সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ওযূ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম
ওযূ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়ত শর্ত[1]

ওযূ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়তকে শর্ত করা হয়েছে। আর তা হলো: ওযূ করার জন্য অন্তরে দৃঢ় সংকল্প করা, যেন আল্লাহ্‌ ও রাসূলের (ﷺ) নির্দেশ বাসত্মবায়িত হয়। যেমন: সমস্ত উদ্দেশ্য মূলক ইবাদাতকে লক্ষ করে আল্লাহ্‌ বলেন:

﴿وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ﴾

অর্থাৎ: আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল­াহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে (সূরা বায়্যিনা-৫)।

রাসূল (ﷺ) বলেন:

إنما الأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ، وَلِامْرِئٍ مَا نَوَى

অর্থাৎ: প্রত্যেকটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই হবে যা সে নিয়ত করবে।[2]

এটা ইমাম মালিক শাফেঈ, আহমাদ, আবূ সাওর ও দাউদ এর অভিমত।[3]

অপর পক্ষে, ইমাম আবূ হানীফা এর মতে ওযূতে নিয়ত শর্ত নয়,[4] কারণ এটা যুক্তিগত ইবাদাত। এটা নিজেই উদ্দেশ্যমূলক ইবাদাত নয়। তা যেন অপবিত্রকে পবিত্র করার সাদৃশ্য রাখে।

অধিকাংশের মতামতটিই সঠিক। কেননা দলীল প্রমাণ করছে যে, প্রত্যেক ওযূতে সাওয়াব রয়েছে। আর সকলের ঐকমত্যে, নিয়ত ব্যতীত কোন সাওয়াব হয় না। তা এমন ইবাদাত যা শরীয়াত ছাড়া কল্পনা করা যায় না। সুতরাং ওযূতে নিয়ত শর্ত।[5]


নিয়তের স্থান হলো ক্বলব বা অন্তর:

শাইখুল ইসলাম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:[6] সকল ইবাদাতের ক্ষেত্রে মুসলিম ইমামদের ঐকমত্যে, নিয়ত করার স্থান হল ক্বলব বা অন্তর। এর স্থান জিহবা বা মুখ নয়।

যেমন: ত্বহারাত, সালাত, যাকাত, সিয়াম, হাজ্জ, দাস মুক্ত করা, জিহাদ করা প্রভৃতি। সুতরাং নিয়ত জোরে পাঠ করা শরীয়াতসম্মত নয় এবং তা বার বার পাঠ করা যাবে না। বরং তাকে এ ক্ষেত্রে সতর্ক করার পরও যদি এরূপ করে তাহলে তাকে ধমক দিয়ে শিক্ষা দেয়া উচিৎ। বিশেষ করে যখন সে এটা বার বার বলে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। জোরে উচ্চারণ করে নিয়তকারী ক্রটিকারী হিসেবে গণ্য হবে। যে ব্যক্তি এটাকে দ্বীন হিসেবে বিশ্বাস করবে এবং তা মুখে উচ্চারণ করে আল্লাহ্‌র ইবাদাত করবে, সে বিদ‘আত করবে। কেননা মহানাবী (ﷺ) এবং তার সাহাবাগণ কখনও এভাবে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করেন নি এবং এ ব্যাপারে তাদের পক্ষ থেকে কোন বর্ণনাও পাওয়া যায় না । যদি তা শরীয়াতের অন্তর্ভুক্ত হতো, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ্‌ তার রাসূলের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করিয়ে নিতেন। উপরন্তু নিয়ত উচ্চারণের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা আল্লাহ্‌ মানুষের মনের খবর জানেন।[7]


উপকারীতা:

(১) শাইখুল ইসলাম বলেন: সকল মুসলিম ইমামের ঐকমত্যে, যদি কেউ অন্তরে যা নিয়ত করেছে তার বিপরীত মুখে কিছু বলে, তাহলে যা নিয়ত করেছে সেটাই ধর্তব্য হবে। মুখে যা উচ্চারণ করেছে তা ধর্তব্য নয়। আর যদি কেউ মুখে উচ্চারণ করেছে কিন্তু অন্তরে নিয়ত করে নি, তাহলে তা ধর্তব্য নয়। কেননা নিয়তটা হলো সংকল্প ও দৃঢ়তার ব্যাপার।

(২) যখন অনেকগুলো নাপাকী এক সঙ্গে একত্রিত হবে তখন ওযূ ওয়াজিব হবে। যেমন: কেউ পেশাব করলো তারপর পায়খানা করলো, তারপর ঘুমালো। তাহলে এ ক্ষেত্রে যে কোন একটি অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত কররে, সবগুলো নাপাকীর পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। এটাই বিশুদ্ধ মতামত। কেননা অপবিত্রতা একটিই অবস্থা, যদিও তার কারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়।[8]

(৩) আলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে, সর্বোত্তম হলো, ওযূকারী নিয়তের সকল সুরাত বা রূপগুলো ঠিক রাখার জন্য সাধারণভাবে অপবিত্রতা দূর করার নিয়ত করবে। ওযূর ক্ষেত্রে নিয়তের সুরাত বা রূপগুলো হলো: অপবিত্রতা দূর করার নিয়ত করা, অথবা যে পবিত্রতা তার জন্য ওয়াজিব তার জন্য নিয়ত করা, অথবা যে পবিত্রতা অর্জন করা তার জন্য সুন্নত তার জন্য নিয়ত করা। অথবা সুন্নাত পালনের জন্য নতুন ওযূ করার সময় নিয়ত করা।[9]

[1] শর্ত বলা হয়, যেটি না হলে অন্যটি না হওয়া অবধারিত হয়ে যায় এবং তার প্রাপ্তি অন্যটির প্রাপ্তিকে অবধারিত করে না ও তার মূলকেও বাতিল করে না। আর শর্ত কোন কাজের পূর্বেই সংঘটিত হয় এবং তা মূল কাজের বাইরের বিষয়।

[2] সহীহ; বুখারী (১), মুসলিম (১৯০৭)।

[3] বিদায়াতুল মুজতাহিদ (১/৬), আল-মাজমু’ (১/৩৭৪) আত-তামহীদ (২২/১০০, ১০১)।

[4] বাদায়ূস ছানাঈ (১/১৯-২০)।

[5] অনুরূপ এসেছে ইবনু মুফলিহ প্রণীত আল-ফুরু (১/১১১) গ্রন্থে।

[6] মাজমুআতুর রাসাঈলুল কুবরা (১/২৪৩)।

[7] মাদুল মায়াদ (১/১৯৬), ইগাসাতুল লাহফান (১/১৩৪) বাদায়ূল ফাওয়াঈদ (৩/১৮৬), আল ফুরু’ (১/১১১), ‘শারহুল মুমতি’ (১/১৫৯)।

[8] আল-মাজমু’ (১/৩৮৫), শারহুল মুমনি’ (১/১৬৫)।

[9] এ মাসাআলার ব্যাপারে উলামাদের মতভেদ আলোচিত হয়েছে আল-মাজমু’ (১/৩৮৫) এবং অন্যান্য গ্রন্থে।