লগইন করুন
কিছু নামাযী আছে, যারা নামায তো পড়ে; কিন্তু তাদের নামায আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দরবারে কবুল ও গৃহীত হয় না। নামাযী অথবা নামাযের অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হন না। এমন কতকগুলি নামাযী নিম্নরুপ:-
১। পলাতক ক্রীতদাস-
২। এমন স্ত্রী, যার স্বামী তার উপর রাগ করে আছে। স্ত্রী স্বামীকে সর্বদা খোশ রাখবে, তার (ভালো কথা ও কাজে) আনুগত্য করবে, তার সব কথা মেনে চলবে, যৌনসুখ দিয়ে তাকে সর্বদা তৃপ্ত রাখবে, কোন বিষয়ে রাগ হলে তা সত্বর মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সব কিছুতে তাকে সন্তুষ্ট রাখবে -এটাই হল স্ত্রীর ধর্ম। মহানবী (ﷺ) বলেন, তোমাদের (সেই) স্ত্রীরাও জান্নাতী হবে, যে স্ত্রী অধিক প্রণয়িণী, সন্তানদাত্রী, বারবার ভুল করে বারবার স্বামীর নিকট আত্মসমর্পণকারিণী, যার স্বামী রাগ করলে সে তার নিকট এসে তার হাতে হাত রেখে বলে, আপনি রাজী (ঠান্ডা) না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না।” (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৮৭ নং)
কিন্তু এমন বহু মহিলা আছে, যারা তাদের স্বামীর খেয়ে-পরেও এমন রাগ-রোষকে পরোয়া করে না। নারী-স্বাধীনতার পক্ষপাতিনী স্বামীর সংসারেও পরম স্বাধীনতা-সুখ ভোগ করতে গিয়ে স্বামীকে নারাজ রাখে। ফলে বিশ্বস্বামীও নারাজ হন এবং সেই স্ত্রীর শয্যাসঙ্গী স্বামীকে খোশ করার আগে নামায পড়লেও সে নামাযে তিনি খোশ হন না। কারণ, ‘হুকূকুল ইবাদ’ আদায় না করা পর্যন্ত মহান আল্লাহ বান্দার তাওবাতে সন্তুষ্ট হন না। যার প্রতি অন্যায় করা হয়, তার নিকট আগে ক্ষমা পেলে তবেই মহান আল্লাহ ক্ষমা করেন। নচেৎ না।
৩। এমন লোক যে কারো বিনা অনুমতি ও আদেশেই কারো জানাযা পড়ায় (ইমামতি করে)। এমন ইমাম, যার ইমামতি অধিকাংশ মুক্তাদীরা পছন্দ করে না। তার পিছনে নামায পড়তে তাদের রুচি হয় না। ইমামতিতে ভুল আচরণ অথবা চরিত্রগত কোন কারণে অধিকাংশ লোকে তাকে ইমামতি করতে দিতে চায় না। এমন ইমামের নামায তার কান অতিক্রম করে না, মাথার উপরে যায় না, আকাশের দিকে ওঠে না, সাত আসমান পার হয়ে আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়া তো বহু দূরের কথা।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “তিন ব্যক্তির নামায তাদের কান অতিক্রম করে না; পলাতক ক্রীতদাস, যতক্ষণ না সে ফিরে এসেছে, এমন স্ত্রী যার স্বামী তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করেছে, (যতক্ষণ না সে রাজী হয়েছে), (অথবা যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্য চরণ করেছে, সে তার বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত) এবং সেই সম্প্রদায়ের ইমাম, যাকে লোকে অপছন্দ করে।” (তিরমিযী, সুনান, ত্বাবারানী,হাকেম, মুস্তাদরাক, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৮৮, ৬৫০নং)
৪।এমন লোক, যে কোন গণকের কাছে ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ জানার আশায় গণককে ‘ইলমে গায়বের মালিক’ মনে করে হাত দেখায়। এমন ব্যক্তির -কেবল গণকের কাছে যাওয়ার কারণেই- তার ৪০ দিনের (২০০ ওয়াক্তের) নামায কবুল হয় না! তার উপর গণক যা বলে তা বিশ্বাস করলে তো অন্য কথা। বিশ্বাস করলে তো সে মূলেই ‘কাফের’-এ পরিণত হয়ে যায়। আর কাফেরের নামায-রোযা অবশ্যই মকবূল নয়।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট উপস্থিত হয়ে কোন (ভূত-ভবিষ্যৎ বা গায়বী) বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, সে ব্যক্তির ৪০ দিনের নামায কবুল হয় না।” (মুসলিম, সহীহ ২২৩০নং)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতিষীর নিকট উপস্থিত হয়ে সে যা বলে তা সত্য মনে (বিশ্বাস) করল, সে ব্যক্তি মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর অবতীর্ণ (কুরআনের) প্রতি কুফরী করল।” (আহ্মদ,হাকেম, সহীহুল জামে’ ৫৯৩৯নং)
৫। শারাবী, মদ্যপায়ী:-
মহানবী (ﷺ) বলেন, “আমার উম্মতের যে ব্যক্তি মদ পান করবে, আল্লাহ তার ৪০ দিন নামায কবুল করবেন না।” (নাসাঈ, সুনান, জামে ৭৭১৭ নং)
৬। এমন নামাযী, যে নামায পড়ে কিন্তু নামায চুরি করে। দায় সারা করে পড়ে। ঠিকমত রুকূ-সিজদাহ করে না। রুকূতে স্থির হয় না, সিজদায় স্থির থাকে না। কোমর বাঁকানো মাত্র তুলে নেয়। ‘সু-সু-সু’ করে দুআ পড়ে চটপট উঠে যায়! কারো কোমর ঠিকমত বাঁকে না। মাথা উঁচু করেই রুকূ করে। কারো সিজদার সময় নাক মুসাল্লায় স্পর্শ করে না। কারো পা দু’টি উপর দিকে পাল্লায়হাল্কা হওয়ার মত উঠে যায়। কেউ রুকূ ও সিজদার মাঝে স্থির হয়ে দাঁড়ায় না।হাফ দাঁড়িয়ে সিজদায় যায়।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “হে মুসলিম দল! সে ব্যক্তির নামায হয় না, যে ব্যক্তি রুকূ ও সিজদাতে নিজ পিঠ সোজা করে না।” (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ তারগিব ৫২৪ নং)
“আল্লাহ সেই বান্দার নামাযের দিকে তাকিয়েও দেখেন না, যে রুকূ ও সিজদার মাঝে নিজ পিঠকে সোজা করে (দাঁড়ায়) না।” (আহমাদ, মুসনাদ ৪/২২, ত্বাবারানী, সহিহ তারগিব ৫২৫, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৫৩৬ নং)
“মানুষ ৬০ বছর ধরে নামায পড়ে, অথচ তার একটি নামাযও কবুল হয় না! কারণ, হয়তো বা সে রুকূ পূর্ণরুপে করে, কিন্তু সিজদাহ পূর্ণরুপে করে না। অথবা সিজদাহ পূর্ণরুপে করে, কিন্তু রুকূ ঠিকমত করে না।” (আসবাহানী, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৫৩৫ নং)
“নামায ৩ ভাগে বিভক্ত; এক তৃতীয়াংশ পবিত্রতা, এক তৃতীয়াংশ রুকূ এবং আর এক তৃতীয়াংশ হল সিজদাহ। সুতরাং যে ব্যক্তি তা যথার্থরুপে আদায় করবে, তার নিকট থেকে তা কবুল করা হবে এবং তার অন্যান্য সমস্ত আমলও কবুল করা হবে। আর যার নামায রদ করা হবে, তার অন্য সকল আমলকে রদ্দ্ করে দেওয়া হবে।” (বাযযার, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৫৩৭ নং)
৭। আযান শুনেও যে নামাযী বিনা ওজরে মসজিদের জামাআতে নামায পড়ে না-
জামাআতে নামায পড়া ওয়াজেব। এই ওয়াজেব ত্যাগ করলে তার নামায কবুল নাও হতে পারে। মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আযান শোনা সত্ত্বেও মসজিদে জামাআতে এসে নামায আদায় করে না, কোন ওজর না থাকলে সে ব্যক্তির নামায কবুল হয় না।” (আবূদাঊদ, সুনান ৫৫১, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৬৩০০ নং)
৮। এমন মহিলা, যে আতর বা সেন্ট মেখে মসজিদের জন্য বের হয়:-
এমন মহিলা যতক্ষণ পর্যন্ত না নাপাকীর গোসল করার মত গোসল করেছে ততক্ষণ পর্যন্ত তার নামায কবুল হবে না। (ইবনে মাজাহ্, সুনান, জামে ২৭০৩ নং)
৯। পিতামাতার অবাধ্য সন্তান।
১০। দান করে যে দানের কথায় গর্ব ভরে প্রচার করে বেড়ায়।
১১। তকদীর অস্বীকারকারী ব্যক্তি। (ত্বাবারানী, জামে ৩০৬৫ নং)
১২। পরের বাপকে যে নিজের বাপ বলে দাবী করে। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ)
১৩। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে হ্ত্যা করে এবং তাতে সে গর্ববোধ করে ও খুশী হয়। (বায়হাকী ৮/২১, জামে ৬৪৫৪ নং)
১৪। খুনের বদলে খুনের বদলা নিতে যে ব্যক্তি (শাসন কর্তৃপক্ষকে) বাধা দেয়। (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, জামে ৬৪৫১ নং)
১৫। যে ব্যক্তি মদ্বীনায় কোন বিদআত কাজ করে অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয়। অথবা কোন দুষ্কর্ম করে বা দুষ্কৃতিকে আশ্রয় দেয়।
১৬। যে ব্যক্তি মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ ১৩৭০ নং)
উপর্যুক্ত ব্যক্তিবর্গের কোন ফরয-নফল নামায ও ইবাদতই (অথবা তওবা ও মুক্তিপণ কিয়ামতে) কবুল করা হবে না।