লগইন করুন
ইসরাইল রাজ্যের অষ্টম রাজা আহাবের বিষয়ে ইতোপূর্বে আমরা কিছু জেনেছি। তাঁর পুত্র যোরাম বা যিহোরাম (Jehoram) ছিলেন এ রাজ্যের দশম রাজা। তিনিও প্রতিমাপূজারী ছিলেন। ‘‘তিনি সামেরিয়াতে থেকে বার বছর রাজত্ব করেছিলেন। মাবুদের চোখে যা খারাপ তা-ই তিনি করতেন।’’ (২ বাদশাহনামা ৩/১-২) তাঁর সমসাময়িক এহুদা বা যুডিয়া রাজ্যের রাজা ছিলেন যিহোশাফট (Jehoshaphat)। তিনি এহুদা/ যিহূদা রাজ্যের চতুর্থ বাদশাহ ছিলেন। তিনি ঈশ্বর-ভক্ত ও ভাল শাসক ছিলেন: ‘‘মাবুদের চোখে যা ঠিক তিনি তা-ই করতেন।’’ (১ বাদশাহনামা ২২/৪৩)
আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে, মাবুদের অন্যতম বিধান প্রতিমাপূজারী ব্যক্তি ও জনপদ হত্যা করা। এমনকি বনি-ইসরাইলদের মধ্য থেকে কোনো ব্যক্তি বা জনপদের কেউ প্রতিমাপূজায় লিপ্ত হলে সেই জনপদের সকলকে হত্যা করা ও ধ্বংস করা ঈশ্বরের অন্যতম নির্দেশ। বাদশাহ যিহোশাফট মাবুদের চোখে যা ভাল তা-ই করলেও মাবুদের এ নির্দেশ পালন করেননি। উপরন্তু প্রতিমাপূজারী ইসরাইলী বাদশাহ যোরামের সাথে সহযোগিতা করে অন্য দেশের মানুষদের হত্যা করতেন।
‘‘মোয়াবের বাদশাহ মেশার অনেক ভেড়া ছিল। তিনি ইসরাইলের বাদশাহকে খাজনা হিসাবে এক লক্ষ ভেড়ার বাচ্চা ও এক লক্ষ ভেড়ার লোম দিতেন। কিমত্মু আহাবের মৃত্যুর পর মোয়াবের বাদশাহ ইসরাইলের বাদশাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। কাজেই বাদশাহ যোরাম তখন সামেরিয়া থেকে বের হয়ে সমস্ত ইসরাইলীয় সৈন্য জমায়েত করলেন। এছাড়া এহুদার বাদশাহ যিহোশাফটকেও তিনি এই খবর পাঠালেন, মোয়াবের বাদশাহ আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। আপনি কি আমার সংগে মোয়াবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাবেন? জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি আপনার সংগে যাব। আমিও যা আপনিও তা, আমার লোক আপনারই লোক, আমার ঘোড়া আপনারই ঘোড়া’।’’ (২ বাদশাহনামা ৩/৪-৭)
এরপর এক পর্যায়ে তাঁরা এ অভিযানের জন্য ঈশ্বরের অনুমোদন ও সাহায্যের জন্য প্রসিদ্ধ নবী এলিশায় বা আল-ইয়াসাকে আহবান করেন।
‘‘আল ইয়াসা বললেন, ‘আমি যাঁর এবাদত করি সেই সর্বশক্তিমান আল্লাহর কসম যে, এহুদার বাদশাহ যিহোশাফট যদি এখানে না থাকতেন তবে আমি আপনার দিকে চেয়েও দেখতাম না, খেয়ালও করতাম না। এখন বীণা বাজায় এমন একজন লোককে আমার কাছে নিয়ে আসুন।’ লোকটা যখন বীণা বাজাচ্ছিল তখন মাবুদের শক্তি (সদাপ্রভুর হস্ত: that the hand of the LORD) আল ইয়াসার উপর আসল। আল ইয়াসা বললেন, ‘মাবুদ আপনাদের এই উপত্যকায় অনেক খাদ তৈরী করতে বলেছেন, কারণ আপনারা বাতাস কিংবা বৃষ্টি দেখতে না পেলেও এই উপত্যকা পানিতে ভরে যাবে আর আপনারা পানি খেতে পাবেন এবং আপনাদের গরু, ভেড়া ও অন্যন্য পশুপাখীও পানি খেতে পাবে। এটা মাবুদের কাছে সহজ কাজ । তাছাড়া তিনি মোয়াব দেশটাও আপনাদের হাতে তুলে দেবেন। দেয়াল ঘেরা প্রত্যেকটা শহর ও প্রত্যেকটা বড় গ্রাম আপনারা ধ্বংস করে দেবেন। প্রত্যেকটা ভাল গাছ আপনারা কেটে ফেলবেন, পানির সমস্ত ঝর্ণাগুলো বন্ধ করে দেবেন এবং সব ভাল ক্ষেত পাথর দিয়ে নষ্ট করে দেবেন।’’
পরের দিন সকাল বেলার কোরবানীর সময় ইদোম দেশের দিক থেকে পানি বয়ে এসে দেশটা পানিতে ভরে গেল। এর মধ্যে মোয়াবীয়রা শুনেছিল যে, সেই তিন জন বাদশাহ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছেন। কাজেই অস্ত্র ধরতে পারে এমন সব ছেলে বুড়ো সবাইকে ডেকে এনে দেশের সীমানায় দাঁড় করানো হল। খুব সকালে যখন ঘুম থেকে উঠল তখন সূর্য মাথার উপর চকমক করছিল। মোয়াবীয়দের কাছে পানি রক্তের মত লাল মনে হল। তারা বলল, ‘ঐ যে রক্ত! বাদশাহরা যুদ্ধ করে নিশ্চয়ই একে অন্যকে হত্যা করেছেন। মোয়াবীয়রা, চল, আমরা গিয়ে লুট করি।’ কিন্তু যখন মোয়াবীয়রা ইসরাইলের ছাউনির কাছে গেল তখন বনি-ইসরাইলরা বের হয়ে তাদের আক্রমণ করল আর মোয়াবীয়রা তাদের সামনে থেকে পালিয়ে গেল। বনি-ইসরাইলরা মোয়াবীয়দের মারতে মারতে তাদের দেশে ঢুকে পড়ল। তারা শহরগুলো ধ্বংস করে ফেলল আর প্রত্যেকে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে সমস্ত ভাল ক্ষেতগুলো ঢেকে ফেলল। তারা পানির সমস্ত ঝর্ণাগুলো বন্ধ করে দিল এবং ভাল ভাল গাছপালা সব কেটে ফেলল।’’ (২ বাদশাহ নামা ৩/১৪-২৫)
এভাবে একজন পৌত্তলিক প্রতিমাপূজারী বাদশাহকে ঈশ্বর নিজে ও তাঁর নবী আল-ইয়াসা শুধু ভেড়ার লোমের জন্য একটা যুদ্ধের অনুমোদন ও সহযোগিতা করলেন। অলৌকিকভাবে পানি দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করলেন এবং অলৌকিকভাবে পানিকে রক্তের মত দেখিয়ে মোয়াবীয়দের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের ব্যবস্থা করলেন। সর্বোপরি যুদ্ধের বা লুটের কোনোরূপ প্রয়োজন ছাড়া, শুধু প্রতিহিংসা ও ধ্বংসের জন্য ধ্বংসের উদ্দীপনায় শহরগুলো ধ্বংস করলেন, ঝর্ণাগুলো বন্ধ করলেন এবং ভাল ক্ষেতগুলোর ফসল নষ্ট করলেন এবং ভাল গাছপালা সব কেটে ফেললেন! সবই বাইবেলের চিরন্তন অলঙ্ঘনীয় নির্দেশ ও আদর্শ।