লগইন করুন
সকল প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য।
‘আলিমগণের অধিকাংশের মতে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন চার জন ইমাম (আবূ হানীফাহ্, মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ), একজন রোগীর জন্য রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করা জায়েয নয় যদি না তার রোগ তীব্র হয়।
আর তীব্র রোগের অর্থ হলো :
১. সাওমের কারণে যদি রোগ বেড়ে যায়।
২. সাওমের কারণে যদি আরোগ্য লাভে দেরি হয়।
৩. সাওমের কারণে যদি খুব বেশি কষ্ট হয় যদিও বা তার রোগ বেড়ে না যায় বা সুস্থতায় বিলম্ব না হয়।
৪. এর সাথে আলিমগণ আরও যোগ করেছেন এমন ব্যক্তিকে যার সিয়াম পালনের কারণে অসুস্থ বা রোগ হবার আশংকা আছে।
ইবনু ক্বুদামাহ-রাহিমাহুল্লাহ-‘আল-মুগনী’ (৪/৪০৩)-তে বলেছেন :
‘যে রোগ সাওম ভঙ্গ করা বৈধ করে তা হলো অত্যধিক রোগ যা সাওম পালনের কারণে বেড়ে যায় বা সে রোগ থেকে সুস্থতা লাভে দেরি হওয়ার আশংকা রয়েছে।’
ইমাম আহমাদকে বলা হল, “একজন রোগী কখন সাওম ভঙ্গ করতে পারে?”
তিনি বললেন, “যদি সে (সাওম পালন করতে) না পারে।”
তাঁকে বলা হলো : “যেমন জ্বর?”
তিনি বললেন, “কোন রোগ জ্বর থেকে কঠিনতর !...”
আর সঠিক মতটি হলো, যার সিয়ামের কারণে রোগের আশংকা আছে, যেমন-যে রোগী (তার রোগ) বেড়ে যাওয়ার ভয় করে তার জন্য সাওম ভঙ্গ করা বৈধ; কারণ সে রোগীর জন্যই সাওম ভঙ্গ করা বৈধ করা হয়েছে যার সিয়ামের কারণে নতুন করে রোগ হওয়ার, যেমন তা বেড়ে যাওয়ার বা বেশি সময় স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাই নতুন করে রোগ হওয়া এর অর্থেই পড়ে।” (উদ্ধৃতির সমাপ্তি)
ইমাম আন-নাওয়াউয়ী ‘আল-মাজমূ’-তে (৬/২৬১) বলেছেন :
“সাওম পালনে অক্ষম রোগী যার রোগের সুস্থতা আশা করা হয়, তার জন্য সাওম পালন বাধ্যতামূলক নয়....এই হুকুম প্রযোজ্য যদি সাওমের কারণে কষ্ট হয় আর এক্ষেত্রে এটি শর্ত নয় যে, তাকে এমন অবস্থায় পৌছাতে হবে যখন একেবারেই সাওম পালন সম্ভব নয়। বরং আমাদের অনেকে বলেছেন :
“সাওম ভঙ্গ করার ক্ষেত্রে শর্ত হলো সাওমের কারণে এমন কষ্ট হওয়া যা সহ্য করা কষ্টসাধ্য।” (উদ্ধৃতির সমাপ্তি)
‘আলিমদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, যে কোনো রোগীর জন্যই সাওম ভঙ্গ করা জায়েয, যদি সাওমের কারণে কষ্ট নাও হয়, আর এটি একটি বিরল মত। তাই অধিকাংশ ‘আলিমই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইমাম আন-নাওয়াউয়ী বলেছেন:
“হালকা রোগ যার কারণে বিশেষ কষ্ট হয় না, তার জন্য সাওম ভঙ্গ করা জায়েয নয়, এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।” [আল-মাজমূ‘(৬/২৬১)]
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন বলেছেন : “যে রোগী সাওম পালনের কারণে প্রভাবিত (ক্ষতিগ্রস্ত) হয় না, যেমন-হালকা সর্দি, হালকা মাথা ব্যথা, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সাওম ভঙ্গ করা হালাল নয়; যদিও ‘আলিমগণের কেউ কেউ বলেছেন তা তার জন্য হালাল এই আয়াতের ভিত্তিতে –
﴿وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ﴾ [البقرة: ١٨٥]
“আর যে কেউ অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নিবে।” [আল-বাকারাহ: ১৮৫]
তবে আমরা বলব -এই হুকুমটি একটি কারণের সাথে সম্পৃক্ত আর তা হলো, যাতে সাওম ভঙ্গ করা রোগীর জন্য বেশি আরামদায়ক হয়। যদি সে রোগী সাওমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তবে তার জন্য সাওম ভঙ্গ জায়েয নয় এবং তার উপর সাওম রাখা ওয়াজিব।” [আশ-শারহ আল-মুমতি‘ (৬/৩৫২)]