লগইন করুন
বাইবেলীয় ত্রাণকর্তা, ভাববাদী ও শাসনকর্তা শামাউন বা শিমশোনের কথা আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি। তিনি দলীলা নামের একজন ফিলিস্তিনি মেয়েকে দেখে প্রেমে পড়েন এবং তাঁর কাছেই পড়ে থাকতে শুরু করেন। ফিলিস্তিনিদের অনুরোধে দলীলা তাঁকে প্রেমের ফাঁদে বেঁধে তাঁর শক্তির উৎস ও তাঁকে পরাজিত করার কৌশল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। শিমশোন তিনবার তাকে মিথ্যা বলেন। এরপর প্রেমিকার অনুরোধে তিনি প্রকৃত সত্য তাকে বলেন: Anchor‘‘আমার মাথায় কখনও ক্ষুর উঠেনি, কেননা মায়ের গর্ভ থেকে আমি আল্লাহর উদ্দেশে নাসরীয়; ক্ষৌরি হলে আমার বল আমাকে ছেড়ে যাবে এবং আমি দুর্বল হয়ে অন্য সব লোকের সমান হয়ে পড়ব।’’ (কাজীগণ ১৬/৪-১৭, কি. মো.-১৩)
যখন দলীলা বুঝতে পারল যে, শিমশোন সঠিক তথ্য তাকে প্রদান করেছেন, তখন সে ফিলিস্তিনি নেতৃবৃন্দকে খবর দেয়। সে প্রেম করে শিমশোনকে নিজ জানুর উপরে ঘুম পাড়ায়। এরপর এক জনকে ডেকে তাঁর মস্তকের সাত গুচ্ছ চুল ক্ষৌরি করায়। এতে তাঁর শক্তি তাঁকে ছেড়ে যায়। তখন ফিলিস্তিনিরা তাঁকে বন্দি করে, তাঁর দু’ চোখ উৎপাটন করে এবং তাঁকে কারাগারে আবদ্ধ রেখে অত্যাচার করতে থাকে। কারাগারে চুল ওঠার সাথে সাথে তাঁর শক্তি ফিরতে থাকে। সুযোগ পেয়ে শামাউন আত্মহত্যার মাধ্যমে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেন:
‘‘তখন ফিলিস্তিনীরা তাঁকে ধরে তাঁর চোখ দু’টা তুলে ফেলল এবং তাঁকে গাজা শহরে নিয়ে গেল। তারা তাঁকে ব্রোঞ্জের শিকল দিয়ে বাঁধল এবং জেলখানার মধ্যে তাঁকে দিয়ে জাঁতা ঘুরাবার কাজ করাতে লাগল। কিন্তু তাঁর মাথার চুল কামিয়ে ফেলবার পর আবার তা গজাতে লাগল। এরপর ফিলিস্তিনী শাসনকর্তারা তাঁদের দেবতা দাগোনের কাছে একটা মস্ত বড় উৎসর্গ করে আনন্দ করবার জন্য একজায়গায় জমায়েত হলেন। ... তারপর তারা আনন্দে মেতে উঠে এই বলে চিৎকার করল, ‘শামাউনকে বের করে আনা হোক; আমরা তামাশা দেখব।’ কাজেই তারা জেলখানা থেকে শামাউনকে বের করে আনল আর শামাউন তাদের তামাশা দেখাতে লাগলেন। তারা শামাউনকে থামগুলোর মাঝখানে দাঁড় করাল। যে ছেলেটি তাঁর হাত ধরেছিল শামাউন তাকে বললেন, ‘যে থামগুলোর উপর মন্দিরটা দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো আমাকে ছুঁতে দাও যাতে আমি হেলান দিতে পারি।’
সেই মন্দিরে অনেক পুরুষ স্ত্রীলোক জমা হয়েছিল, আর ফিলিস্তিনীদের সমস্ত শাসনকর্তাও সেখানে ছিলেন। ছাদের উপর থেকে প্রায় তিন হাজার পুরুষ ও স্ত্রীলোক শামাউনের তামাশা দেখছিল। তখন শামাউন মাবুদের কাছে মুনাজাত করে বললেন, ‘হে আল্লাহ মালিক, আমার কথা একবার মনে কর। হে আল্লাহ, দয়া করে আর একটিবার মাত্র আমাকে শক্তি দাও যাতে আমার দু’টা চোখের জন্য একবারেই আমি ফিলিস্তিনীদের উপর প্রতিশোধ নিতে পারি।’ মাঝখানে যে দু’টা থামের উপর মনিদরটা দাঁড়িয়ে ছিল শামাউন সেই দু’টা অাঁকড়ে ধরলেন। তিনি ডান হাতটা একটা থামের উপর এবং বাঁ হাতটা অন্য থামের উপর রেখে নিজের ভার থামগুলোর উপর দিলেন। তারপর চিৎকার করে বললেন, ‘‘ফিলিস্তিনীদের সাথে আমারও মৃত্যু হোক!’’ এই বলে তিনি নীচু হয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে থাম দু’টা টান দিলেন। তাতে সব শাসনকর্তা ও ভিতরকার লোকদের উপর মন্দিরটা ভেংগে পড়ল। এভাবে তিনি জীবিত থাকতে যত না লোক হত্যা করেছিলেন তার চেয়েও বেশী মারলেন তাঁর মৃত্যুর সময়ে।’’ (কাজীগণ ১৬/১৮-৩০)
এভাবেই ঈশ্বর শামাউনকে প্রতিশোধের জন্য আত্মহত্যা ও হাজার হাজার নারী ও শিশুকে হত্যা করার শক্তি দিলেন। বাইবেল লেখক ঈশ্বর বা পাক রূহ সগৌরবে এ হত্যাকাণ্ড-র কথা বর্ণনা করেছেন। তবে এ হত্যার মাধ্যমে প্রতিশোধ গ্রহণ এবং অপরাধীর সাথে নিরপরাধ নারী, পুরুষ ও শিশু হত্যা ছাড়া বনি-ইসরাইলের, ঈশ্বরের পবিত্র ধর্মের বা মানবতার কোনো উপকার হয়েছে বলে বাইবেল থেকে জানা যায় না। উল্লেখ্য যে, অধিকাংশ আধুনিক বাইবেল গবেষক একমত যে, এ কাহিনীটা কাল্পনিক এবং সূর্যোপাসক পৌত্তলিক জাতিদের পৌরাণিক কাহিনী থেকে ধার করা।[1]
আধুনিক কোনো কোনো গবেষক শামাউনের আত্মহত্যার সাথে যীশুর আত্মহত্যার তুলনা করেছেন। যীশু সব জেনেও নিজেকে হত্যা করার জন্য অপেক্ষা করেছেন। এজন্য তাদের মতে যীশু প্রকৃতপক্ষে আত্মহত্যা করেছেন। এ প্রসঙ্গে বাইবেল সমালোচক গ্যারি ডেভানি লেখেছেন:
“Samson murdered many? Yes! But, didn’t Samson, like Jesus, also commit suicide? Was Samson, with his murderous, lying, whoring character consecrated from the womb to serve God in this manner?”
‘‘শামাউন অনেক মানুষ মারলেন? হাঁ। তবে শামাউন কি যীশুর মতই আত্মহত্যা করলেন না? শামাউন তাঁর খুনি, মিথ্যাচারী, বেশ্যাগামী প্রকৃতি নিয়েই কি মায়ের পেট থেকে ঈশ্বরের জন্য পবিত্রকৃত ও উৎসর্গকৃত হয়ে জন্মেছিলেন? এ পদ্ধতিতেই কি তিনি ঈশ্বরের সেবা করলেন?’’[2]
[2] Judges and Samson: http://www.thegodmurders.com/id44.html