লগইন করুন
সুপ্রিয় পাঠক, উইকিপিডিয়ায় জেরিকো (Jericho) প্রবন্ধ থেকে জানতে পারবেন যে, বিশ্বের প্রাচীনতম মানব-বসতির অন্যতম ফিলিস্তিনের জেরিকো (কেরির অনুবাদে: যিরিহো) শহর। আর বাইবেলীয় ঈশ্বরের নির্দেশে ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্মমতম গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে এ শহরকে ধ্বংস করা হয়।
আমরা দেখেছি ও দেখব যে, বাইবেলের বিভিন্ন গণহত্যায় কিছু অযৌক্তিক ও খোঁড়া অজুহাত পেশ করেছে বাইবেল। মাদিয়ানীয়দের গণহত্যার অজুহাত তাদের কিছু মানুষ বনি-ইসরাইলের কিছু মানুষকে মূর্তিপূজায় উস্কানি দিয়েছিল। অরাদের রাজত্বে গণহত্যার কারণ তিনি কয়েকজন বনি-ইসরাইলীয়কে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাজা সীহোনের রাজ্যে গণহত্যার কারণ স্বয়ং ঈশ্বর তার মন শক্ত করে দেন ফলে তিনি মোশির প্রস্তাবে রাজি হলেন না; কাজেই তার রাজ্যের সকলকে হত্যা করা হল। বাশান দেশের গণহত্যার কারণ রাজা ওজ সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বের হয়েছিলেন। হিটলার যে যুক্তি দিয়ে ৭০ লক্ষ ইহুদি হত্যা করেছিলেন তার চেয়ে বাইবেলের এ অজুহাতগুলো মোটেও জোরালো নয়।
মজার বিষয় যে, জেরিকো শহরের গণহত্যার বিষয়ে বাইবেল এরূপ কোনো খোঁড়া অজুহাতও পেশ করেনি। কোনো কারণ ছাড়াই একটা ভীত-সন্ত্রস্ত জনপদকে ইতিহাসের বর্বরতম নির্মমতায় ধ্বংস করা হয়েছে। বাইবেলের বর্ণনা দেখুন:
‘‘জেরিকোর কাছাকাছি গেলে পর ইউসা খোলা তলোয়ার হাতে একজন লোককে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। ইউসা তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কার পক্ষের লোক- আমাদের, না আমাদের শত্রুদের?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি কারও পক্ষের লোক নই। আমি মাবুদের সৈন্যদলের সেনাপতি, এখন আমি এখানে এসেছি।’ এই কথা শুনে ইউসা মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে সম্মান দেখালেন (did worship: তাঁকে সেজদা করলেন) এবং বললেন: আমার প্রভু তাঁর গোলামকে কি কিছু বলতে চান?.... মাবুদ তখন ইউসাকে বললেন: দেখ, আমি জেরিকো শহরটা, তার বাদশাহ এবং তার সমস্ত বীর যোদ্ধাদের তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। ....যখন তোমরা শুনবে সেই ইমামেরা সিংগায় একটানা আওয়াজ তুলছে তখন সব লোকেরা খুব জোরে চিৎকার করে উঠবে। তাতে শহরের দেয়াল ধ্বসে যাবে আর তখন বনি-ইসরাইলার তার উপর দিয়ে সোজা ভিতরে ঢুকে যাবে।’ .... সপ্তম বার ঘুরবার সময় যখন ইমামেরা শিংগাতে একটানা আওয়াজ তুললেন তখন ইউসা লোকদের হুকুম দিলেন, ‘তোমরা খুব জোরে চিৎকার কর, কারণ মাবুদ শহরটা তোমাদের দিয়েছেন। শহর ও তার মধ্যেকার সব কিছু মাবুদের দেওয়া ধ্বংসের বদদোয়ার অধীন। ... সমস্ত সোনা, রূপা এবং ব্রোঞ্জ ও লোহার জিনিসপত্র মাবুদের উদ্দেশ্যে পবিত্র; সেজন্য সেগুলো তাঁর ধনভা-ারে যাবে। শিংগা বেজে উঠবার সংগে সংগে লোকের খুব জোরে চিৎকার করে উঠল। শিংগার আওয়াজে যখন লোকেরা ভীষণভাবে চিৎকার করে উঠল তখন জেরিকো শহরের দেয়াল ধ্বসে পড়ে গেল। তাতে সমস্ত লোক শহরের মধ্যে ঢুকে পড়ল এবং তা দখল করে নিল। তারা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে স্ত্রী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো, গরু, ভেড়া, গাধা ইত্যাদি সমস্ত প্রাণীদের শেষ করে দিল। ... তারপর তারা গোটা শহরটা এবং তার মধ্যেকার সব কিছু পুড়িয়ে দিল, কিন্তু সোনা, রূপা এবং ব্রোঞ্জ ও লোহার জিনিসপত্র মাবুদের ঘরের ধনভা-ারে জমা দিল।’’ (ইউসা ৫/১৩-১৪, ৬/২-৫, ১৫-২৪)
সুপ্রিয় পাঠক, বিশ্বের বর্বর বা সভ্য কোনো ইতিহাসে এরূপ নির্মম দখলদার বাহিনীর নির্দয় গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা কি আপনার জানা আছে?