কোন ভুল থাকলে সেটি রিপোর্ট করার জন্য অনুগ্রহ করে লগইন করুন।
লগইন করুন
লগইন করুন
পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা অষ্টম অধ্যায় - অযৌক্তিকতা ও অশালীনতা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৮. ২. ১৮. আরো কিছু অযৌক্তিকতা ও অতিরঞ্জন
- সূর্য সৃষ্টির আগেই আলো ছিল, দিবারাত্র ছিল, পৃথিবীর বুকে গাছপালাও সূর্য সৃষ্টির পূর্বেই জন্ম নেয় এবং বাড়তে থাকে (আদিপুস্তক ১/৩-৫, ১৪-১৯)।
- সাপ মানুষের ভাষায় কথা বলে (হিব্রু ভাষায়?) (আদিপুস্তক ৩/১-৫)।
- পৃথিবীটা থাম, পিলার বা স্তম্ভের উপর স্থাপিত যা ঈশ্বর মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি দেন: ‘‘তিনি পৃথিবীকে তার স্থান হইতে কম্পমান করেন। তাহার স্তম্ভ সকল টলটলায়মান হয়। (কি. মো.- ০৬: তিনি দুনিয়াকে তার জায়গা থেকে নাড়া দেন তার থামগুলোকে কাঁপিয়ে তোলেন)। (ইয়োব/ আইউব ৯/৬)
- বাইবেল বলছে যে, ঈশ্বর সাপকে সারাজীবন ধুলা খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন: ‘‘তুমি সারাজীবন পেটের উপর ভর করে চলবে ও ধুলা খাবে।’’ (আদিপুস্তক / পয়দায়েশ ৩/১৪)। সাপ পেটের উপর চললেও কখনোই ধুলা খায় না।
- মহাপস্নাবনের পরে মাটিতে নেমে নোহ কতগুলো পশু কোরবানি করে পুড়িয়ে দিলেন। পোড়া মাংসের খোশবুতে ঈশ্বর প্রীত হলেন (আদিপুস্তক ৮/২১)।
- বাইবেলের বিধানে প্রথম সন্তান সর্বোচ্চ অধিকার পায়। আর এ অধিকার পাওয়ার জন্য যমজ বাচ্চা প্রসবের সময় এক বাচ্চা মায়ের পেটের মধ্যে থেকে আগেই হাত বের করে দিল। ধাত্রী সেই হাতে লাল সুতো বেধে দিল। বাচ্চা মায়ের পেটের মধ্য থেকেই নিজের হাত টেনে নিল। এরপর তার ভাই বেরিয়ে আসল। তবে লাল সুতোর কারণে অন্য জনই বড়ছেলের অধিকার পেল (আদিপুস্তক ৩৮/২৭-২৯)।
- দেহের সাথে ঘণ্টা না লাগিয়ে পবিত্র স্থানে গেলে জীবননাশের আশঙ্কা! ‘‘সে যখন পবিত্র স্থানে মাবুদের সামনে যাবে এবং সেখান থেকে বের হয়ে আসবে তখন এই ঘণ্টাগুলোর আওয়াজ শোনা যাবে আর তাতে তার জীবন রক্ষা পাবে।’’ (হিজরত/যাত্রা ২৮/৩৫)
- গাধী ফেরেশতাদের দেখতে পেল এবং হিব্রু ভাষায় মালিকের সাথে কথা বলল। (গণনাপুস্তক/ শুমারী ২২/২১-৩০)
- শিমশোন বা হযরত শামাউনের সকল শক্তি চুলের মধ্যে। চুল কাটলে সব শক্তি শেষ হয়ে গেল! (বিচারকর্তৃগণ/কাজীগণ ১৬/১৭-২২)
- ঈশ্বর নাপাক পাখি দাঁড়কাককে দায়িত্ব দিলেন তার নবী এলিয়/ ইলিয়াসকে রুটি ও মাংস সরবরাহ করার। (১ রাজাবলি/ বাদশাহনামা ১৭/২-৬)
- রাজা আহস ৩৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার পরে তার ছেলে হিষ্কিয় রাজা হলেন। তিনি ২৫ বছর বয়সে রাজত্ব শুরু করলেন। (২ বাদশাহনামা ১৬/২, ২০; ১৮/১-২)। তাহলে রাজা আহস মাত্র এগার বছর বয়ছে সন্তানের পিতা হয়েছিলেন!
- ‘‘পরে সাহাবী-নবীদের মধ্যে একজন মাবুদের কালাম দ্বারা তার সহ-সাহাবীকে বললো, তুমি আমাকে আক্রমণ কর। কিন্তু সে তাকে আক্রমণ করতে সম্মত হল না। তখন সে তাকে বললো, তুমি মাবুদের কথা মান্য করলে না, এ কারণে দেখ, আমার কাছ থেকে যাওয়া মাত্র একটি সিংহ তোমাকে হত্যা করবে। পরে সে তার কাছ থেকে যাওয়া মাত্র এক সিংহ তাকে দেখতে পেয়ে হত্যা করল।’’ (১ রাজাবলি/ বাদশাহনামা ২০/৩৫-৩৬, মো.-১৩)
বিষয়টা বড়ই বিস্ময়কর! খুবই স্বাভাবিক যে, ভক্তি বা ভালবাসা বশত নবীর সাথী তাকে আক্রমণ বা আঘাত করতে দ্বিধা করবেন। এজন্য তাকে কোনোরূপ সুযোগ না দিয়ে হত্যা করতে হবে! বাইবেলের ঈশ্বর কি এতই হত্যাপ্রিয়?
- বাইবেল থেকে জানা যায় যে, সূর্যের তাপাঘাত (sunstroke/heatstroke)-এর মত চাঁদও মানুষকে আঘাত করতে ও আহত করতে পারে: ‘‘সদাপ্রভুই তোমার ছায়া, তিনি তোমার দক্ষিণ পার্শে। দিবসে সূর্য তোমাকে আঘাত করিবে না, রাত্রিতে চন্দ্রও করিবে না।’’ (গীতসংহিতা ১২১/৫-৬)
- যীশু ফেরেশতা পাঠিয়ে তাঁর রাজ্যের মধ্যে অবস্থানরত পাপীদেরকে জড়ো করে আগুনের মধ্যে ফেলে দেবেন: ‘‘ইবনে-আদম তাঁর ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দেবেন। যারা অন্যদের গুনাহ করায় এবং যারা নিজেরা গুনাহ করে তাদের সবাইকে সেই ফেরেশতারা ইবনে-আদমের রাজ্যের মধ্য থেকে একসংগে জমায়েত করবেন ও জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ফেলে দেবেন।’’ (মথি ১৩/৪১)
কিন্তু গুনাহকারীরা কিভাবে তার রাজ্যে প্রবেশ করল? গুনাহকারী হলেই যদি দোজখে যেতে হয় তবে তার করুণা কোথায় গেল?
- বাইবেলের নিয়ম হল কাউকে কসম করাতে হলে তার হাতটা নিজের অ-কোষের নিচে রাখতে হবে। যদিও বাইবেলের অনুবাদে অ-কোষ শব্দটা ব্যবহার না করে ‘জঙ্ঘা’ বা ‘রান’ বলা হয়েছে। (আদিপুস্তক ২৪/২-৯, ৪৭/২৯) ইংরেজিতে সাক্ষ্য, প্রতিজ্ঞা, নিয়ম, সন্ধি, শপথ ইত্যাদি বুঝাতে টেস্টিমনি, টেস্টামেন্ট, টেস্টিফাই (testimony, testament, testify) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়। টেস্টিকল (testicle), অর্থাৎ ‘অন্ডকোষ’ থেকেই এ সকল শব্দের উৎপত্তি।
- ‘‘সমস্ত সৈন্যদের মধ্যে সাতশো বাঁহাতি দক্ষ লোক ছিল যারা চুল লক্ষ্য করে ফিংগা দিয়ে ঠিক চুলটির উপরেই পাথর মারতে পারত’’!!! (কাজীগণ ২০/১৬)
- ‘‘ফিলিস্তিনীরা তখন বনি-ইসরাইলদের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য একসংগে জমায়েত হল। তাদের সংগে ছিল ত্রিশ হাজার রথ, ছয় হাজার ঘোড়সওয়ার ও সমুদ্র-পারের বালুকণার মত অসংখ্য পদাতিক সৈন্য।’’ (১ শামুয়েল ১৩/৫)
প্রিয় পাঠক, কাব্য বা উপন্যাসে এরূপ কথা বলা যেতে পারে। কোনো ধর্মগ্রন্থ তো দূরের কথা, ইতিহাস গ্রন্থে কি এরূপ কথা মিথ্যা বলে গণ্য নয়?
- দুজন খ্রিষ্টান একত্রিত হয়ে যা চাইবে ঈশ্বর তাই দিবেন! (মথি ১৮/১৯)
- চাইলেই পাবে! বিশ্বাস থাকলে যা চাবে তাই পাবে। (মথি ৭/৭-৮; ২১/২২; মার্ক ১১/২৪; লূক ১১/৯-১০; যোহন ১৬/২৩)!
- চাঁদ, সূর্য ও তারাগুলো সব পড়ে যাওয়ার পরেও দেখার মত যথেষ্ট আলো থাকে। (মথি ২৪/২৯-৩০)
- সরিষাদানা পরিমাণ বিশ্বাস থাকলেও পাহাড় সরানো সম্ভব। সরিষাদানা পরিমাণ বিশ্বাস থাকলে তার জন্য কোনো কিছুই অসম্ভব নয়! (মথি ১৭/২০; ২১/২১; মার্ক ৯/২৩; ১০/২৭, ১১/২৩, লূক ১৭/৬)
- শিমশোন বা হযরত শামাউন একটা মরা গাধার চোয়াল দিয়ে একবারে ১০০০ মানুষ মেরে ফেললেন! (বিচারকর্তৃগণ/ কাজীগণ ১৫/১৫)
- পিতলের সাপ না দেখিয়ে ঈশ্বর মানুষকে বিষমুক্ত করতে পারেন না। (গণনাপুস্তক ২১/৫-৯)
- বাড়ির দরজায় রক্ত মাখিয়ে না রাখলে ঈশ্বর বুঝতে পারেন না যে, বাড়িটা কি তাঁর প্রজাদের না তাঁর শত্রুদের। যাত্রাপুস্তক/ হিজরত ১২/৭, ১২-১৩)
- ‘‘যে লোকের পুরুষাংগের সামনের চামড়া কাটা নয় তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলা হবে, কারণ সে আমার ব্যবস্থা অমান্য করেছে।’’ (আদিপুস্তক/ পয়দায়েশ ১৭/১৪) অর্থাৎ ছোটবেলায় পিতা তাকে খতনা করতে অবহেলা করেছেন এজন্য পুত্রকে মুছে (হত্যা করে?) ফেলা হবে!
- খোজা বা নপুংসক হতে উৎসাহ প্রদান: ‘‘কোন খোজা লোক না বলুক, ‘আমি কেবল একটা শুকনা গাছ, কারণ মাবুদ এই কথা বলছেন, ‘খোজারা যদি আমার বিশ্রামবার পালন করে, আমি যা পছন্দ করি তা-ই বেছে নেয় আর আমার ব্যবস্থা শক্ত করে ধরে রাখে তবে তাদের ছেলেমেয়ে থাকলে যে নাম থাকত তার চেয়ে আমার ঘর ও দেয়ালের ভিতরে তার নাম স্থাপন করে তা আমি আরও স্মরণীয় করে রাখব। আমি তাদের এমন চিরস্থায়ী নাম দেব যা মুছে ফেলা হবে না। (ইশাইয় ৫৬/৩-৫)
- ছোঁয়াছুঁয়ির কুসংস্কার! কোনো মানুষ কোনোভাবে কোনো নাপাক বস্ত্ত স্পর্শ করলে সে নাপাক হয়ে যাবে। আবার কোনো নাপাক ব্যক্তি যা কিছুই স্পর্শ করুক না কেন তা তৎক্ষণাৎ তা নাপাক হয়ে যাবে। (গণনা/শুমারী ১৯/২২)
- পুরুষরা যদি ব্যভিচার করে তবে মহিলাদের বেশ্যাচারিতা বা ব্যভিচারের অপরাধ ধরা হবে না: ‘‘তোমাদের মেয়েরা বেশ্যা হলে আর ছেলের স্ত্রীরা জেনা করলে আমি শাস্তি দেব না, কারণ পুরুষেরা নিজেরাই বেশ্যাদের কাছে যায় এবং মন্দির-বেশ্যাদের সংগে পশু উৎসর্গ করে।’’ (হোসিয়া ৪/১৪)
- খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিরোধ হলে কোর্টে যাওয়া চলবে না; বরং চার্চের মধ্যে সাধুদের (saints) কাছে বিচার দিতে হবে: ‘‘তোমাদের মধ্যে কারও যদি কোন ঈমানদার ভাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ করবার কোন কারণ থাকে, তবে কোন সাহসে সাধুদের (saints পবিত্রগণের/ আল্লাহর বান্দাদের) কাছে না গিয়ে যারা আল্লাহর নয় তাদের কাছে গিয়ে বিচার চায়... যারা চার্চের (church মণ্ডলীর/ জামাতের) লোক নয় তাদেরই কি তোমরা বিচরক হবার জন্য ঠিক করে থাক?’’ (১ করিন্থীয় ৬/১-৬)
- পুরুষের জন্য লম্বা চুল লজ্জার বিষয়! ‘‘পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে তবে তার অসম্মান হয় (if a man have long hair, it is a shame unto him) ... যদি কেউ এই নিয়ে তর্ক করতে চায় তবে আমি এই বলব যে, অন্য কোন নিয়ম আমাদের মধ্যেও নেই বা আল্লাহর জামাতগুলোর (ঈশ্বরের চার্চগুলোর: churches of God ) মধ্যেও নেই।’’ (১ করিন্থীয় ১১/১৪-১৬)
এ বক্তব্য অনুসারে স্বয়ং যীশুও অপমানজনক কর্ম করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। কারণ আমার দেখি যে, সকল ছবিতেই যীশু খ্রিষ্টের চুল লম্বা দেখানো হয়েছে!
- দর্শন (Philosophy) চর্চা নিন্দনীয় ও বর্জনীয়। (কলসীয় ২/৮)
- নারীরা সাজগোজ বা সৌন্দর্যচর্চা করবেন না। চুলের বেণী ব্যবহার, সোনা ও মুক্তার গয়না ব্যবহার বা দামী কাপড় পরে নিজেদেরকে সাজাবেন না। (১ তীমথিয় ২/৯ এবং ১ পিতর ৩/৩)
- নিজ মতের ও বিশ্বাসের খ্রিষ্টান ছাড়া কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এমনকি তার জন্য মঙ্গল কামনা করা বা সালাম জানানোও নিষিদ্ধ। যদি কেউ কোনো অখ্রিষ্টানের জন্য মঙ্গল কামনা করে তবে সেও সেই অখ্রিষ্টানের পাপের ভাগী বা অখ্রিষ্টানের মতই মুক্তি-বঞ্চিত: ‘‘যদি কেউ সেই শিক্ষা (the doctrine of Christ মসীহের শিক্ষা) না নিয়ে তোমাদের কাছে আসে, তবে তাকে বাড়িতে গ্রহণ করো না এবং তাকে ‘মঙ্গল হোক’ বলো না। কেননা যে তাকে ‘মঙ্গল হোক’ বলে, সে তার দুষ্কর্মের সহভাগী হয়’’ (২ ইউহোন্না ৯-১১, মো.-১৩)। মো.-০৬: ‘‘সালামও জানায়ো না। যে তাকে সালাম জানায় সে তার খারাপ কাজেরও ভাগ নেয়।’’