লগইন করুন
বিমা সাধারণত তিন প্রকারের। যেমন -
(১) গ্রুপ ইনস্যুরেন্সঃ সরকার এমন এক পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন করে যাতে জনসাধারণের কোন একটি দল নিজেদের কোন ক্ষতিপূরণ অথবা কোন মুনাফালাভের ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করতে পারে। যেমন, সরকারী চাকুরীজীবীদের বেতনের সামান্য একটি অংশ প্রত্যেক মাসে কেটে রেখে কোন বিশেষ এক ফান্ডে জমা করা হয়। অতঃপর কোন চাকুরীজীবীর মৃত্যু হলে অথবা সে দুর্ঘটনাগ্রস্থ হলে মোটা টাকা আকারে সাহায্য তার ওয়ারেসিনকে অথবা খোদ তাকে সমর্পণ করা হয়। এটি একটি সামাজিক (সমাজকল্যাণমূলক) কর্ম। যা সরকার তার দেশবাসীর সম্ভাব্য দুর্ঘটনার সময় অনুদান স্বরূপ দুর্গতকে সাহায্য করে থাকে। সুতরাং এটি সরকারের তরফ থেকে একপ্রকার অনুদান। কোন বিনিময় চুক্তির ফলে বিনিমেয় অর্থ নয়। এ কারণে এই প্রকার অনুদান গ্রহণে কোন প্রকার দ্বিমত নেই। (দিরাসাতুন শারইয়্যাহ ৪৭৭-৪৭৮ নং)
(২) সমবায় বিমাঃ এর নিয়ম এই যে, যাদের সম্ভব্য দুর্ঘটনা একই ধরনের হয়ে থাকে এমন কতগুলি লোক আপোসে মিলে- মিশে একটি ফান্ড তৈরি করে নেয়। তারপর তারা এই চুক্তিবদ্ধ হয় যে, আমাদের মধ্যে কেউ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে ঐ ফান্ড থেকে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ঐ ফান্ডে কেবল তার সদস্যদের টাকা জমা থাকে এবং ক্ষতিপূরণ কেবল ঐ সকল সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বৎসরান্তে হিসেব নেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণ প্রদত্ত টাকার অংক যদি ফান্ডের টাকার চাইতে বেশী হয়ে যায়, তাহলে সে হিসাবে সদস্যদের নিকট থেকে আর বেশী টাকা আদায় করা হয়। আর ফান্ডের টাকা উদ্বৃত্ত হলে সদস্যেরকে ফেরত দেওয়া হয় অথবা তাদের তরফ থেকে আগামী বছরের জন্য ফান্ডের দেয় অংশ স্বরূপ রেখে নেওয়া হয়।
প্রারম্ভিকভাবে বিমার এই ধরনের প্রচলিত ছিল। যার বৈধ অবৈধতার ব্যাপারে কোন দ্বৈধ নেই। সে সমস্ত উলামাগন বিমা নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাঁরা সকলেই এর বৈধতার ব্যাপারে একমত।
(৩) বাণিজ্যিক বিমাঃ এই বিমার নিয়ম পদ্ধতি এই যে, বিমা কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করা হয়। কোম্পানির উদেশ্য থাকে, বিমাকে বাণিজ্য রূপে পরিচালিত করা, যার মুল উদেশ্য থাকে বিমার উসিলায় মুনাফা অর্জন। এই কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের স্কিম জারী করে। যে ব্যক্তি বিমা করতে চায়, তার সাথে বিমা কোম্পানির এই চুক্তি থাকে যে, এত টাকা এত কিস্তিতে আপনি আদায় করবেন। লোকসানের ক্ষেত্রে কোম্পানি আপনার ক্ষতিপূরণ দেবে। কোম্পানি কিস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য হিসেব করে নেয় যে, যে সম্ভাব্য দুর্ঘটনার উপর বিমা করা হয়েছে, তা কতবার হতে পারে? যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরও কোম্পানির মুনাফা অবশিষ্ট থাকে। আর এই পরিসংখ্যান করার জন্য বিশেষ কৌশল আছে, যার সুদক্ষ কৌশলীকে বিমাগাননিক বলা হয়।
বর্তমানে এই ধরনের বিমার প্রচলন অধিক। আর এরই বৈধতা ও অবৈধতার ব্যাপারটি সাম্প্রতিক কালীন উলামাগনের অধিকতর বিতর্কের বিষয় হয়ে পড়েছে। বর্তমান মুসলিম বিশ্বের প্রায় সকল প্রসিদ্ধ ও খ্যাতি সম্পন্ন উলামাগনের মতো তা অবৈধ। অধিকাংশ উলামাগনের ঐ জামাআত বলেন যে, এই বিমাতে জুয়ার গন্ধ আছে এবং সুদও। জুয়া এই জন্য বলা হচ্ছে যে, টাকা আদায়ের ব্যাপারটা এক পক্ষের (বিমাকারীর) তরফ থেকে নির্দিষ্ট ও নিশ্চিত। কিন্তু অপর পক্ষের (কোম্পানির) তরফ থেকে তা সন্দিগ্ধ। বিমাকারী কিস্তিতে যে টাকা আদায় করে। তার সবটাই ডুবে যেতে পারে। আবার তার চাইতে বেশীও হতে পারে। আর একেই জুয়া বলা হয়। সুদ আছে এই জন্য বলা হচ্ছে যে, এখানে টাকা দিয়ে বিনিময়ে টাকা দেয়া নেওয়া হয়, যাতে কম বেশী ও হয়ে থাকে। বিমাকারী কম টাকা জমা করলেও পাওয়ার সময় তার চেয়ে অনেক বেশীও পেয়ে থাকে। সুতরাং মুসলিমের জন্য এই বিমা বৈধ নয়। (‘ব্যাংকের সুদ কি হালাল’ বই থেকে)