লগইন করুন
‘আমীন’ বলার পর নবী মুবাশ্শির (ﷺ) অন্য একটি সূরা পাঠ করতেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, আমরা যেন সূরা ফাতিহা এবং সাধ্যমত অন্য সূরা পাঠ করি।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৮১৮নং)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) আমাকে এই ঘোষণা করতে আদেশ করলেন যে, “সূরা ফাতিহা এবং অতিরিক্ত অন্য সূরা পাঠ ছাড়া নামায হবে না।” (ঐ ৮২০নং)
প্রত্যেক সূরা পাঠ করার পূর্বে ‘বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম’ বলা সুন্নত। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৮৪, ৭৮৮নং) অবশ্য সূরার শুরু অংশ থেকে না পড়লে, অর্থাৎ সূরার মধ্য বা শেষাংশ হতে পাঠ করলে ‘বিসমিল্লাহির---’ বলা বিধেয় নয়। কারণ, সূরার মাঝে তা নেই। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১০৫) সূরা নামলের মাঝে ‘বিসমিল্লাহ্’র কথা স্বতন্ত্র।
এই সূরা নবী (ﷺ) কখনো কখনো লম্বা পড়তেন। তিনি বলতেন, “যে নামাযের কিয়াম লম্বা, সে নামাযই শ্রেষ্ঠতম নামায।” (মুসলিম, হাকেম, মুস্তাদরাক, মিশকাত ৮০০নং)
কখনো বা সফর, কাশি, অসুস্থতা অথবা কোন শিশুর কান্না শোনার কারণে সংক্ষিপ্ত ও ছোট সূরাও পড়তেন। যেমন আনাস (রাঃ) বলেন, একদা নবী (ﷺ) ফজরের নামাযে কুরআন মাজীদের সবচেয়ে ছোট সূরা দু’টি পাঠ করলেন। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘এত সংক্ষেপ করলেন কেন?’ তিনি বললেন, “এক শিশুর কান্না শুনলাম। ভাবলাম, ওর মা আমাদের সাথে নামায পড়ছে। তাই ওর মা-কে ওর জন্য (তাড়াতাড়ি) ফুরসত দেওয়ার ইচ্ছা করলাম।” (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে আবী দাঊদ, মাসাহিফ, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১০২-১০৩পৃ:)
তিনি আরো বলতেন যে, “আমি নামাযে মনোনিবেশ করে ইচ্ছা করি যে, নামায লম্বা করব। কিন্তু শিশুর কান্না শুনে নামায সংক্ষেপ করে নিই। কারণ, জানি যে, শিশু কাঁদলে (নামাযে মশগুল) তার মায়ের মন কঠিনভাবে ব্যথিত হবে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৩০ নং)
অধিকাংশ নামাযে তিনি সূরার প্রথম থেকে শুরু করে শেষ অবধি পাঠ করতেন। তিনি বলতেন, “প্রত্যেক সূরাকে তার রুকু ও সিজদার অংশ প্রদান কর।” (ইবনে আবী শাইবা ৩৭১১ নং, আহমাদ, মুসনাদ, মাকদেসী) “এক-একটি সূরার জন্য এক-একটি রাকআত।” (ইবনে নাসর, হাকেম, মুস্তাদরাক) অর্থাৎ, এক রাকআতে একটি পূর্ণ সূরা পড়া উত্তম। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১০৩পৃ:)
আবার কখনো তিনি একটি সূরাকে দুই রাকআতে (আধাআধি ভাগ করে) পাঠ করতেন। কখনো বা একটি সূরাকেই উভয় রাকআতেই (পূর্ণরুপে) পড়তেন। (ফজরের নামাযে ক্বিরাআত দ্র:) আবার কোন কোন নামাযে এক রাকআতেই দুই বা ততোধিক সূরা একত্রে পড়তেন।
মহানবী (ﷺ) এক ব্যক্তিকে এক জিহাদের সেনাপতি রুপে প্রেরণ করলেন। সে তাদের নামাযে ইমামতি কালে প্রত্যেক সূরার শেষে ‘ক্বুল হুঅল্লাহু আহাদ’ যোগ করে ক্বিরাআত শেষ করত। যখন তারা ফিরে এল তখন সে কথা আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট উল্লেখ করল। তিনি বললেন, “তোমরা ওকে জিজ্ঞাসা কর, কেন এমনটি করে?” সুতরাং তারা ওকে জিজ্ঞাসা করলে লোকটি বলল, ‘কারণ, সূরাটিতে পরম দয়ালু (আল্লাহর) গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। তাই আমি ওটাকে (বারবার) পড়তে ভালোবাসি।’ একথা শুনে তিনি বললেন, “ওকে সংবাদ দাও যে, আল্লাহ আয্যা অজাল্লাও ওকে ভালো বাসেন।” (বুখারী ৭৩৭৫ নং, মুসলিম, সহীহ ৮১৩ নং)
কুবার মসজিদে এক ব্যক্তি আনসারদের ইমামতি করত। (সূরা ফাতিহার পর) অন্য সূরা যা পড়ত, তা তো পড়তই। কিন্তু তার পূর্বে সূরা ইখলাসও প্রত্যেক রাকআতেই পাঠ করত। তার মুক্তাদীরা তাকে বলল, ‘আপনি এই সূরা প্রথমে পাঠ করছেন। অতঃপর তা যথেষ্ট মনে না করে আবার অন্য একটি সূরা পাঠ করছেন! হয় আপনি ওটাই পড়ুন, নচেৎ ওটা ছেড়ে অন্য সূরা পড়ুন।’ ইমাম বলল, আমি ওটা পড়তে ছাড়ব না। তোমরা চাইলে আমি তোমাদের নামাযে এইভাবেই ইমামতি করব, নচেৎ তোমাদের অপছন্দ হলে ইমামতিই ত্যাগ করব। লোকটি যেহেতু তাদের চেয়ে ভাল ও যোগ্য ছিল, তাই তারা ঐ ইমামকে ত্যাগ করতে অপছন্দ করল। কিন্তু মহানবী (ﷺ) তাদের নিকট উপস্থিত হলে তারা ঐ ব্যাপার খুলে বলল। নবী (ﷺ) তাকে বললেন, “হে অমুক! তোমার মুক্তাদীরা যা করতে বলছে, তা কর না কেন? আর কেনই বা ঐ সূরাটিকে নিয়মিত প্রত্যেক রাকআতে পাঠ করে থাক?” লোকটি বলল, ‘আমি সূরাটিকে ভালোবাসি।’ মহানবী (ﷺ) বললেন, “ঐ সূরাটির প্রতি ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।” (বুখারী বিচ্ছিন্ন সনদে ৭৭৪ নং, সহিহ, তিরমিযী, সুনান ২৩২৩ নং)
সূরার মাঝখান থেকেও কতক আয়াত পাঠ করা যায়। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন,
فاقرَؤُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآن
অর্থাৎ, ---কাজেই কুরআনের যতটুকু অংশ পাঠ করা তোমাদের জন্য সহ্জ, ততটুকু তোমরা পাঠ কর। (কুরআন মাজীদ ৭৩/২০)
নামায ভুলকারী সাহাবীকেও রসূল (ﷺ) বলেছিলেন, “অতঃপর কুরআন থেকে যতটুকু তোমার জন্য সহ্জ হয় ততটুকু পাঠ কর।” (বুখারী, মুসলিম, প্রমুখ, মিশকাত ৭৯০ নং) তাছাড়া তিনি ফজরের সুন্নতে প্রথম রাকআতে সূরা বাক্বারার ১৩৬ নং আয়াত এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আ-লে ইমরানের ৬৪ নং আয়াত পাঠ করেছিলেন। (মুসলিম, মিশকাত ৮৪৩ নং) আর এ কথা বিদিত যে, যা নফল নামাযে পড়া যায়, তা ফরয নামাযেও (কোন আপত্তির দলীল না থাকলে) পড়া যাবে। আর পড়া আপত্তিকর হলে নিশ্চয় তার বর্ণনা থাকত। যেমন সাহাবাগণ যখন মহানবী (ﷺ) এর উট ও সওয়ারীর উপর নফল এবং বিত্র নামায পড়ার কথা বর্ণনা করেন, তখনই তার সাথে এ কথাও বর্ণনা করেন যে, ‘অবশ্য তিনি সওয়ারীর উপর ফরয নামায পড়তেন না।’ (বুখারী ১০৯৮, মুসলিম, সহীহ ৭০০নং)
তবে এক রাকআতে পূর্ণ একটি সূরা এবং সূরার শুরু অংশ থেকে পাঠ করাই আফযল। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১০৩-১০৪, ৩৩৪, ৩৬০)