লগইন করুন
নবী শামুয়েলের মাধ্যমে ঈশ্বরের মসীহ হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পরে দাউদ তালুতের হত্যা প্রচেষ্টা থেকে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। এ সময়ে নাবল নামে একজন ইসরাইলীয়র কাছে তিনি লোক পাঠিয়ে কিছু সহযোগিতা বা ‘চাঁদা’ দাবি করেন। নাবল চাঁদা দিতে অস্বীকার করে দাউদের বিষয়ে অবজ্ঞাসূচক কথা বলেন। এতে অপমানিত হয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য দাউদ শপথ করেন যে, তিনি নাবল ও তার সকল মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করবেন। এ সময়ে নাবলের স্ত্রী বিপদ অনুধাবন করে অনেক উপহার নিয়ে দাউদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং দাউদের অনেক গুণকীর্তন করেন। এ নারীর গুণকীর্তনে মুগ্ধ হয়ে দাউদ হত্যা পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেন। কিন্তু এরপরও দাউদের মন থেকে অপমানের জ্বালা ও প্রতিহিংসা দূর হয় না। দশ দিন পরে নাবাল মৃত্যু বরণ করলে দাউদ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করেন। এরপর নাবলের স্ত্রীকে বিবাহ করেন। বাইবেলের বর্ণনা দেখুন:
‘‘তখন মায়োন গ্রামে একজন খুব ধনী লোক ছিল। তার কাজকারবার ছিল কর্মিল গ্রামে। ... লোকটির নাম ছিল নাবল আর তা স্ত্রীর নাম ছিল অবীগল। স্ত্রীলোকটি বুদ্ধিমতী ও সুন্দরী ছিলেন, কিন্তু তাঁর স্বামীর ব্যবহার ছিল কর্কশ ও খারাপ। সে ছিল কালুত বংশের লোক। দাউদ সেই মরুভূমিতে থাকতেই খবর পেলেন যে, নাবল তার ভেড়ার লোম ছাটাই করছে। দাউদ তার কাছে দশজন যুবককে পাঠালেন এবং তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা কর্মিলে নাবলের কাছে যাবে এবং আমার হয়ে তাকে সালাম জানাবে এবং বলবে, ‘আপনার, আপনার পরিবারের লোকদের এবং আপনার সবকিছুর ভাল হোক। তারপর তাঁকে বলবে যে, আমি এখন শুনতে পেলাম তাঁর ওখানে লোম ছাঁটাইয়ের কাজ চলছে। তাঁর রাখালেরা যত দিন আমাদের সংগে ছিল আমরা তাদের সংগে খারাপ ব্যবহার করি নি এবং যতদিন তারা কর্মিলে ছিল তাদের কোন কিছু চুরি যায় নি। তাঁর কর্মচারীদের জিজ্ঞাসা করলেই তিনি সেই কথা জানতে পারবেন। কাজেই তিনি যেন আমার এই যুবকদের সুনজরে দেখেন, কারণ তারা তাঁর আনন্দের দিনেই তাঁর কাছে এসেছে। সেজন্য তিনি যাই পারেন তা-ই যেন তাঁর এই গোলামদের ও তাঁর সন্তান দাউদকে দান করেন।’ দাউদের লোকেরা গিয়ে দাউদের নাম বলে নাবলকে ঐসব কথা বলে অপেক্ষা করতে লাগল। জবাবে নাবল দাউদের লোকদের বলল, ‘কে এই দাউদ? আর ইয়াসিরের ছেলেই বা কে? আজকাল অনেক গোলাম তাদের মালিক ছেড়ে চলে যাচ্ছে। যারা আমার ভেড়ার লোম ছাঁটাই করছে তাদের জন্য আমি যে খাবার ও পানি রেখেছি এবং পশু জবাই করেছি তা নিয়ে কি আমি এমন লোকদের দেব যাদের সম্বদ্ধে আমার কিছুই জানা নেই?’
এই কথা শুনে দাউদের লোকেরা ফিরে গিয়ে সমস্ত কথা দাউদকে জানাল। দাউদ তাঁর লোকদেরকে বললেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে কোমরে তলোয়ার বেঁধে নাও।’ এতে তারা প্রত্যেকে কোমরে তলোয়ার বেঁধে নিল আর দাউদও তাই করলেন। তারপর প্রায় চারশো লোক দাউদের সাথে গেল আর দু’শো লোক রইল মালপত্র পাহারা দেবার জন্য.... দাউদ বলেছিলেন, মিথ্যাই আমি এই লোকটার সবকিছু সেই মরুভূমিতে পাহারা দিয়ে মরেছি, যাতে তার কোন কিছু চুরি না হয়। আমি তার উপকার করেছি, কিন্তু সে তার বদলে আমার অপকার করেছে। আল্লাহ যেমন দাউদের শত্রুদের নিশ্চয়ই ভীষণভাবে শাস্তি দেবেন তেমনি আমিও নিশ্চয়ই কাল সকাল পর্যন্ত নাবলের বাড়ীর একটি পুরুষ লোককেও বাঁচিয়ে রাখব না।’’ (১ শামুয়েল ২৫/২-২২)
কিন্তু যখন নাবলের স্ত্রী অনেক হাদিয়া তোহফা দিল এবং দাউদের গুণকীর্তন করল তখন দাউদ সিদ্ধান্ত পাল্টালেন: ‘‘দাউদ তখন অবীগলকে বললেন, ‘ইসরাইলীয়দের মাবুদ আল্লাহর প্রশংসা হোক, কারণ তিনি আজ আমার সংগে দেখা করবার জন্য তোমাকে পাঠিয়ে দিলেন। মোবারক তোমার বিচারবুদ্ধি, মোবারক তুমি, কারণ তুমি আজ আমাকে রক্তপাত করতে আর নিজের হাতে প্রতিশোধ নিতে বাধা দিলে। তোমার ক্ষতি করা থেকে যিনি আমাকে দূরে রেখেছেন সেই বনি-ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহর কসম যে, তুমি যদি তাড়াতাড়ি এসে আমার সাথে দেখা না করতে তাহলে সকাল পর্যন্ত নাবলের বাড়ীর কোন পুরুষ লোক বেঁচে থাকত না।
... এর প্রায় দশদিন পর মাবুদের শাস্তি নাবলের উপর নেমে আসলে সে মারা গেল। নাবলের মৃত্যুর খবর পেয়ে দাউদ বললেন, ‘মাবুদের প্রশংসা হোক। তিনি নাবলের বিরুদ্ধে আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, কারণ নাবল আমাকে অপমান করেছিল। অন্যায় করা থেকে তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন আর নাবলের অন্যায়কে নাবলের উপর ফিরিয়ে দিয়েছেন। পরে দাউদ অবীগলকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে দিলেন। দাউদের লোকেরা কর্মিলে অবীগলের কাছে গিয়ে বলল, ‘‘দাউদ আপনাকে বিয়ে করতে চান, সেজন্য তিনি আপনার কাছে আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। এই কথা শুনে অবীগল মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে দাউদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আমি আপনার বাঁদী; আপনার লোকদের সেবা করবার ও পা ধোয়াবার জন্য প্রস্তুত আছি।’ এই কথা বলে অবীগল তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হলেন এবং গাধায় চড়ে পাঁচজন বাঁদী নিয়ে দাউদের পাঠানো লোকদের সংগে গেলেন। সেখানে গেলে পর দাউদের সংগে তার বিয়ে হল। এর আগে দাউদ যিষ্রিয়েল গ্রামের অহীনোয়মকে বিয়ে করেছিলেন। অহীনোয়ম ও অবীগল দু’জনেই তাঁর স্ত্রী হলেন।’’ (১ শামুয়েল ২৫ অধ্যায়, বিশেষত: ২৫/৩২-৪৩)
সুপ্রিয় পাঠক, হত্যা কি এতই সহজ বিষয়! সামান্য অপমানের শাস্তি কি এরূপ গণহত্যা? ঈশ্বরের অভিষিক্ত খ্রিষ্ট বা মসীহ দাউদ কি ঈশ্বরের বিধান ও নির্দেশ মত এ হত্যাযজ্ঞের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? তাহলে একজন নারীর প্রশংসা ও উপহারে মজে গিয়ে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করলেন কেন? আবার স্ত্রী লোকটা তাকে অন্যায় থেকে বিরত রেখেছে বলে প্রশংসা করলেন কেন? তিনি কি সচেতন ছিলেন যে এ কর্মটি পাপ? তার পরও তিনি প্রতিহিংসা বশত এরূপ করছিলেন? এটাই কি বাইবেলীয় ধার্মিকতা যে ধার্মিকতার জন্য ঈশ্বর বার বার দাউদের প্রশংসা করেছেন?