লগইন করুন
জেনে রাখুন! যে, মুকাল্লিদগণ আল্লাহ্র বাণী বাস্তবায়নের দাবীতে-
﴿فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ﴾
‘‘সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জেনে থাক’’ (সূরা নাহল-৪৩)- দ্বারা দলীল পেশ করে থাকে। তারা বলে, অত্র আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি জানেন না তিনি যেন তার চেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নেন। আর তারা বলেন যে, আমাদের একথার পেছনে অত্র আয়াতটি দলীল।
মহানাবী (ﷺ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জানেন না, তিনি যেন জানা ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে তা জেনে নেন। জনৈক ব্যক্তির মাথায় আঘাত লাগা মর্মে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন:
أَلَا سَأَلُوا إِذْ لَمْ يَعْلَمُوا فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِيِّ السُّؤَالُ
তারা যেহেতু জানে না, সেহেতু তারা কেন জিজ্ঞেস করল না? কেননা অজ্ঞতার ঔষধ হচ্ছে প্রশ্ন করা।[1]
শানকীত্বী (রাহ.) বলেন:[2]
﴿فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ﴾
আয়াত দ্বারা তাদের এ দলীল পেশ করা অনর্থক। কেননা অত্র আয়াতটি দ্বারা তাক্বলীদ করা প্রমাণিত হয় না। যেমনটি তারা ভেবে নিয়েছেন যে, শুধু একজন ব্যক্তির সমস্ত মতামতকেই গ্রহণ করা আবশ্যক এবং অন্যের সব কথা বর্জনীয়।
আর নিঃসন্দেহে أَهْلُ الذِّكْرِ দ্বারা أَهْلُ الوحى বা ওহীর অনুসারী উদ্দেশ্য। যারা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আগত বিধান সম্বন্ধে জানেন। যেমন কুরআন ও হাদীসের পণ্ডিতগণ।
সুতরাং তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আহলে যিকরকে প্রশ্ন করার জন্য, যাতে তারা সেই যিকরের মাধ্যমে তাদেরকে ফাৎওয়া দিতে পারেন যা ওহীর অন্তর্ভুক্ত। আর যে ব্যক্তি ওহীর জ্ঞান অর্জন করার জন্য কাউকে প্রশ্ন করে এবং তার কাছে যদি তা বর্ণনা করা হয়, তাহলে তার এ জ্ঞানার্জনটা ওহীর অনুসরণ মাত্র। এটা তাক্বলীদ নয়। আর বিশুদ্ধ অভিমতে ওহীর অনুসরণ করার ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই।
যদিও আয়াতটি বাহ্যত তাক্বলীদের এক প্রকারের উপর প্রমাণ বহন করছে। তবে এটা এমন ধরনের তাক্বলীদ যার ব্যাপারে আমরা পূর্বে আলোচনা করলাম। এ তাক্বলীদের ব্যাপারে মুসলমানদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই । একে তাক্বলীদে আম বা সাধারণ তাক্বলীদ বলা হয়। এমন তাক্বলীদকারীর জন্য ওহী অবতীর্ণকারী (আল্লাহ্) আলিমদের মধ্য হতে একজন আলিমও অবতীর্ণ করেছেন, যার কাছ থেকে এই মুকাল্লিদ ফাৎওয়া গ্রহণ করে আমল করে। সেই আলিমের সমস্ত মতামত গ্রহণ করাকে সে আবশ্যক মনে করে না এবং তিনি ব্যতীত অন্যরা যা বলেছেন তাও পরিত্যাগ করে না।
আর জনৈক ব্যক্তির মাথা যখম হওয়ার ব্যাপারে দলীল দিতে চাওয়া সে হাদীসটির পূর্ণ রূপ হল-
ثُمَّ احْتَلَمَ فَسَأَلَ أَصْحَابَهُ فَقَالَ: هَلْ تَجِدُونَ لِي رُخْصَةً فِي التَّيَمُّمِ؟ فَقَالُوا: مَا نَجِدُ لَكَ رُخْصَةً وَأَنْتَ تَقْدِرُ عَلَى الْمَاءِ فَاغْتَسَلَ فَمَاتَ
অতঃপর তার স্বপ্নদোষ হলে তার সঙ্গীদের তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমার জন্য কি তায়াম্মুম করার কোন ছাড় রয়েছে? উত্তরে তারা বললেন, তুমি যেহেতু পানি ব্যবহার করতে সক্ষম তাই তোমার তায়াম্মুম করার ছাড় আমরা দেখছি না। ফলে তিনি গোসল করার কারণে মারা গেলেন। অতঃপর আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ) এর কাছে এ খবর পৌঁছলে তিনি বলেন:
قَتَلُوهُ قَتَلَهُمُ اللَّهُ أَلَا سَأَلُوا إِذْ لَمْ يَعْلَمُوا فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِيِّ السُّؤَالُ
তারা তাকে হত্যা করেছে। সুতরাং আল্লাহ্ তাদের হত্যা করুন। যেহেতু তারা জানে না, সেহেতু কেন জিজ্ঞেস করল না? কেননা অজ্ঞতার ঔষধ হচ্ছে প্রশ্ন করা।
এটি দ্বারা দলীল প্রদান করাটাও অনর্থক। বরং এ হাদীসটিও মুকাল্লিদদের বিরুদ্ধেই দলীল, এটি মুকাল্লিদদের স্বপক্ষের দলীল নয়।
এর কারণ বর্ণনায় ই‘লামুল মুওয়াক্কিয়ীন গ্রন্থকার বলেন: মহানাবী (ﷺ) ফাৎওয়া প্রদান কারীকে উপদেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি পূর্বোলেস্নখিত সাহেবে শুজ্জা (আহত ব্যক্তি) এর হুকুম ও পদ্ধতি সম্বন্ধে প্রশ্ন করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। তিনি তাদের বলেছিলেন- قَتَلُوهُ قَتَلَهُمُ اللَّهُ তারা তাকে হত্যা করেছে। সুতরাং আল্লাহ্ তাদের হত্যা করুন। তিনি তাদের প্রতি বদ-দু‘আ করেছেন, কেননা তারা ইলম (জ্ঞান) ছাড়া ফাৎওয়া দিয়েছে।
সকল বিদ্বানের ঐকমত্যে এর দ্বারা তাক্বলীদের মাধ্যমে ফাৎওয়া দেয়া হারাম বুঝানো হয়েছে। কেননা তাক্বলীদ ইলম নয়। রাসূল (ﷺ) কর্তার প্রতি বদ-দু‘আ করেছেন। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে তা হারাম এবং এটা হারাম হওয়ার একটি দলীল। সুতরাং মুকাল্লিদগণ যা দিয়ে দলীল দিতে চান, সেটাই তাদের বিরুদ্ধে বড় দলীল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। (আল-আযওয়াউল বায়ান)
[2] ‘আযওয়াউল বায়ান’ (৭/৫১০-৫১১)।