লগইন করুন
১। গোরস্থানে নামায পড়া বৈধ নয়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের আম্বিয়া ও আউলিয়াদের কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়ে নিত। শোন! তোমরা যেন কবরসমূহকে মসজিদ (নামাযের স্থান) বানিয়ে নিও না। আমি তোমাদের উপর এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী করে যাচ্ছি।” (মুসলিম, মিশকাত ৭১৩নং)
তিনি বলেন, “তোমাদের নিজ নিজ ঘরে কিছু (নফল বা সুন্নত) নামায পড়; আর তা (ঘর)কে কবর করে নিওনা।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭১৪নং) কারণ, কবরস্থানে নামায পড়া হয় না।
“তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়ো না।” (মুসলিম, সহীহ ৯৭২ নং, প্রমুখ)
২। উট বাঁধার জায়গায় নামায নিষিদ্ধ। মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা ছাগল-ভেঁড়া বাঁধার জায়গায় নামায পড়, আর উট বাঁধার জায়গায় নামায পড়ো না।” (মুসলিম, তিরমিযী, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ প্রমুখ, মিশকাত ৭৩৯নং)
৩। গোসলখানায় নামায মাকরুহ। যেহেতু এ স্থান সাধারণত: নাপাকী ধোওয়ার জন্য ব্যবহৃত। মহানবী (ﷺ) বলেন, “কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া সারা পৃথিবীর সকল জায়গা মসজিদ (নামায পড়ার জায়গা)।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৭৩৭নং)
৪। কসাইখানা পবিত্র হলে তাতে নামায শুদ্ধ।
৫। রাস্তার মাঝে গাড়ি বা লোকজনের আসা-যাওয়া না থাকলে নামায নিষিদ্ধ নয়। অনুরুপ মসজিদ ভরে গেলে লাগালাগি রাস্তাতেও নামায শুদ্ধ। তবে কেউ যেন ইমামের সামনের দিকে রাস্তায় না দাঁড়ায়। কারণ, ইমামের সামনে দাঁড়ালে নামায শুদ্ধ হয় না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৪)
৬। ময়লা ফেলার জায়গাতে যেহেতু নাপাকীই থাকার কথা, তাই সেখানে নামায শুদ্ধ নয়।
৭। কা’বা শরীফের ভিতরে এবং হাতীম বা হিজরে ইসমাঈল (কা’বা শরীফের পার্শ্বে যে জায়গাটা গোলাকার ঘেরা আছে সেই জায়গা) এর সীমার ভিতরেও নামায শুদ্ধ। আল্লাহর রসূল (ﷺ) একদা কা’বা-ঘরের ভিতরে ২ রাকআত নামায পড়েছেন। (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৬৯১ নং)
প্রকাশ যে, সাত জায়গায় নামায পড়া নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে যে হাদীস উল্লেখ করা হয়, তা খুবই দুর্বল। (মিশকাত ৭৩৭ নং হাদীসের টীকা, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ২/২৫২ দ্র:)
৮। অমুসলিমদের উপাসনালয়ে কোন মূর্তি বা ছবি না থাকলে তাতে নামায পড়া বৈধ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) মূর্তি না থাকলে গির্জায় নামায পড়েছেন। (বুখারী বিনা সনদে, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৬৩২)
হযরত আবূ মূসা আশআরী, উমার বিন আব্দুল আযীয কর্তৃকও গির্জায় নামায পড়ার ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে। (ইআশা: ১/৪২৩, নাইলুল আউতার, শাওকানী, ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু১৩৫ পৃ:)
প্রকাশ যে, নিরুপায় অবস্থা বা দাওয়াতী উদ্দেশ্য ছাড়া অমুসলিমদের কোন ভজনালয়ে যাওয়া বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩২/১০৪)
অমুসলিমদের সমাজে এবং তাদের মালিকানাভুক্ত জায়গা-জমিতেও নামায শুদ্ধ। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৮) বরং তাদের বাড়ির ভিতরেও (মূর্তি না থাকলে) নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। (ঐ ৩২/১০৪) তবে পবিত্রতা ইত্যাদি অন্যান্য শর্তাবলী সর্বক্ষেত্রে অবশ্য পালনীয়।
৯। নক্সাদার মুসাল্লায় নামায শুদ্ধ হলেও তাতে নামায পড়া মাকরুহ (অপছন্দনীয়)। যেহেতু এতে নামাযীর মনে কেড়ে নিয়ে উদাসীন করে ফেলে। এই জন্যই বিশ্বনবী (ﷺ) নক্সাদার কাপড়ে নামায পড়াকে অপছন্দ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৫৭ নং দ্র:)
একদা হযরত আয়েশা (রাঃ) এর হুজরার দেওয়ালে ছবিযুক্ত পর্দা টাঙ্গা থাকতে দেখলে তিনি তাঁকে বললেন, “তোমার এই পর্দা আমাদের নিকট থেকে সরিয়ে নাও। কারণ, ওর ছবিগুলো আমার নামাযে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।” (বুখারী ৩৭৪ নং, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৫/২৯৩, ১৫/৭৪, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৭৮)
তদনুরুপ সামনে ছবিযুক্ত ক্যালেন্ডার ইত্যাদি রেখে নামায পড়া মাকরুহ। (ইআশা: ১/৩৯৯ দ্র:)
বলা বাহুল্য, এ জন্যই মসজিদের সামনের দেওয়ালে কোন প্রকার দৃষ্টি-আকর্ষক নক্সা, বস্তু বা বিজ্ঞপ্তি, সময়সূচী ইত্যাদি রাখাও মাকরুহ।
১০। বিছানা পবিত্র হলে তাতে নামায পড়া দূষণীয় নয়। হযরত আনাস (রাঃ) নিজ বিছানায় নামায পড়েছেন। (ইআশা: ২৮১০ নং, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৫৮৬)
১১। পেশাব-পায়খানা ঘরের ছাদে বা পিছনে (পেশাব-পায়খানা ঘরকে সামনে করে নামায শুদ্ধ। ছাত বা সামনের দেওয়াল পবিত্র হলে নামায মাকরুহ নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৭০, দারেমী, সুনান ৯৫পৃ:) আড়াল থাকলে প্রস্রাব-পায়খানার নালা বা পাইপ সামনে করে, অথবা তার উপর ব্রিজে, অথবা মলমূত্রের পাইপের নিচে নামায শুদ্ধ। (বুখারী ৮২পৃ দ্র:)
১২। যে রুমে মাদকদ্রব্য থাকে সে রুমে নামায পড়তে হলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৪২৬)
১৩। ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক ভাড়া গ্রহণকারীকে ঐ ঘরে থাকতে না দিতে চাইলে এবং সে সেখান হতে বের হতে না চাইলে তথা জোরপূর্বক বাস করলেও সে ঘরে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে এ কাজে সে নিরুপায় না হলে গুনাহগার হতে পারে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৫৫)