লগইন করুন
আল্লাহর প্রতি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত চারটি জিনিস:
১. আল্লাহ তা‘য়ালার অস্তিত্বের প্রতি ঈমান আনা:
আল্লাহ তা‘য়ালা প্রতিটি সৃষ্টিজীবকে তার সৃষ্টিকর্তার প্রতি ফিতরতী তথা স্বভাবগতভাবে ঈমান আনার জন্য সৃষ্টি করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘য়ালা এরশাদ করেন:
فَاَقِمۡ وَجۡهَکَ لِلدِّیۡنِ حَنِیۡفًا ؕ فِطۡرَتَ اللّٰهِ الَّتِیۡ فَطَرَ النَّاسَ عَلَیۡهَا ؕ لَا تَبۡدِیۡلَ لِخَلۡقِ اللّٰهِ
‘‘তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই।’’ [সূরা রূম: ৩০]
বিবেক প্রমাণ করে যে, এ জগতের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। পূর্বের ও পরের সকল সৃষ্টি জগতের জন্য একজন সৃষ্টির্কতা অবশ্যই প্রয়োজন, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। এটা অসম্ভব যে, তারা নিজেরা নিজকে সৃষ্টি করেছে। আর না আকস্মিকভাবে সবকিছু হয়ে গেছে। অতএব, প্রমাণ হলো যে, এ সবের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। আর তিনিই হলেন রববুল ‘আলামীন ‘আল্লাহ্’। যেমন তিনি এরশাদ করেছেন:
اَمۡ خُلِقُوۡا مِنۡ غَیۡرِ شَیۡءٍ اَمۡ هُمُ الۡخٰلِقُوۡنَ ﴿ؕ۳۵﴾ اَمۡ خَلَقُوا السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ ۚ بَلۡ لَّا یُوۡقِنُوۡنَ ﴿ؕ۳۶﴾
‘‘তারা কি আপনা-আপনিই সৃজিত হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? না তারা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করে না।’’ [ সূরা তূর: ৩৫-৩৬ ]
মানুষের অনুভূতি প্রমাণ করে আল্লাহর অস্তিত্বের; কারণ আমরা দেখি দিন-রাত্রির আবর্তন-পরিবর্তন, মানুষ ও জীবজন্তুর রিজিক ও সৃষ্টি জগতের ব্যবস্থাপনা। এসব আল্লাহর অস্তিত্বের অকাট্য ও চূড়ান্ত প্রমাণ।
আল্লাহর বাণী:
یُقَلِّبُ اللّٰهُ الَّیۡلَ وَ النَّهَارَ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَعِبۡرَۃً لِّاُولِی الۡاَبۡصَارِ ﴿۴۴﴾
‘‘আল্লাহ দিন-রাত্রি আবর্তন-বিবর্তন করেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে বিচক্ষণদের জন্য রয়েছে শিক্ষা।’’ [সূরা নূর: ৪৪ ]
আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর নবী-রসূলগণকে বিভিন্ন ধরণের নির্দশনাবলী ও বহু মু'জেযা দ্বারা সুদৃঢ় করেছেন যা মানুষ দেখেছে। অথবা যেসব জিনিস মানুষের শক্তির বাইরে তা শুনেছে। ঐ সকল জিনিস দ্বারা আল্লাহ তাঁর নবী-রসূলগণকে সাহায্য ও শক্তিশালী করেছেন। আর এসব চূড়ান্ত প্রমাণ করে যে, তাঁদের একজন প্রেরণকারী আছেন। আর তিনিই হলেন আল্লাহ। যেমনভাবে আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রতি আগুনকে ঠান্ডা ও শান্তি করে দিয়েছিলেন। আর মূসা (আঃ)-এর জন্য সাগরকে লাঠির আঘাতে রাস্তা করে দিয়েছিলেন এবং ঈসা (আঃ)-এর জন্য মৃতুদের জীবিত করে দিয়েছিলেন। আর মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্য চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত করে দিয়েছিলেন।
قَالَتۡ رُسُلُهُمۡ اَفِی اللّٰهِ شَکٌّ فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ یَدۡعُوۡکُمۡ لِیَغۡفِرَ لَکُمۡ مِّنۡ ذُنُوۡبِکُمۡ
‘‘তাদের রসূলগণ বলেছিলেন: আল্লাহ সম্পর্কে কি সন্দেহ আছে, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন, যাতে তোমাদের কিছু পাপ ক্ষমা করেন।’’ [সূরা ইবরাহীম:১০]
আল্লাহ তা‘য়ালা কত আহববানকারীর ডাকে সাড়া দিয়েছেন, সওয়ালকারীদের উত্তর দিয়েছেন ও বিপদগ্রস্তদের বিপদ দূর করেছেন। নিঃসন্দেহে এসব আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর জ্ঞান ও শক্তি সম্পর্কে অকাট্য দলিল।
আল্লাহর বাণী:
اِذۡ تَسۡتَغِیۡثُوۡنَ رَبَّکُمۡ فَاسۡتَجَابَ لَکُمۡ اَنِّیۡ مُمِدُّکُمۡ بِاَلۡفٍ مِّنَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ مُرۡدِفِیۡنَ ﴿۹﴾
‘‘তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করেছিলে স্বীয় রবের নিকট, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদিগকে সাহায্য করব ধারাবাহিকভাবে আগত হাজার ফেরেশতার মাধ্যমে।’’ [ সূরা আনফাল:৯]
আরো আল্লাহর বাণী:
وَ اَیُّوۡبَ اِذۡ نَادٰی رَبَّهٗۤ اَنِّیۡ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَ اَنۡتَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ ﴿ۚۖ۸۳﴾ فَاسۡتَجَبۡنَا لَهٗ فَکَشَفۡنَا مَا بِهٖ مِنۡ ضُرٍّ وَّ اٰتَیۡنٰهُ اَهۡلَهٗ وَ مِثۡلَهُمۡ مَّعَهُمۡ رَحۡمَۃً مِّنۡ عِنۡدِنَا وَ ذِکۡرٰی لِلۡعٰبِدِیۡنَ ﴿۸۴﴾
‘‘আর স্মরণ করুন আইয়ূবের কথা, যখন তিনি তাঁর রবকে আহবান করে বলেছিলেন: আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান। অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁর দুঃখকষ্ট দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবারবর্গকে ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশত; আর এটা ইবাদতকারীদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ।’’ [সূরা আম্বিয়া: ৮৩-৮৪ ]
শরীয়ত প্রমাণ করে আল্লাহর অস্তিত্বের উপর; কারণ আহকামসমূহ সৃষ্টির কল্যাণ সম্মত। যেগুলো আল্লাহ তাঁর কিতাবসমূহে নবী-রসূলগণের প্রতি অবতরণ করেছেন। আর এসকল প্রমাণ করে যে, এসব প্রজ্ঞাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে। তিনি শক্তিশালী এবং তাঁর বান্দার কল্যাণ সম্পর্কে জ্ঞাত।
২. আল্লাহর রবূবিয়াতে তথা তাঁর কার্যাদিতে তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই এর প্রতি ঈমান আনা:
রব তিনিই যাঁর সৃষ্টি, রাজত্ব ও আদেশ-নিষেধ। সুতরাং, আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কারো সৃষ্টি নেই এবং মালিকত্ব ও কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই।
তিনি পরাক্রমশালী, দয়ালু, মুখাপেক্ষীহীন ও প্রশংসিত। তাঁর নিকট কেউ দয়া ভিক্ষা চাইলে দয়া করেন। আর ক্ষমা চাইলে মাফ করেন। কেউ চাইলে দান করেন আর যে তাঁকে ডাকে তার ডাকে সাড়া দেন। তিনি চিরঞ্জীব ও তন্দ্রা-নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না।
১. আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী:
اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّهَارَ یَطۡلُبُهٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِهٖ ؕ اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۵۴﴾
‘‘নিশ্চই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক’’ [সূরা আ‘রাফ:৫৪]
২. আরো আল্লাহর বাণী:
لِلّٰهِ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ مَا فِیۡهِنَّ ؕ وَ هُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۱۲۰﴾
‘‘নভোমন্ডল, ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সবকিছুর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।’’ [ সূরা মায়েদা: ১২০]
একিনের সাথে আমরা অবগত আছি যে, আল্লাহ সকল সৃষ্টিজীবের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। তিনিই সবকিছুর উদ্ভাবনকারী, আকৃতি দানকারী, আসমান-জমিন সৃষ্টিকারী। তিনিই সৃষ্টি করেছেন চন্দ্র-সূর্য, দিন-রাত, পানি ও উদ্ভিদসমূহ। আরো সৃষ্টি করেছেন মানব-দানব, জীবজন্তু, পাহাড়-পর্বতমালা। আর তিনি প্রতিটি জিনিস তাঁরই নির্দেশে পরিমিতভাবে সৃজন করেছেন।
আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী:
الَّذِیۡ لَهٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ لَمۡ یَتَّخِذۡ وَلَدًا وَّ لَمۡ یَکُنۡ لَّهٗ شَرِیۡکٌ فِی الۡمُلۡکِ وَ خَلَقَ کُلَّ شَیۡءٍ فَقَدَّرَهٗ تَقۡدِیۡرًا ﴿۲﴾
‘‘তিনি হলেন যাঁর রয়েছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব। তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। রাজত্বে তাঁর কোন অংশীদার নেই। তিনিই প্রত্যেক বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে নির্দিষ্ট করেছেন পরিমিতভাবে।’’ [সূরা ফুরকান: ২]
আল্লাহ তাঁর শক্তি দ্বারা প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কোন মন্ত্রী, পরামর্শদাতা বা সাহায্যকারী নেই। তিনি একক, মহাপরাক্রমশালী। নিজ শক্তিতে তিনি আরশে আযীমের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। আর জমিনকে স্বেচ্ছায় বিছিয়েছেন এবং সকল মখলুককে নিজের ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁর শক্তি দ্বারা বান্দাদেরকে অধীনস্ত করেছেন। পূর্ব-পশ্চীমের প্রতিপালক তিনি। তিনি ছাড়া নেই কোন সত্য ইলাহ্। তিনি চিরঞ্জীব।
আমরা জানি ও একিন রাখি যে, আল্লাহ তা‘য়ালা সবকিছুর উপর ক্ষমাতাবান ও ব্যাপৃতকারী। তিনিই একমাত্র সবার প্রতিপালক। তিনি সবকিছু জানেন ও প্রতিটি জিনিসের উপর পরাক্রমশালী। তাঁর বড়ত্বের কাছে সকল গর্দান নত হয়েছে। তাঁর ভয়ে সকল আওয়াজ নিচু হয়েছে, তাঁর শক্তির সামনে সকল শক্তিধারা অবনত হয়েছে। তাঁকে চর্মচুক্ষ দ্বারা কেউ দেখতে পারে না। কিন্তু তিনি সবাইকে দেখতে পান। আল্লাহ অতি দয়ালু ও সর্বজ্ঞ। যা ইচ্ছা তাই করেন। যা ইচ্ছা তাই ফয়সালা করেন। তিনি কিছু করতে চাইলে শুধু বলেন: হও, আর সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে যায়।
আল্লাহর বাণী:
اِنَّمَاۤ اَمۡرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَیۡئًا اَنۡ یَّقُوۡلَ لَهٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ ﴿۸۲﴾
‘‘তিনি যখন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘‘হও’’ তখনই তা হয়ে যায়।’’ [সূরা ইয়াসীন:৮২]
আসমান-জমিনে যা আছে সবই তিনি জানেন। অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সবই তিনি জানেন। তিনি মহান ও মহিয়ান। তিনি পর্বতমালার পরিমাণ ও সাগরসমূহের পরিমাপ অবহিত আছেন। আরো জানেন বৃষ্টির বিন্দুসমূহের পরিমাণ। জানেন গাছের পাতা ও বালির অণুর সংখ্যা। তিনি জানেন তাদেরকে যাদের উপর রাত্রি তার অন্ধকার বিস্তার ঘটিয়েছে ও দিন তার আলো বিকশিত করেছে।
আল্লাহর বাণী:
وَ عِنۡدَهٗ مَفَاتِحُ الۡغَیۡبِ لَا یَعۡلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَ ؕ وَ یَعۡلَمُ مَا فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ ؕ وَ مَا تَسۡقُطُ مِنۡ وَّرَقَۃٍ اِلَّا یَعۡلَمُهَا وَ لَا حَبَّۃٍ فِیۡ ظُلُمٰتِ الۡاَرۡضِ وَ لَا رَطۡبٍ وَّ لَا یَابِسٍ اِلَّا فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۵۹﴾
‘‘তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এগুলো তিনি ব্যতীত আর কেউ জানে না। জলে-স্থলে যা কিছু আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্যকণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আদ্র ও শুষ্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।’’ [সূরা আন‘আম:৫৯]
আমরা আরো জানি ও একিন রাখি যে, আল্লাহ তা‘য়ালা প্রতিদিন তাঁর বিশেষ অবস্থায় বিরাজমান। আসমান-জমিনের কিছুই তাঁর নিকট গোপন থাকে না। তিনি মহাব্যবস্থাপক, তিনিই বাতাস প্রেরণ করেন, বৃষ্টি বর্ষণ করেন, মৃত জমিনকে জীবিত করেন। যাকে ইচ্ছা সম্মান দেন আর যাকে ইচ্ছা অপদস্ত করেন। তিনিই জীবন-মরণ দান করেন। তিনিই দানশীল ও বঞ্চিতকারী। তিনিই উত্থান-পতনকারী।
আল্লাহর বাণী:
قُلِ اللّٰهُمَّ مٰلِکَ الۡمُلۡکِ تُؤۡتِی الۡمُلۡکَ مَنۡ تَشَآءُ وَ تَنۡزِعُ الۡمُلۡکَ مِمَّنۡ تَشَآءُ ۫ وَ تُعِزُّ مَنۡ تَشَآءُ وَ تُذِلُّ مَنۡ تَشَآءُ ؕ بِیَدِکَ الۡخَیۡرُ ؕ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۲۶﴾ فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُوۡلٍ حَسَنٍ وَّ اَنۡۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا ۙ وَّ کَفَّلَهَا زَکَرِیَّا ۚؕ کُلَّمَا دَخَلَ عَلَیۡهَا زَکَرِیَّا الۡمِحۡرَابَ ۙ وَجَدَ عِنۡدَهَا رِزۡقًا ۚ قَالَ یٰمَرۡیَمُ اَنّٰی لَکِ هٰذَا ؕ قَالَتۡ هُوَ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَرۡزُقُ مَنۡ یَّشَآءُ بِغَیۡرِ حِسَابٍ ﴿۳۷﴾
‘‘বলুন হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যার যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দাও। আর তুমিই জীবিতদের ভেতর থেকে মৃতদের বের কর এবং মৃতদের ভেতর থেকে বের কর জীবতদের। আর তুমিই যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিজিক দান কর।’’ [সূরা আল-ইমরান:২৬-২৭]
আমরা আরো জানি ও একিন রাখি যে, আসমান-জমিনের ভান্ডারসমূহ একমাত্র আল্লাহর জন্যই। অস্তিত্বে যা কিছু আছে সবার ভান্ডার আল্লাহর নিকটে। পানির ভান্ডার, উদ্ভিদের ভান্ডার, হাওয়া-বাতাসের ভান্ডার, খনিজ পদার্থের ভান্ডার, সুস্থতার ভান্ডার, নিরাপত্তার ভান্ডার, শান্তির ভান্ডার, শক্তির ভান্ডার, দয়ার ভান্ডার, হেদায়েতের ভান্ডার, সম্মান-মর্যাদার ভান্ডার। উল্লেখিত এ ছাড়াও যত ভান্ডার আছে সবই আল্লাহর নিকটে ও তাঁর হাতে।
আল্লাহর বাণী:
وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا عِنۡدَنَا خَزَآئِنُهٗ ۫ وَ مَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعۡلُوۡمٍ ﴿۲۱﴾
‘‘আমার কাছে প্রত্যেক বস্ত্তর ভান্ডার রয়েছে। আমি নির্দিষ্ট পরিমাণেই তা অবতারণ করি।’’ [সূরা হিজর: ২১]
যখন আমরা ইহা অবগত হলাম ও আমাদের একিন হলো আল্লাহর কুদরত, বড়ত্ব, মহিমা, জ্ঞান ভান্ডার, দয়া, ও তাঁর একত্ববাদ সম্পর্কে, তখন তাঁর ইবাদতের জন্য অন্তর তাঁর দিকেই ধাবিত হবে এবং অন্তর খুলে যাবে। শরীরের অঙ্গ-পত্যঙ্গগুলো তাঁর আনুগত্বের জন্য নত হবে। তাঁর বড়ত্ব, মহিমা, ও পবিত্রতা ও প্রশংসায় মুখরিত হবে।
সুতরাং, তাঁর নিকট ছাড়া অন্যের নিকট চেয়ো না এবং সাহায্য একমাত্র তাঁরই নিকটে চাও। ভরসা একমাত্র তাঁরই উপর রাখ। তাকে ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করো না এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত কর।
আল্লাহর বাণী:
ذٰلِکُمُ اللّٰهُ رَبُّکُمۡ ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ خَالِقُ کُلِّ شَیۡءٍ فَاعۡبُدُوۡهُ ۚ وَ هُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ وَّکِیۡلٌ ﴿۱۰۲﴾
‘‘তিনিই আল্লাহ্ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তারই ইবাদত কর। তিনি প্রত্যেক বস্ত্তর কার্যনির্বাহী।’’ [ সূরা আন‘আম: ১০২]
৩. আল্লাহর উলূহিয়াত-এর প্রতি ঈমান:
আমরা জানি এবং একিন রাখি যে, আল্লাহই একমাত্র সত্য ইলাহ্ যাঁর কোন শরিক নেই। তিনিই একমাত্র ইবাদতের হকদার। তিনিই বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক ও সকল জগতের মা’বূদ। শরীয়ত মোতাবেক পূর্ণ বিনয় ও মহববত এবং সম্মানের সাথে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করব।
আমরা আরো জানি ও একিন রাখি যে, নিশ্চয় আল্লাহ যেমন তাঁর রবূবিয়াতে (কাজে) একক তাঁর কোন শরিক নেই। তেমনি তিনি একক তাঁর উলূহিয়াতে তথা ইবাদতে তাঁর কোন শরিক নেই। অতএব, আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করব এবং তাঁর সাথে কোন প্রকার শরিক করব না। আর তিনি ছাড়া অন্য সকলের ইবাদত করা থেকে দূরে থাকব।
আল্লাহর বাণী:
وَ اِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۶۳﴾
‘‘আর তোমাদের ইলাহ্ একজন মাত্র। তিনি ছাড়া নেই কোন সত্য ইলাহ। তিনি পরম দয়ালু মেহেরবান।’’ [সূরা বাকারা:১৬৩]
আল্লাহ ছাড়া যত মা‘বূদ রয়েছে তাদের উলূহিয়াত বাতিল এবং তাদের ইবাদতও বাতিল।
আল্লাহর বাণী:
ذٰلِکَ بِاَنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡحَقُّ وَ اَنَّ مَا یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهٖ هُوَ الۡبَاطِلُ وَ اَنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡکَبِیۡرُ ﴿۶۲﴾
‘‘এটা এ কারণেও যে, আল্লাহই সত্য; আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তা অসত্য এবং আল্লাহই সবার উচ্চে, মহান।’’ [সূরা হাজ্ব : ৬২]
৪. আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রতি ঈমান:
এর অর্থ হলো: এগুলোর অর্থ জানা, মুখস্ত করা ও স্বীকার করা। আর এ সমস্ত নাম ও গুণাবলী দ্বারা আল্লাহর ইবাদত এবং সে মোতাবেক আমল করা। আল্লাহর বড়ত্ব ও সম্মান-মর্যাদা জানার মাধ্যমে বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভয় ও সম্মানে ভরে যায়।
আল্লাহর মর্যাদা, মহিমা ও শক্তিমত্তা জানার মাধ্যমে অন্তরে নমনীয়তায় ভরে যায়। আর আল্লাহর সামনে নিজেকে বিলিন করে দেয়।
আল্লাহর দয়া ও দানশীলতা এবং মহানুভবতার গুণাবলী জানার ফলে অন্তরে আল্লাহর অনুকম্পা ও এহসানের প্রতি প্রবল আগ্রহ ও ইচ্ছা জন্মে।
আল্লাহর জ্ঞান ও সবকিছুকে ব্যাপৃত করার গুণ জানার ফলে বান্দার প্রতিটি চলাফেরায় তাঁর প্রতিপালকের পর্যবেক্ষণ ওয়াজিব হয়ে পড়ে।
এ সকল গুণাবলী বান্দার জন্য তাঁর প্রতিপালককে ভালোবাসা ওয়াজিব করে দেয়। তাঁর প্রতি আগ্রহ জন্মে এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদতের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ করে।
আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর নিজের জন্য যে সকল গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন সেগুলো আমরা সাব্যস্ত করব। এ ছাড়া রসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর জন্য যে সকল নাম ও গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন সেগুলোও সাব্যস্ত করব। এ গুলোর প্রতি ঈমান রাখব এবং এগুলোর যে অর্থ ও প্রভাব সেগুলোর উপরেও ঈমান আনব। অতএব, ঈমান আনব যে, আল্লাহ রহীম যার অর্থ তিনি দয়াশীল। আর এই নামের প্রভাব হলো তিনি যাকে চান তার প্রতি দয়া করেন। এরূপ বাকি সকল নামের ব্যাপারেও করব। আর আল্লাহ -এর জন্যে যেমন উপযোগী সে ভাবেই সাব্যস্ত করব। এর মধ্যে কোনরূপ পরীবর্তন বা অর্থ বিকৃতি কিংবা কারো মত বা সদৃশ সাব্যস্ত করব না।
যেমন আল্লাহর বাণী:
لَیۡسَ کَمِثۡلِهٖ شَیۡءٌ ۚ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ﴿۱۱﴾
‘‘তাঁর সদৃশ কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’’ [সূরা শূরা:১১]
আমরা একিন সহকারে অবহিত যে, আল্লাহ একক, তাঁর সুন্দর নাম ও উচ্চমানের গুণাবলী রয়েছে আমরা তার মাধ্যমে তাঁকে ডাকি।
আল্লাহর বাণী:
وَ لِلّٰهِ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی فَادۡعُوۡهُ بِهَا ۪ وَ ذَرُوا الَّذِیۡنَ یُلۡحِدُوۡنَ فِیۡۤ اَسۡمَآئِهٖ ؕ سَیُجۡزَوۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۸۰﴾
‘‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নামসমূহ। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।’’ [সূরা আ‘রাফ:১৮০]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:্র إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا، مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا، مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ متفق عليه.
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে, একটি কম একশত। যে ব্যক্তি এগুলো আয়ত্ব করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[1]
আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলীর রোকনসমূহ:
আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলীর প্রতি ঈমান তিনটি উসুলের প্রতি প্রতিষ্ঠ:
প্রথমত: আসমান-জমিনের সৃষ্টিকর্তাকে তাঁর সত্ত্বায় ও নামসমূহ ও গুণাবলীতে সৃষ্টিকুলের সাথে সদৃশ থেকে পবিত্র করা।
দ্বিতীয়ত: আল্লাহ যা দ্বারা নিজেকে অথবা তাঁর রসূল (সা.) আল্লাহকে যে সকল নামসমূহ ও গুণাবলী দ্বারা ভূষিত করেছেন তার প্রতি ঈমান রাখা।
তৃতীয়ত: আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলীর ধরণ জানতে পারার ইচ্ছাকে বিলুপ্ত করা। তাই আল্লাহর সত্ত্বার ধরণ যেমন আমরা জানি না তেমনি তাঁর নামসমূহ ও গুণাবলীর ধরণও জানি না।
যেমন আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী:
لَیۡسَ کَمِثۡلِهٖ شَیۡءٌ ۚ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ﴿۱۱﴾
‘‘তাঁর অনুরূপ সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি শুনেন, দেখেন।’’ [সূরা শূরা:১১]