লগইন করুন
আমরা দেখলাম, বনি-ইসরাইলরা তাদের ভাই বিনইয়ামীনীয়দের নির্মূল করতে এত কঠোর প্রতিজ্ঞবদ্ধ ছিলেন যে, যোদ্ধাদের নির্মূল করার পর অযোদ্ধাদেরও নির্মূল করলেন। পুরো গোষ্ঠীর দু লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে শুধু ছয় শত যোদ্ধা পালিয়ে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হলেন। বনি-ইসরাইলরা এদের হত্যা করতে পাগল ছিলেন। তাঁদের হাতে পড়লে অবশ্যই এদের মরতে হত। কিন্তু পালিয়ে বাঁচার পরে তাদের বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে পড়লেন ঘাতক ভাইয়েরা। আর এজন্য এবার তারা বনি-ইসরাইলদের কয়েক হাজার পুরুষ, নারী ও বালক-বালিকাকে হত্যা করলেন!
ধর্ষকদের শাস্তির জন্য বনি-ইসরাইলের ১১ গোষ্ঠীর যোদ্ধারা মিস্পা (Mizpeh) নামক স্থানে সমবেত হয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তাদের কোনো মেয়েকে বিনইয়ামীন গোষ্ঠীর কোনো পুরুষের সাথে বিবাহ দেবেন না। তাঁরা আরো কসম খেয়েছিলেন যে, বনি-ইসরাইলদের মধ্যে যারা মিস্পাতে মাবুদের সামনে উপস্থিত না হবে তাদের হত্যা করতে হবে। এখন ঈশ্বরের প্রজারা কঠিন সমস্যার সম্মুখীন: (ক) বেঁচে যাওয়া ৬০০ পুরুষকে যদি বিবাহ দেওয়া না যায় তবে বিনইয়ামীন গোষ্ঠী লুপ্ত হয়ে যাবে। (খ) আবার কসম ভেঙ্গে নিজেদের মেয়েদেরকে বিনইয়ামীনীয়দের সাথে বিবাহ দিলে মহাপাপ হবে।
প্রায় দু লক্ষ মানুষকে হত্যা করতে তাঁরা কাঁদেননি; তবে ৬০০ মানুষের বিবাহ ব্যবস্থার জন্য তাঁরা ঈশ্বরের কাছে কাঁদাকাটি করলেন। তখন ঈশ্বর পাপমুক্ত থেকে বিনইয়ামীন গোষ্ঠীকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করার একটাই উপায় বের করে দিলেন: মিস্পাতে যারা উপস্থিত হয়নি তাদেরকে, তাদের স্ত্রীদেরকে, তাদের শিশু-কিশোর বালক-বালিকাদেরকে হত্যা করতে হবে। শুধু তাদের কুমারী মেয়েদের ধরে বেঁচে যাওয়া ৬০০ পুরুষের সাথে জোর করে বিবাহ দিতে হবে। এতে পাপ থেকেও রক্ষা পাওয়া গেল আবার গোষ্ঠীটাও টিকে থাকল!
‘‘বনি-ইসরাইলরা আগে মিস্পাতে কসম খেয়ে বলেছিল যে, তাদের মধ্যে কেউ বিন্ইয়ামীন-গোষ্ঠীর কোন লোকের সংগে মেয়ের বিয়ে দেবে না। তাই এবার তারা বেথেলে গিয়ে মাবুদের সামনে বসে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুব জোরে জোরে কেঁদে তাঁর কাছে বলতে লাগল, ‘‘হে মাবুদ বনি-ইসরাইলদের আল্লাহ, বনি-ইসরাইলদের মধ্যে কেন এটা ঘটল? কেন আজ বনি-ইসরাইলদের মধ্যে একটা গোষ্ঠী হারিয়ে গেল? পরের দিন ভোরবেলায় লোকেরা একটা কোরবানগাহ তৈরী করে পোড়ানো আর যোগাযোগ-কোরবানী দিল। মিস্পাতে তারা এই বলে একটা কঠিন কসম খেয়েছিল যে, কেউ যদি মিস্পাতে মাবুদের সামনে উপস্থিত না হয় তবে তাকে নিশ্চয়ই হত্যা করা হবে। ... তারা তাদের ভাই বিনইয়ামীনীয়দের জন্য দুঃখ করে বলল, ‘‘ইসরাইলীয়দের মধ্য থেকে আজ একটা গোষ্ঠীকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু যারা রয়ে গেছে কিভাবে আমরা তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করব? আমরা তো আল্লাহর কসম খেয়েছি যে, আমাদের কোন মেয়েকে তাদের সংগে বিয়ে দেব না।’’ তারা একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করল, ‘‘ইসরাইলীয় গোষ্ঠীর মধ্যে কি এমন কোন লোক আছে, যে মিস্পাতে মাবুদের সামনে উপস্থিত হয় নি?’’ তখন তারা জানতে পারল, যাবেশ-গিলিয়দ থেকে কেউই সেখানে যায় নি, কারণ লোক গণনা করার সময় তারা দেখছিল যে, যাবেশ-গিলিয়দের কোন লোকই সেখানে ছিল না। কাজেই তারা তাদের শক্তিশালী যোদ্ধাদের মধ্য থেকে বারো হাজার লোক পাঠিয়ে দিল যেন তারা যাবেশ-গিলিয়দে গিয়ে ছোট ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীলোক সুদ্ধ সেখানকার সব লোকদের হত্যা করে। তারা বলল, ‘তোমরা প্রত্যেকটি পুরুষ এবং অবিবাহিত নয় এমন প্রত্যেকটি স্ত্রীলোককে মেরে ফেলবে।’ সেই যোদ্ধারা যাবেশ-গিলিয়দের বাসিন্দাদের মধ্যে চারশ যুবতী অবিবাহিতা মেয়ে পেল; তারা সেই মেয়েদের কেনান দেশের শীলোর ছাউনিতে নিয়ে গেল। এরপর সেই জমায়েত হওয়া বনি-ইসরাইলরা রিম্মোন পাহাড়ে লোক পাঠিয়ে বিনইয়ামীনীয়দের সংগে কথা বলল এবং শান্তি ঘোষণা করল। এতে বিনইয়ামীনীয়রা ফিরে আসল। যাবেশ-গিলিয়দের বাঁচিয়ে রাখা মেয়েদের সংগে তাদের বিয়ে দেওয়া হল, কিন্তু মেয়েরা সংখ্যায় কম পড়ে গেল।’’
অবশিষ্ট ২০০ পুরুষের জন্য তারা ভিন্নভাবে কুমারী মেয়ে যোগাড় করলেন। তারা এ দু’শ জনকে বনি-ইসরাইলের ঈদে আগত ইহুদি কুমারীদের জোর করে ধরে নিয়ে বিয়ে করতে শেখালেন। ‘‘তারপর তারা বলল, ‘প্রতি বছর শীলোতে মাবুদের উদ্দেশ্যে একটা ঈদ হয়।’ ... তারা বিনইয়ামীনীয়দের এই পরামর্শ দিল, ‘তোমরা গিয়ে শীলোর আংগুর খেতে লুকিয়ে থাক এবং নজর রাখ। যখন সেখানকার মেয়েরা নাচে যোগ দেবার জন্য বেরিয়ে আসবে তখন তোমরা প্রত্যেক আংগুর ক্ষেত থেকে ছুটে বেরিয়ে গিয়ে তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে ধরে নিয়ে বিনইয়ামীন এলাকায় চলে যাবে। যখন তাদের বাবা কিংবা ভাইয়েরা আমাদের কাছে নালিশ করতে আসবে আমরা তখন তাদের বলব, তোমরা এই সব মেয়েদের দান করে আমাদের পক্ষে তাদের প্রতি দয়া দেখাও। যুদ্ধের সময়ে আমরা তাদের জন্য যথেষ্ট মেয়ে পাইনি। এই ব্যাপারে তোমাদের কোন দোষ নেই, কারণ তোমরা নিজেরা তো তোমাদের মেয়েদের তাদের দাওনি।’ কাজেই বিনইয়ামীনীয়রা তাই করল। মেয়েরা যখন নাচছিল তখন তারা প্রত্যেকে বিয়ে করবার জন্য একজন করে মেয়ে ধরে নিয়ে গেল। তারপর তারা নিজেদের জায়গায় ফিরে গিয়ে শহর ও গ্রামগুলোর ঘর-বাড়ী আবার তৈরী করে নিয়ে সেখানে বাস করতে লাগল।’’ (কাজীগণ ২১/১-২৩)
সুপ্রিয় পাঠক, পবিত্র বাইবেলের ধার্মিকতা ও নৈতিকতা লক্ষ্য করুন। হত্যা, গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ এগুলো কিছুই পাপ নয়; তবে প্রতিজ্ঞাভঙ্গ পাপ! মিস্পাতে মাবুদের নিকট উপস্থিত না হওয়ার জন্য হত্যার প্রতিজ্ঞাও বড় অদ্ভুত ধার্মিকতা। হত্যা কি এতই সহজ পুণ্য! এরপরও বাইবেলীয় ধার্মিকতা ও নৈতিকতায় না হয় মেনে নেওয়া যায় যে, প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা পুণ্যকর্ম। তবে অসহায় নারী ও শিশু হত্যা!! পুরুষদের হত্যা করার পর তাদের বিধবা স্ত্রীদের বাঁচিয়ে রাখাও চলবে না। তাদের মেয়ে ও ছেলে শিশু সন্তানদের হত্যা করতে হবে! অথচ তাদেরই কুমারী মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখাতে প্রতিজ্ঞা নষ্ট হল না। ধার্মিকতার এ নমুনা অনুধাবন ও হজম করা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর!
সবচেয়ে অবাক ধার্মিকতা বিবাহের জন্য কুমারী মেয়ের বাধ্যবাধকতা! এমনকি পুরুষকে হত্যা করে বিধবা স্ত্রীকে বিবাহ করলেও চলবে না। শুধু অবিবাহিত হলেই চলবে না, কুমারী (virgin) হতেই হবে! কুমারিত্ব প্রমাণের পদ্ধতি কী ছিল? আবার জোর করে ধরে ঘরে নিলেই বিয়ে হলে গেল? মেয়েটার মতামত কিছুই নয়?