লগইন করুন
রজব মাসে বিশেষভাবে নফল রোজা রাখা, নফল নামাজ পড়া, উমরা আদায় করা অথবা ইতিকাফ করা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এ উপলক্ষে বিশেষ কিছু ইবাদত করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। যারা এ সব করে তারা এমন কিছু হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করে যেগুলো দুর্বল অথবা বানোয়াট।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, রজব ও শাবানকে মিলিয়ে একসাথে পুরো দু মাস বিশেষভাবে রোজা রাখা অথবা ইতিকাফ করার সমর্থনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবিগণ, কিংবা মুসলিমদের ইমামগণের পক্ষ থেকে কোন প্রমাণ নেই। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে রোজা রাখতেন। তিনি রমজান মাসের আগমনের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোজা রাখতেন রমজান ছাড়া বছরের অন্য কোন মাসে এত রোজা রাখতেন না। [বুখারী, কিতাবুস সাওম, মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম]
রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোজা রাখার ব্যাপারে কিছু হাদিস দুর্বল আর অধিকাংশই বানোয়াট। আহলে ইলমগণ এগুলোর প্রতি নির্ভর করেন না। এগুলো সে সকল দুর্বল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয় যেগুলো ফজিলতের ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়। বরং অধিকাংশই মিথ্যা ও বানোয়াট। রজব মাসের ফজিলতে সব চেয়ে বেশি যে হাদিসটি বর্ণনা করা হয় সেটা হল এই দু্আটি:
اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان
“হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে রজব ও শাবানে বরকত দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছাও।” [মুসনাদ আহমদ, ১/২৫৯], এ হাদিসটি দুর্বল।
এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন মুনকারুল হাদিস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, “চিনি না এই ব্যক্তি কে?” আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে তার সম্পর্কে বলেন, মুনকারুল হাদিস। কুনা গ্রন্থে বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন, তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব ৩/৩০]
ইবনে তাইমিয়া রহ. আরও বলেন, “রজব মাসকে বিশেষ সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত যা বর্জন করা উচিৎ। রজব মাসকে বিশেষভাবে রোজার মওসুম হিসেবে গ্রহণ করাকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ অন্যান্য ইমামদের নিকটে অপছন্দনীয়।” [ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, ২য় খণ্ড, ৬২৪ ও ৬২৫ পৃষ্ঠা]
- ইবনে রজব বলেন, রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোজা রাখার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিংবা সাহাবিদের থেকে কোন কিছুই সহীহ ভাবে প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু আবু কিলাবা থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে, “যারা রজবে বেশি বেশি রোজা রাখবে তাদের জন্য জান্নাতে প্রাসাদ রয়েছে।” এই কথাটির ব্যাপারে ইমাম বায়হাকী বলেন, আবু কিলাবা একজন বড় মাপের তাবেঈ। তার মত ব্যক্তি হাদিসের তথ্য না পেলে এমন কথা বলতে পারেন না।
কিন্তু এ কথার প্রতি উত্তরে বলা যায় যে, ইসমাইল আল হারাবী, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী প্রমুখ আলেমগণ এ মর্মে একমত যে, রজব মাসকে কেন্দ্র করে রোজা রাখার ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন সহীহ হাদিস প্রমাণিত হয়নি। এ মর্মে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু হল যঈফ আর অধিকাংশই বানোয়াট।
- আবু শামা রহ. বলেন, কোন ইবাদতকে এমন কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিৎ নয় শরিয়ত যেটা নির্দিষ্ট করে নি। বরং ইসলামি শরিয়ত যে সময় যে ইবাদত নির্ধারণ করেছে সেটা ছাড়া যে কোন ইবাদত যে কোন সময় করা যাবে। এক সময়কে অন্য সময়ের উপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। ইসলামি শরিয়তে বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশেষ কিছু’ ইবাদতের জন্য। ঐ সময়গুলোতে ঐ ইবাদতগুলোই ফজিলত পূর্ণ; অন্য কোন ইবাদত নয়। যেমন: আরাফাহর দিনে রোজা রাখা, আশুরার দিনে রোজা রাখা, গভীর রাতে নফল নামাজ পড়া, রমজান মাসে উমরা আদায় করা।
অনুরূপভাবে এমন বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে যেগুলোতে ‘যে কোন ধরণের’ নেকির কাজ করার ফজিলত রয়েছে। যেমন: জিলহজমাসের প্রথম দশ দিন, লাইলাতুল কদর যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই রাতে যে কোন ইবাদতই করা হোক তা অন্য হাজার মাসের চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ। মোটকথা, বিশেষ কোন সময়কে বিশেষ কোন ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করার অধিকার কেবল ইসলামি শরিয়তই সংরক্ষণ করে; অন্য কোন ব্যক্তি নয়। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন। [আল বায়িস, পৃষ্ঠা নং ৪৮] [আল বিদা আল হাউলিয়া গ্রন্থ থেকে অনুদিত]
সুতরাং রজব মাসে বিশেষ ইবাদত করা বা রজব মাসকে আলাদাভাবে সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। তবে কেউ যদি সব অন্যান্য মাসে নফল নামাজ, নফল রোজা, দান সদকা ইত্যাদি ইবাদত করে থাকে তাহলে এ মাসেও তা অব্যহত রাখতে পারে। মোটকথা, এ মাসকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে আলাদা কোন ধরণের ইবাদত করা ঠিক হবে না। কেননা তা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। আল্লাহু আলাম।