লগইন করুন
মসজিদে পুরুষদের সাথে সালাত আদায়ের জন্য নারীদের ঘর থেকে বের হওয়া বৈধ, তবে তাদের সালাত তাদের ঘরেই উত্তম। ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا تمنعوا إماء الله مساجد الله«
“তোমরা আল্লাহর বান্দিদেরকে আল্লাহর মসজিদ থেকে নিষেধ করো না”।[1]
অপর হাদীসে তিনি বলেন:
»لا تمنعوا النساء أن يخرجن إلى المساجد، وبيوتهن خير لهن«
“নারীরা মসজিদে যাবে তোমরা নিষেধ করো না, তবে তাদের জন্য তাদের ঘরই উত্তম”।[2]
উল্লেখ্য পর্দার জন্য নারীদের ঘরে অবস্থান ও তাতে সালাত আদায় করাই তাদের জন্য উত্তম।
সালাতের জন্য মসজিদে যাওয়ার সময় নিম্নোক্ত আদবগুলো মেনে চলবে:
নারী স্বীয় কাপড় ও পরিপূর্ণ পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত থাকবে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
»كان النساء يصلين مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم ينصرفن متلفعات بمروطهن ما يعرفن من الغلس«
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নারীরা সালাত পড়ত, অতঃপর তারা তাদের চাদর দিয়ে আচ্ছাদিত হয়ে ফিরে যেত, অন্ধকারের জন্য তাদেরকে চেনা যেত না”।[3]
সুগন্ধি ব্যবহার করবে না: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»لا تمنعوا إماء الله مساجد الله، وليخرجن تفلات«
“আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মসজিদে নিষেধ করো না, আর অবশ্যই তারা সুগন্ধি ত্যাগ করে বের হবে”।[4]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»أيما امرأة أصابت بخورا فلا تشهدن معنا العشاء الآخرة«
“যে নারী সুগন্ধি স্পর্শ করেছে, সে আমাদের সাথে এশায় উপস্থিত হবে না”।[5]
ইমাম মুসলিম রহ. বর্ণনা করেন, ইবন মাস‘উদের স্ত্রী যায়নাব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন:
»إذا شهدت إحداكن المسجد فلا تمس طيبا«
“তোমাদের কেউ যখন মসজিদে উপস্থিত হয়, সুগন্ধি স্পর্শ করবে না”।[6]
ইমাম শাওকানী রহ. ‘নাইলুল আওতার’: (৩/১৪০ ও ১৪১) গ্রন্থে বলেন: এসব দলীল প্রমাণ করে, নারীদের মসজিদে যাওয়া বৈধ যদি তার সাথে ফিতনা ও ফিতনাকে জাগ্রতকারী বস্তু না থাকে, যেমন সুগন্ধি জাতীয় বস্তু ইত্যাদি। তিনি আরো বলেন: হাদীস প্রমাণ করে যে, পুরুষরা নারীদেরকে তখন অনুমতি দিবে যখন তাদের বের হওয়ার মধ্যে ফিতনার আশঙ্কা নেই। যেমন সুগন্ধি অথবা অলঙ্কার অথবা সৌন্দর্যহীন অবস্থায়”। সমাপ্ত।
নারীরা কাপড় ও অলঙ্কার দ্বারা সুসজ্জিত হয়ে বের হবে না: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
«لَوْ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى مِنَ النِّسَاءِ مَا رَأَيْنَا، لَمَنَعَهُنَّ مِنَ الْمَسَاجِدِ، كَمَا مَنَعَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ نِسَاءَهَا»
“নারীরা যা আবিস্কার করেছে বলে আমরা দেখছি তা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেতেন তাহলে অবশ্যই তাদেরকে মসজিদ থেকে নিষেধ করতেন। যেমন বনু ইসরাইলরা তাদের নারীদের নিষেধ করেছে”।[7] [বুখারী ও মুসলিম তবে এটি মুসনাদে আহমাদের শব্দ]
ইমাম শাওকানী রহ. ‘নাইলুল আওতার’ গ্রন্থে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কথা (নারীরা যা আবিস্কার করেছে বলে আমরা দেখছি তা যদি রাসূলুল্লহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেতেন) প্রসঙ্গে বলেন: অর্থাৎ সুন্দর পোশাক, সুগন্ধি, সৌন্দর্য চর্চা ও বেপর্দা। বস্তুত নবী যুগে নারীরা বের হত উড়না, কাপড় ও মোটা চাদর পেঁচিয়ে”।
ইমাম ইবনুল জাওযী রহ. বলেন: “নারীদের উচিত যথাসম্ভব ঘর থেকে বের না হওয়া, যদিও সে নিজের ব্যাপারে নিরাপদ হয়, কিন্তু মানুষেরা তার থেকে নিরাপদ নয়। যদি বের হওয়ার একান্ত প্রয়োজন হয়, তাহলে স্বামীর অনুমতি নিয়ে অপরিচ্ছন্ন পোশাকে বের হবে। আর খালি জায়গা দিয়ে হাঁটবে, প্রধান সড়ক ও বাজার দিয়ে হাঁটবে না, কণ্ঠস্বর যেন কেউ না শুনে সতর্ক থাকবে, রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটবে মাঝখান দিয়ে নয়”।[8] সমাপ্ত।
[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৭
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৫; তিরমিযী, হাদীস নং ১৫৩; নাসাঈ, হাদীস নং৫৪৫; আাবু দাউদ , হাদীস নং ৪২৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৬৯; আহমদ: (৬/২৫৯), মালিক: (৪), দারেমী, হাদীস নং ১২১৬
[4] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৫; আহমদ: (২/৪৩৮), দারেমী, হাদীস নং ১২৭৯
[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪৪; নাসাঈ, হাদীস নং ৫১২৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৭৫; আহমদ: (২/২০৪)
[6] সহীহ মসুলম, হাদীস নং ৪৪৩; নাসাঈ, হাদীস নং ৫১৩৩; আহমদ: (৬/৩৬৩)
[7] বুখারি ও মুসলিম।
[8] আহকামুন নিসা (পৃ. ৩৯)