লগইন করুন
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদের সালাত ঈদগাহে আদায় করতেন। তিনি ঈদের সালাত মসজিদে আদায় করেছেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
ইমাম শাফেয়ি ‘আলউম্ম’ নামক গ্রন্থে বলেছেন: “আমাদের কাছে এই মর্মে রেওয়ায়েত পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদের দিন মদিনার ঈদগাহে যেতেন। তাঁর ওফাতের পরেও সবাই সেটাই পালন করত; যদি না বৃষ্টি বা এ জাতীয় অন্যকোন প্রতিবন্ধকতা না থাকে। মক্কাবাসী ব্যতীত অন্য সব অঞ্চলের লোকেরাও সেটাই করতেন।” সমাপ্ত
তিনি তাঁর সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরে ঈদের নামাযের জন্য বের হতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হুল্লাহ নামক এক সেট পোশাক ছিল। তিনি সেটি পরে দুই ঈদ এবং জুমার সালাত আদায় করতে যেতেন।
হুল্লাহ হচ্ছে-এক জাতীয় কাপড় দিয়ে তৈরী দুই অংশবিশিষ্ট এক সেট পোশাক।
তিনি ঈদুল ফিতরের সালাত আদায় করতে যাওয়ার আগে খেজুর খেতেন। খেজুরগুলো বেজোড় সংখ্যায় খেতেন। ইমাম বুখারী (৯৫৩) আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন সকালবেলা খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন।”
ইবনে ক্বুদামাহ বলেছেন:
“ঈদুল ফিতরের দিন আগে আগে খাবার খাওয়া মুস্তাহাব্ব- এ ব্যাপারে কোন ভিন্ন মত আমাদের জানা নেই।” সমাপ্ত
ঈদুল ফিতরের দিন নামায আদায়ের আগেই খেয়ে ফেলার পিছনে হিকমত হলো- কেউ যেন এটি না ভাবে যে সালাত আদায় করা পর্যন্ত না খেয়ে থাকা অপরিহার্য। আবার কারো কারো মতে, আগে আগে খাবার খাওয়ার পিছনে হিকমত হল- উপবাসের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ পালন করার পর অনতিবিলম্বে খাবার খাওয়ার নির্দেশ পালন করা।
যদি কোন মুসলিম খেজুর না পায় তাহলে তিনি অন্য যে কোন কিছু এমনকি পানি হলেও পান করবেন। যাতে তিনি অন্তত সুন্নতের মূল উদ্দেশ্যটা অনুসরণ করতে পারেন। তা হল- ঈদুল ফিতরের নামাযের আগে কিছু খাওয়া বা পান করা।
পক্ষান্তরে ঈদুল আযহার দিন তিনি ঈদগাহ থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত কিছু খেতেন না। ঈদগাহ থেকে ফেরার পর তিনি কোরবানীর পশুর মাংস খেতেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরো বর্ণিত আছে যে তিনি দুই ঈদের দিন গোসল করতেন। ইবনুল কাইয়্যিম বলেছেন: “এ সম্পর্কে দুইটি দুর্বল হাদিস রয়েছে...। তবে ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যিনি সুন্নত অনুসরণের ব্যাপারে অত্যন্ত তৎপর ছিলেন, তাঁর থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি ঈদের দিন নামাযে বের হওয়ার আগে গোসল করতেন।” সমাপ্ত
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়ে হেঁটে ঈদের নামাযে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ঈদের নামায থেকে ফিরে আসতেন।
ইবনে মাজাহ (১২৯৫) ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়ে হেঁটে ঈদের নামাযে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ঈদের নামায থেকে ফিরে আসতেন।”[আলবানী সহীহ ইবনে মাজাহ গ্রন্থে এ হাদিসকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেছেন।]
ইমাম তিরমিযী (৫৩০) আলী ইবনে আবু ত্বালেব থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন:“ঈদের নামাযে হেঁটে যাওয়া সুন্নত।” [আলবানী সহীহ তিরমিযী’ গ্রন্থে এ হাদিসকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেছেন। ]
ইমাম তিরমিযী আরো বলেছেন:
“অধিকাংশ আলেম এই হাদিস অনুসরণ করেছেন এবং ঈদের দিন পায়ে হেঁটে সালাত আদায়ের জন্য বের হওয়াকে মুস্তাহাব্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন . . .। কোন গ্রহণযোগ্য অজুহাত ছাড়া যানবাহন ব্যবহার না-করা মুস্তাহাব্ব।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহে পৌঁছেই নামায শুরু করে দিতেন। আযান, ইকামত অথবা “আসসালাতু জামেআ” (নামাযের জামাতে হাজির হও) এ ধরনের কোন ঘোষণা দিতেন না। তাই এগুলোর কোনটি না-করাই সুন্নত।
তিনি ঈদগাহে ঈদের নামাযের আগে বা পরে আর কোন নামায আদায় করতেন না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোতবা দেয়ার আগে নামায শুরু করতেন। দুই রাকাত সালাতের প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমাসহ পরপর সাতটি তাকবীর দিতেন। প্রতি দুই তাকবীরের মাঝে কিছু সময় বিরতি নিতেন। দুই তাকবীরের মাঝখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ কোন দু‘আ পড়েছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে ইবনে মাসঊদ হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “আল্লাহর প্রশংসা করবে, সানা পড়বে এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করবে।”
সুন্নতের অনুসরণের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ইবনে উমর (রাঃ) প্রতি তাকবীরের সাথে হাত উঠাতেন।
তাকবীর বলার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন তেলাওয়াত করতেন। প্রথমে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। তারপর দুই রাকাতের যে কোন এক রাকাতে “ক্বাফ ওয়াল ক্বুর’আনিল মাজীদ” (৫০ নং সূরা ক্বাফ) এবং অপর রাকাতে “ইক্ব্তারাবাতিস সা‘আতু ওয়ান শাক্বক্বাল ক্বামার” (৬৪ নং সূরা ক্বামার) তেলাওয়াত করতেন। আবার কখনো “সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল আ‘লা” (৮৭ নং সূরাহ আল-আ‘লা) ও “হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ” (৮৮নং সূরা আল- গাশিয়াহ) দিয়ে দুই রাকাত নামায পড়তেন। সহীহ রেওয়ায়েতে এ সূরাগুলোর কথা পাওয়া যায়। এছাড়া আর কোন সূরার কথা সহীহ বর্ণনায় পাওয়া যায় না। ক্বিরাত শেষ করার পর তিনি তাকবীর বলে রুকূ‘ করতেন। এরপর সেই রাকাত শেষ করে উঠে দাঁড়ানোর পর পরপর পাঁচটি তাকবীর দিতেন। পাঁচবার তাকবীর দেয়া শেষ করার পর তেলাওয়াত করতেন। অতএব প্রত্যেক রাকাতের শুরু করতেন তাকবীর দিয়ে। তেলাওয়াতের পরপরই রুকূ‘ করতেন।
ইমাম তিরমিযি একটি হাদিস সংকলন করেছেন কাছীর ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আওফ এর সূত্রে, তিনি তাঁর বাবা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে যে-“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদের সালাতে প্রথম রাকাতে কুরআন তেলাওয়াতের পূর্বে সাতবার তাকবীর দিতেন এবং অপর রাকাতে কুরআন তেলাওয়াতের পূর্বে পাঁচবার তাকবীর দিতেন।” ইমাম তিরমিযি বলেন: “আমি মুহাম্মাদকে অর্থাৎ ইমাম বুখারীকে এই হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন: “এই বিষয়ে এর চেয়ে সহীহ আর কোন হাদিস নেই এবং আমি নিজেও এই মত পোষণ করি।” সমাপ্ত
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শেষ করতেন তখন তিনি ঘুরে সবার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। সবাই তখন নিজ নিজ কাতারে বসে থাকত। তখন তিনি তাদেরকে উপদেশ দিতেন, নসীহত করতেন, আদেশ করতেন ও নিষেধ করতেন, কোন মিশন পাঠাতে চাইলে সে নির্দেশ দিতেন অথবা কাউকে অন্য কোন আদেশ করতে চাইলে সে ব্যাপারে আদেশ করতেন। সেখানে কোন মিম্বর রাখা হত না যার উপর তিনি দাঁড়াবেন অথবা মদিনার মিম্বরও এখানে আনা হত না। বরং তিনি মাটির উপর দাঁড়িয়েই তাদের উদ্দেশ্যে খোতবা দিতেন।
জাবের (রাঃ) বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ঈদের সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খোতবার আগে আযান ও ইক্বামাত ছাড়া সালাত শুরু করলেন। নামাযের পর বিলালের কাঁধে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর তিনি আল্লাহকে ভয় করার আদেশ দিলেন, আনুগত্য করার ব্যাপারে উৎসাহিত করলেন, মানুষকে নসীহত করলেন, আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। এরপর তিনি মহিলাদের কাছে গেলেন, তাদেরকে আদেশ দিলেন ও আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন।”[সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম]
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যেতেন। প্রথমে নামায আদায় করতেন। নামায শেষে লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। তখন লোকেরা সবাই কাতারে বসে থাকত।”[এই হাদিসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সকল বক্তৃতা আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে শুরু করতেন। এমন একটি হাদিসও পাওয়া যায়নি যে, তিনি দুই ঈদের খোতবা তাকবীর দিয়ে শুরু করেছেন। বরং ইবনে মাজাহ তাঁর সুনান গ্রন্থে (১২৮৭) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুয়াজ্জিন সাদ আল-ক্বারাজ থেকে বর্ণনা করেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোতবার মাঝখানে তাকবীর পাঠ করতেন এবং দুই ঈদের খোতবায় তিনি বেশি বেশি তাকবীর বলতেন।” [আলবানী ‘জয়ীফু ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে এ হাদিসকে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন] এই হাদিসটি দুর্বল হলেও এতে এমন কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে তিনি ঈদের খোতবা তাকবীর দিয়ে শুরু করতেন।]
আলবানী ‘তামামুল মিন্নাহ’ গ্রন্থে বলেন: “এই হাদিসটি ইঙ্গিত করে না যে ঈদের খোতবা তাকবীর দিয়ে শুরু করা শরিয়তসম্মত। উপরন্তু এ হাদিসটির সনদ দুর্বল। এতে এমন একজন রাবী আছেন যিনি যয়ীফ (দুর্বল) এবং অপর একজন রাবী মাজহুল (অজ্ঞাতপরিচয়)। তাই এ হাদিসকে খোতবাচলাকালীন সময়ে তাকবীর বলা সুন্নাহ হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা জায়েয নয়।”
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন: “দুই ঈদ ও ইস্তিস্ক্বা’ (বৃষ্টি প্রার্থনার নামায) এর খোতবা কি দিয়ে শুরু হবে তা নিয়ে আলেমগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, উভয় (দুই ঈদ ও ইস্তিস্ক্বা) খোতবা তাকবীর দিয়ে শুরু হবে। কেউ কেউ বলেছেন, ইস্তিস্ক্বা’ (বৃষ্টি প্রার্থনার নামায) এর খোতবা ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) দিয়ে শুরু হবে । আবার কেউ বলেছেন, উভয় (দুই ঈদ ও ইসতিসক্বা এর) খোতবা আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে শুরু হবে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: এই মতটি সঠিক...। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সব খোতবা আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে শুরু করতেন।”সমাপ্ত
যারা ঈদের সালাতে উপস্থিত হয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বসে খোতবা শুনা অথবা খোতবা না-শুনে চলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
আবু দাউদ (১১৫৫) আবদুল্লাহ ইবনে আল-সায়িব থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ঈদের সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি সালাত আদায় শেষ করে বললেন, “আমরা এখন খোতবা (বক্তৃতা) দিব। আপনাদের কেউ ইচ্ছা করলে বসে খোতবা শুনতে পারেন। আর কেউ চাইলে চলে যেতে পারেন।”[আলবানী এ ‘সহীহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন (আসা-যাওয়ার জন্য) ভিন্ন ভিন্ন পথ ব্যবহার করতেন। তিনি এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যেতেন এবং আরেক রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। ইমাম বুখারী (৯৮৬) জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: “ঈদের দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাদা আলাদা রাস্তা ব্যবহার করতেন।”