায় খাওয়া বা ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন তখন সালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করতেন।[3]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ، ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُودَ، فَلْيَتَوَضَّأْ»
অর্থাৎ: আবূ সাঈদ (রাঃ) মহানাবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করে বলেন, তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি স্ত্রী সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করতে চায় তাহলে সে যেন সালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করে।[4]
৪। গোসল করার পূর্বে ওযূ করা:
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا اغْتَسَلَ مِنَ الْجَنَابَةِ يَبْدَأُ فَيَغْسِلُ يَدَيْهِ. ثُمَّ يُفْرِغُ بِيَمِينِهِ عَلَى شِمَالِهِ فَيَغْسِلُ فَرْجَهُ. ثُمَّ يَتَوَضَّأُ وُضُوءَهُ لِلصَّلَاةِ.
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন জানাবাতের গোসলের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতে ঢালতেন এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে নিতেন। অতঃপর সালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করতেন।[5]
৫। আগুনে স্পর্শ করা খাবার তথা পাকানো খাবার খেলে ওযূ করা:
মহানাবী (ﷺ) এর বাণী- «تَوَضَّئُوا مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ»
অর্থাৎ: ‘‘তোমরা আগুনে পাকানো খাবার খেলে ওযূ কর’’।[6] এখানে আদেশটি মুস্তাহাব অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা আমর বিন উমাইয়্যাহ আযযমারী এর হাদীসে রয়েছে-
عَمْرِو بْنِ أُمَيَّةَ، أَنَّ أَبَاهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ ﷺ «يَحْتَزُّ مِنْ كَتِفِ شَاةٍ، فَدُعِيَ إِلَى الصَّلاَةِ، فَأَلْقَى السِّكِّينَ، فَصَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ
অর্থাৎ: আমর বিন উমাইয়্যাহ আযযমারী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী করীম (ﷺ) কে একটি বকরীর কাঁধের গোশ্ত কেটে খেতে দেখলাম। এ সময় সালাতের জন্য ডাকা হল, তখন তিনি ছুরি ফেলে দিয়ে সালাত আদায় করলেন; কিন্তু ওযূ করলেন না।[7]
৬। প্রত্যেক সালাতের জন্য নতুন ভাবে ওযূ করা:
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَتَوَضَّأُ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ الْفَتْحِ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ وَصَلَّى الصَّلَوَاتِ بِوُضُوءٍ وَاحِدٍ
অর্থাৎ: হযরত বুবদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযূ করতেন। তবে মক্কা বিজয়ের দিন তিনি ওযূ করছেন ও দু’মোজার উপর মাসাহ করেছেন এবং এক ওযূ দ্বারাই কয়েক ওয়াক্ত সালাত আদায় করেছেন।[8]
৭। যে সমস্ত নাপাকীর কারণে ওযূ নষ্ট হয় তা সংঘটিত হওয়ার পর ওযূ করা:
যেমন: পূর্বোলেস্নখিত বিলাল (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানববী (ﷺ) জান্নাতে (বেলালের) জুতার আওয়াজ শুনে বলেছিলেন, কি কারণে তুমি আমার অগ্রগামি হয়েছ? তখন বেলাল বললেন,
يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا أَذَّنْتُ قَطُّ إِلَّا صَلَّيْتُ رَكْعَتَيْنِ، وَمَا أَصَابَنِي حَدَثٌ قَطُّ إِلَّا تَوَضَّأْتُ عِنْدَهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «بِهَذَا»
অর্থাৎ: হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! আমি যখনই আযান দিতাম তখনই দু‘রাকআত সালাত আদায় করতাম এবং যখনই আমার ওযূ ভঙ্গ হয়ে যেত, কখনই ওযূ করে নিতাম। তখন মহানাবী (ﷺ) বললেন, এ জন্যই।[9]
৭। বমি হওয়ার পর ওযূ করাঃ
عَنْ مَعْدَانَ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ: «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَاءَ، فَتَوَضَّأَ» ، فَلَقِيتُ ثَوْبَانَ فِي مَسْجِدِ دِمَشْقَ، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ: صَدَقَ، أَنَا صَبَبْتُ لَهُ وَضُوءَهُ،:
অর্থাৎ: মি’দান বিন আবূ ত্বলহা আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করে বলেন, রাসূল (ﷺ) বমি করলেন, ফলে তিনি ওযূ করলেন। মিদান বলেন, আমি দামেশকের মাসজিদে সাওবান (রা.) এর সাথে দেখা করে তাঁকে এ কথা বললাম। তিনি বললেন, আবূ দারদা (রাঃ) ঠিকই বলেছেন, এ সময় আমি তাঁর (রাসূল ﷺ) এর ওযূর পানি ঢেলেছিলাম।[10]
[2] সহীহ; বুখারী (২৪৭), মুসলিম (২৭১০) প্রভৃতি।
[3] সহীহ; বুখারী (২৮৮), মুসলিম (৩০৫) শব্দ গুলো তার, আবূ দাউদ (২২২), তিরমিযী (১১৮), নাসাঈ (১/১৩৮) প্রভৃতি।
[4] সহীহ; মুসলিম (৩/২১৭), আবূ দাউদ (২১৭), তিরমিযী (১৪১), নাসাঈ (১/৪২)।
[5] সহীহ; বুখারী (২৪৮), মুসলিম (৩১৬) প্রভৃতি।
[6] সহীহ; মুসলিম (৩৫১), আবূ দাউদ (১৯২), তিরমিযী (৭৯), নাসাঈ (১/১০৫), ইবনে মাজাহ (৪৮৫)।
[7] সহীহ; বুখারী (১/৫০), মুসলিম (৪/৪৫, নববী প্রণীত), ইবনে মাজাহ (৪৯০)।
[8] সহীহ; মুসলিম (২৭৭), আবূ দাউদ (১৭১), তিরমিযী (৬১), নাসাঈ (১/৮৯), ইবনে মাজাহ (৫১০)।
[9] এর সনদ সহীহ, তিরমিযী তার হাদীসে অযুসহ উল্লেখ করেছেন (৩৬৮৯),আবূ দাউদ (৩০৫৫), আহমাদ (২১৯৬২) শব্দগুলো তার, সহীহাইনে এটা বর্ণিত হয়েছে শাহেদের অংশ ছাড়া।
[10] সহীহ; তিরমিযী (৮৭), আবূ দাউদ (২৩৮১), সনদ সহীহ।