লগইন করুন
পবিত্র কুরআন বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছে যে, তাওরাত-ইঞ্জিলের মধ্যে মুহাম্মাদ (ﷺ) বিষয় ভবিষ্যদ্বাণী বিদ্যমান। এ জাতীয় একটা বক্তব্য নিম্নরূপ:
‘‘মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল; তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকূ’ ও সিজ্দায় অবনত দেখবেন। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সিজ্দার প্রভাবে পরিস্ফুট থাকবে; তওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপ এবং ইঞ্জীলেও তাদের বর্ণনা এরূপই। তাদের দৃষ্টান্ত একটা চারাগাছ, যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, তারপর তা শক্ত ও পুষ্ঠ হয় এবং পরে কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীর জন্য আনন্দদায়ক। এভাবে আল্লাহ্ মু’মিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরুস্কারের।’’ (সূরা-৪৮: আল-ফাতহ: আয়াত ২৯)
(ক) রুকু-সাজদা ও প্রার্থনা
এখানে কুরআন উল্লেখ করেছে যে, রুকু ও সাজদার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা মুহাম্মাদ (ﷺ) ও তাঁর সাথীদের বৈশিষ্ট এবং বিষয়টা বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান। মুসলিমরা দাবি করেন যে, যদিও খ্রিষ্টধর্মে রুকু ও সাজদার মাধ্যমে প্রার্থনার ব্যবস্থা নেই, বাইবেল প্রমাণ করে যে, এরূপ প্রার্থনাই প্রকৃত নবী ও ধার্মিকদের বৈশিষ্ট্য।
এ পুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে অনুবাদ প্রসঙ্গে আমরা ‘worship’ অনুবাদের হেরফের প্রসঙ্গে এ বিষয়ক অনেক নমুনা দেখেছি। আমরা দেখেছি যে, worship, bow down, fell on his face, fell on the ground ইত্যাদি সকল পরিভাষাই ‘সাজদা’ করা বোঝায়, তবে বাংলা অনুবাদ অনেক স্থানে তা অস্পষ্ট। বাইবেলীয় নবীদের রুকু ও সাজদা বিষয়ক কয়েকটা উদ্ধৃতি দেখুন:
(১) ইবরাহিমের সাজদা: “And Abram fell on his face: and God talked with him...” ‘‘এতে ইব্রাম সেজদায় পড়লেন, আর আল্লাহ তাঁর সংগে কথা বলতে লাগলেন।’’ (আদিপুস্তক ১৭/৩, মো.-০৬) ‘‘তখন ইব্রাম উপুড় হয়ে সেজদা করলেন; আল্লাহ তাঁর সঙ্গে আলাপ করে বললেন...।’’ (মো.-১৩)
(২) মূসা ও হারুনের সাজদা: “And Moses and Aaron went from the presence of the assembly unto the door of the tabernacle of the congregation, and they fell upon their faces” ‘‘এতে মূসা ও হারুন তাদের কাছ থেকে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে গিয়ে সেজদায় পড়লেন।’’ (গণনাপুস্তক ২০/৬, মো.-০৬)
‘‘মাবুদ মূসা ও হারুনকে বললেন, তোমরা অন্য সমস্ত লোক থেকে আলাদা হয়ে যাও, যাতে আমি তাদের এই মুহূর্তে শেষ করে দিতে পারি। কিন্তু মূসা ও হারুন সেজদায় পড়ে (fell upon their faces) বললেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি সমস্ত মানুষের জীবনদাতা। কেবল একজন মানুষ গুনাহ করেছে বলে কি তুমি গোটা ইসরাইলীয় সমাজের উপর তোমার গজব নাজেল করবে?’’ (গণনাপুস্তক ১৬/২০-২২, মো.-০৬)
(৩) দাউদের সাজদা: “Come, let us bow down in worship, let us kneel before the Lord our Maker”: ‘‘এস, আমরা সেজদা করে তাঁর ইবাদত করি; আমাদের সৃষ্টিকর্তা মাবুদের সামনে হাঁটু পাতি।’’ (জবুর ৯৫/৬, মো.-০৬)
(৪) উযাইরের সাজদা: ‘‘তখন উযায়ের মাবুদ আল্লাহ তা’লার প্রশংসা করলেন, আর সমস্ত লোক তাদের হাত তুলে বলল, ‘আমিন, আমিন’। তারপর তারা সেজদা করে মাবুদের এবাদত করল।’’ (নহিমিয়া ৮/৬, মো.-০৬)
(৫) বনি-ইসরাইলের সাজদা: ‘‘আগুন নেমে আসতে দেখে ও বাইতুল মোকাদ্দসের উপরে মাবুদের মহিমা দেখতে পেয়ে সমস্ত বনি-ইসরাইল পাথরে বাঁধানো উঠানে উবুড় হয়ে পড়ে মাবুদকে সেজদা করল (they bowed themselves with their faces to the ground) ও এই বলে তাঁর প্রশংসা করল, ‘তিনি মেহেরবান; তাঁর মহববত চিরকাল স্থায়ী’। (২ খান্দাননামা ৭/৩)
(৬) ইসা মাসীহের সাজদা: “And he went a little further, and fell on his face, and prayed, saying, O my Father, if it be possible, let this cup pass from me: nevertheless not as I will, but as thou wilt.” ‘‘পরে তিনি (যীশু) কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন এবং মুনাজাত করে বললেন, ‘আমার পিতা, যদি সম্ভব হয় তবে, এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে দূরে যাক। তবুও আমার ইচ্ছামত না হোক, তোমার ইচ্ছামতই হোক।’’ (মথি ২৬/৩৯, মো.-০৬)
পাঠক দেখছেন যে, উপরের উদ্ধৃতিগুলোতে বাংলা অনুবাদে সেজদা লেখা হলেও এখানে সেজদা না লেখে ‘উপুড় হয়ে পড়া’ লেখা হয়েছে, যদিও মূল ইংরেজিতে উপরের উদ্ধৃতিগুলোর মতই এখানে ‘fell on his face’ বলা হয়েছে।
সর্বাবস্থায়, মুসলিম গবেষকরা দাবি করেন যে, রুকু ও সাজদার মাধ্যমে প্রার্থনা বাইবেলীয় নবী ও ধার্মিকদের বৈশিষ্ট্য, যা মুহাম্মাদ (ﷺ) ও তাঁর অনুসারীদের অন্যতম পরিচয়।
(খ) চারাগাছের দৃষ্টান্ত
এখানে কুরআন বলেছে: ‘‘তাদের দৃষ্টান্ত একটা চারাগাছ, যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, তারপর তা শক্ত ও পুষ্ঠ হয় এবং পরে কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীর জন্য আনন্দদায়ক।’’
মুসলিম গবেষকরা বলেন, এ দৃষ্টান্তটাও বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান। মার্ক লেখেছেন: ‘‘আমরা কিসের সঙ্গে আল্লাহর রাজ্যের তুলনা করবো? কোন দৃষ্টান্ত দ্বারাই বা তা ব্যক্ত করবো? তা একটা সরিষা-দানার মত; সেই বীজ ভূমিতে বোনার সময়ে ভূমির সকল বীজের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র বটে, কিন্তু বপন করা হলে তা অঙ্কুরিত হয়ে সকল শাক-সবজি থেকেও বড় হয়ে উঠে এবং বড় বড় ডাল বের হয়; তাতে আসমানের পাখিগুলো তার ছায়ার নিচে বাসা বাঁধতে পারে।’’ (মার্ক ৪/৩০-৩২, মো.-১৩)