লগইন করুন
৯. ৮. ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা
পবিত্র বাইবেলে যুদ্ধ বিষয়ক উপরে আলোচিত নির্দেশনা ছাড়াও ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার অনেক শিক্ষা বিদ্যমান। এখানে এরূপ কয়েকটা নমুনা উল্লেখ করছি।
৯.৮.১. নবী এলিয় ১০২ জন ঈশ্বরের প্রজা হত্যা করলেন
বাইবেলে অধ্যয়ন করলে পাঠক দেখবেন যে, অলৌকিক কর্মকাণ্ডর দিক থেকে যীশু খ্রিষ্টের পরেই নবী এলিয়, এলিজাহ বা ইলিয়াস (Elijah/Elias)-এর নাম চলে আসে। এ মহান নবীও অনেক মানুষ হত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে কিছু হত্যা একেবারেই অকারণ ও ঠাণ্ডা মাথায় বলে প্রতীয়মান হয়। একটা বর্ণনা দেখুন।
নবী এলিয়ের সমসামিয়ক ইসরাইল রাজ্যের নবম বাদশাহ অহসিয় (Ahaziah)। তিনি আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৮৭০ থেকে ৮৫০ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তিনি বাল দেবতার পূজারী ছিলেন। নবী এলিয় বাদশাহর মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেন। বাদশাহ কিছু সৈন্যকে নির্দেশ দেন তাকে ডেকে নিয়ে যেতে। তখন অলৌকিক ক্ষমতাবলে নবী এলিয় ১০২ জন সৈন্যকে হত্যা করেন।
‘‘এর পর বাদশাহ একজন সেনাপতি ও তাঁর পঞ্চাশজন সৈন্যকে ইলিয়াসের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। ইলিয়াস তখন একটা পাহাড়ের উপর বসে ছিলেন। সেই সেনাপতি ইলিয়াসের কাছে উঠে গিয়ে বললেন, ‘ হে আল্লাহর বান্দা (man of God কেরি: হে ঈশ্বরের লোক), বাদশাহ আপনাকে নেমে আসতে বলেছেন। জবাবে ইলিয়াস সেই সেনাপতিকে বললেন, ‘আমি যদি আল্লাহরই বান্দা (ঈশ্বরের মানুষ) হই তবে আসমান থেকে আগুন নেমে এসে যেন তোমাকে ও তোমার পঞ্চাশজন সৈন্যকে পুড়িয়ে ফেলে।’ তখন আসমান থেকে আগুন পড়ে সেই সেনাপতি ও তাঁর পঞ্চাশজন সৈন্যকে পুড়িয়ে ফেলল। এই কথা শুনে বাদশাহ আর একজন সেনাপতি ও তাঁর পঞ্চাশজন সৈন্যকে ইলিয়াসের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই সেনাপতি ইলিয়াসকে বললেন, ‘হে আল্লাহর বান্দা, বাদশাহ আপনাকে এখনই নেমে আসতে বলেছেন। জবাবে ইলিয়াস বললেন, ‘আমি যদি আল্লাহরই বান্দা (ঈশ্বরের মানুষ) হই তবে আসমান থেকে আগুন নেমে এসে যেন তোমাকে ও তোমার পঞ্চাশজন সৈন্যকে পুড়িয়ে ফেলে।’ তখন আসমান থেকে আল্লাহর আগুন পড়ে সেই সেনাপতি ও তাঁর পঞ্চাশজন সৈন্যকে পুড়িয়ে ফেলল।
এর পর বাদশাহ আর একজন সেনাপতি ও তাঁর পঞ্চাশজন সৈন্যকে পাঠিয়ে দিলেন। এই তৃতীয় সেনাপতি উপরে উঠে গিয়ে ইলিয়াসের সামনে হাঁটু পেতে মিনতি করে বললেন, হে আল্লাহর বান্দা (ঈশ্বরের মানুষ), আপনি দয়া করে আমার ও আপনার এই পঞ্চাশজন গোলামের প্রাণ রক্ষা করুন। দেখুন, আসমান থেকে আগুন পড়ে প্রথম দু’জন সেনাপতি ও তাঁদের সব সৈন্যদের পুড়িয়ে ফেলেছে। কিন্তু এবার আপনি আমার প্রাণ রক্ষা করুন। তখন মাবুদের ফেরেশতা ইলিয়াসকে বললেন, ‘তুমি ওর সংগে নেমে যাও, ওকে ভয় কোরো না।’ কাজেই ইলিয়াস তাঁর সংগে নেমে বাদশাহর কাছে গেলেন।’’ (২ বাদশাহনামা ১/৯-১৫)
সুপ্রিয় পাঠক, নবী ইলিয়াস কি ঠাণ্ডা মাথায় অকারণে এতগুলো মানুষ হত্যা করলেন না? অনর্থক এতগুলো মানুষ হত্যার মাধ্যমে তিনি কিছুই অর্জন করেননি। বাদশাহর প্রতিমাপূজা বন্ধ করা বা অন্য কোনো ধর্মীয় কল্যাণ এ হত্যা থেকে ইলিয়াস অর্জন করেননি। বিশেষত এ সকল সৈন্য হুকুমের চাকর। তারা বাদশাহের হুকুম মত নবীকে ডাকতে এসেছিল। অলৌকিক ক্ষমতাধারী নবী তো মূল অপরাধী বাদশাহকে এভাবে কয়েকবার মারতে ও জীবিত করতে পারতেন। বিশেষত নবী এলিয় মৃতকে জীবিত করতেন (১ বাদশাহনামা ১৭/১৭-২৪)। অথবা উড়ে যেয়ে, অদৃশ্য হয়ে বা হত্যা ছাড়া অন্য কোনো অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করে কি তিনি বাদশাহর শাস্তি থেকে বাঁচতে পারতেন না? জালিমের উপর কারামতি দেখাতে ১০২ জন বনি-ইসরাইল বা ঈশ্বরের মনোনীত প্রজাকে হত্যা করলেন নবী এলিয়। মানুষ হত্যা কি এতই সহজ বিষয়?