লগইন করুন
উপরের উদ্ধৃতিতে যীশু বলেছেন: ‘‘আমি শান্তি দিতে আসি নি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি। এখন থেকে এক বাড়ীর পাঁচ জন ভাগ হয়ে যাবে, তিন জন দু’জনের বিরুদ্ধে আর দু’জন তিনজনের বিরুদ্ধে। ... বাবা ছেলের বিরুদ্ধে ও ছেলে বাবার বিরুদ্ধে, মা মেয়ের বিরুদ্ধে ও মেয়ে মায়ের বিরুদ্ধে, শাশুড়ী বউয়ের বিরুদ্ধে ও বউ শাশুড়ীর বিরুদ্ধে।’’ (লূক ১২/৪৯-৫৩: মো.-০৬)
অন্যত্র যীশু বলেন: ‘‘যে কেউ মানুষের সাক্ষাতে আমাকে স্বীকার করে, আমিও আমার বেহেশতী পিতার সাক্ষাতে তাকে স্বীকার করবো। কিন্তু যে কেউ মানুষের সাক্ষাতে আমাকে অস্বীকার করে, আমিও আমার বেহেশতী পিতার সাক্ষাতে তাকে অস্বীকার করবো। মনে করো না যে, আমি দুনিয়াতে শান্তি দিতে এসেছি; শান্তি দিতে আসি নি, কিন্তু তলোয়ার দিতে এসেছি। কেননা আমি পিতার সঙ্গে পুত্রের, মায়ের সঙ্গে কন্যার এবং শাশুড়ির সঙ্গে পুত্র বধূর বিচ্ছেদ জন্মাতে এসেছি; আর নিজ নিজ পরিজনই মানুষের দুশমন হবে।’’ (মথি ১০/৩২-৩৬, মো.-১৩)
পাঠক, বিষয়টা কি শোভনীয়? পারিবারিক অশান্তিই কি যীশুর একমাত্র মিশন? কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা এরূপ বক্তব্য দিলে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
খ্রিষ্টান প্রচারকরা দাবি করেন যে, এ সকল কথা রূপক হিসেবে বলা হয়েছে। কিন্তু কোন কথাটা রূপক এবং কোনটা আক্ষরিক? উপরের উদ্ধৃতিতে প্রথমে যীশু বলেছেন যে, তাঁকে স্বীকার ও অস্বীকারের উপরেই পরকালের মুক্তি। এরপর বলেছেন যে, পারিবারিক শত্রুতা সৃষ্টিই তাঁর আগমনের একমাত্র উদ্দেশ্য। প্রচারকরা প্রথম বক্তব্যকে রূপক হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি হবেন না। বরং তাঁর এ কথাকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করে এর সাথে অনেকগুলো শর্ত সংযোজন করে বলবেন: ‘‘মনুষ্যদের সামনে যীশুকে ‘ঈশ্বরের ত্রিত্বের এক, পিতার সমান, রক্তমাংসে প্রকাশিত ঈশ্বর এবং মানুষের পাপের জন্য জীবনদানকারী হিসেবে স্বীকার’’ না করলে ধ্বংস অনিবার্য। কিন্তু তারা যীশুর দ্বিতীয় বক্তব্য অপ্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা দিয়ে সম্পূর্ণ অর্থহীন করে ফেলবেন। এরূপ ব্যাখ্যা কি যীশুর বক্তব্যের অবমাননা নয়? যীশুর প্রতি বিশ্বাস কি দাবি করে না যে, নিজেদের বিবেক ও রুচি বাতিল করে তাঁর সকল কথাকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করতে হবে? অথবা সকল কথাই যে যার ইচ্ছা ও রুচি অনুসারে ব্যাখ্যা ও পালন করতে পারবে?
অন্যত্র যীশু বলেন: ‘‘ভাই ভাইকে, পিতা ছেলেকে মেরে ফেলবার জন্য ধরিয়ে দেবে। ছেলেমেয়েরা মা-বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের খুন করাবে’’ (মার্ক ১৩/১২, মো.-০৬)। অন্যত্র তিনি বলেন: ‘‘তোমাদের মা-বাবা, ভাই-বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনেরা তোমাদের ধরিয়ে দেবে। তারা তোমাদের কাউকে কাউকে হত্যাও করবে’’ (লূক ২১/১৬, মো.-০৬)। তিনি আরো বলেন: ‘‘যদি কেউ আমার কাছে আসে, আর আপন পিতা-মাতা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে, ভাই-বোন, এমন কি নিজ প্রাণকেও অপ্রিয় জ্ঞান (hate ঘৃণা) না করে তবে সে আমার সাহাবী (মো.-০৬: উম্মত) হতে পারে না’’ (লূক ১৪/২৬, মো.-১৩)। আরো দেখুন: লূক ১২/৫১-৫৩; মথি ১০/৩৪-৩৭।
পাঠক কি স্তম্ভিত হচ্ছেন না? যীশুর উম্মত হওয়ার পূর্বশর্ত নিজের পিতামাতা, স্ত্রী-সন্তান ও আপনজনদেরকে ঘৃণা (hate) করা? নাহলে মুক্তির কোনো আশা নেই? প্রেমময় ঈশ্বর বা প্রেমময় যীশুর ধারণার সাথে কি যীশুর এ দাবি সাংঘর্ষিক নয়? যীশুর শিষ্য হওয়ার জন্য যদি পিতা, মাতা, স্ত্রী, ভাই, বোন সবাইকে ঘৃণা করা জরুরি হয় তবে অবশ্যই বিশ্বাসীকে মেনে নিতে হবে যে, যীশু পারিবারিক ভালবাসার বিরুদ্ধে।
সম্ভবত যীশুর বক্তব্যের এ অশোভনীয়তা গোপন করতেই কোনো কোনো বাংলা অনুবাদে অর্থ পরিবর্তন করা হয়েছে। ইংরেজি বাইবেলে: ‘KJV: hate not. RSV does ont hate’ এবং আরবি বাইবেলে ‘يبغض’। এর অর্থ ঘৃণা করা। কেরি বাইবেল এবং কি. মো.-২০১৩ ‘hate’ অর্থ লেখা হয়েছে ‘অপ্রিয় জ্ঞান করা’। অর্থটা কিছুটা হলেও মূলের কাছাকাছি। অপ্রিয় জ্ঞান করা বা অপছন্দ করার ইংরেজি ‘dislike’। আর হেট অর্থ ‘তীব্রভাবে অপ্রিয় জ্ঞান করা’। এনকার্টা ডিকশনারিতে ‘hate’ অর্থ বলা হয়েছে: “dislike somebody or something intensely: to dislike somebody or something intensely, often in a way that evokes feelings of anger, hostility, or animosity”: ‘‘কোনো ব্যক্তি বা বস্ত্তকে তীব্রভাবে অপছন্দ করা; প্রায়শ এমন তীব্রভাবে অপছন্দ করা যা ক্রোধ, বৈরিতা ও শত্রুতা জাগিয়ে তোলে।’’
কিন্তু পবিত্র বাইবেল ২০০০ ও কি. মো.-২০০৬ ‘hate’ অর্থ লেখেছে: ‘‘আমার চেয়ে কম প্রিয় মনে করে’’। নিঃসন্দেহে এ অনুবাদ অবিশ্বাসযোগ্য। মূল বক্তব্যে ‘আমার চেয়ে’ কথার কোনো অস্তিত্বই নেই। আর ‘hate’ শব্দকে ‘কম প্রিয় মনে করা’ বলে অনুবাদ করাও বিস্ময়কর।
সর্বোপরি, হেট (hate) অর্থ যদি ‘অপ্রিয় মনে করা’ বা ‘কম প্রিয় মনে করা’ হয় তবে সে ক্ষেত্রেও নিজের ভাইকে এরূপ করা বাইবেলের বক্তব্য অনুসারে মহাপাপ। যোহন লেখেছেন: ‘‘Whosoever hateth his brother is a murderer: যে কেহ আপন ভাইকে হেট (hate) করে (ঘৃণা করে, অপ্রিয় জ্ঞান করে, কম প্রিয় মনে করে) সে নরহমত্মা।’’ (১ যোহন ৩/১৫)। যোহন আরো লেখেছেন: ‘‘If a man say, I love God, and hateth his brother, he is a liar: যদি কেউ বলে, আমি ঈশ্বরকে প্রেম করি, আর আপন ভাইকে ‘হেট’ (hate) করি (ঘৃণা করি, অপ্রিয় জ্ঞান করি, ঈশ্বরের চেয়ে কম প্রিয় মনে করি), সে মিথ্যাবাদী।’’ (১ যোহন/ ইউহোন্না ৪/২০)
এভাবে আমরা দেখছি ঈশ্বরকে ভালবেসে আপন ভ্রাতাকে ‘হেট’ (hate) করা- ঈশ্বরের চেয়ে কম প্রিয় মনে করা- মিথ্যাবাদিতা ছাড়া কিছুই নয়। তাহলে কিভাবে যীশু ভাইবোন, স্ত্রীসন্তানের পাশাপাশি মাতাপিতাকে ঘৃণা করতে, অপ্রিয় জ্ঞান করতে বা কম প্রিয় মনে করতে নির্দেশ দিতে পারেন?
বাইবেল সমালোচক গ্যারি ডেভানি বলেন:
“Did Jesus lie when He said that He did not come to send peace but the sword / conflict / war into your family's lives? Was it Jesus' agenda for your family members to be your enemies? Is this an evil agenda? Does Jesus prove to be evil? Are Christian families, who are not against each other, bad Christians in Jesus' eyes?”
‘‘যীশু যখন বললেন যে, তিনি শান্তি প্রদানের জন্য আসেননি, বরং আপনার পারিবারিক জীবনে তরবারি/ সংঘাত/ যুদ্ধ প্রদানের জন্য এসেছেন তখন কি তিনি মিথ্যা বলেছেন? এটাই কি যীশুর কার্যক্রম-এজেন্ডা ছিল যে, আপনার পরিবারের সদস্যদেরকে আপনার শত্রু বানাবেন? এটা কি কোনো অশুভ এজেন্ডা? যীশু কি অশুভ বলে প্রমাণিত? যে সকল খ্রিষ্টান পারিবারিক জীবনে একে অপরের শত্রু নন তারা কি যীশুর দৃষ্টিতে খারাপ খ্রিষ্টান?’’[1]
“If Jesus wants this - I am not on His side. ... I am starting to feel really sad. ... How is Jesus' C&V model designed to be better for human beings? Isn’t Jesus supposed to be our loving, righteous, wholesome family model? My sensitivities can not support Jesus if this is His attitude. ... It is evident that believers have gone from deception to denial and now they are in delusion to worship, promote, support and finance such a character as Jesus Christ.
‘‘যীশু যদি এটা দাবি করেন তবে আমি তাঁর পক্ষে নেই। ... আমি বাস্তবিকই বিষণ্ণ হতে শুরু করেছি। ... অধ্যায় ও শ্লোক নির্ধারিত যীশুর এ সকল উদ্ধৃতি মানবতার কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য কিরূপ আদর্শ পেশ করছে? প্রেমময় সততাপূর্ণ সজীব সুস্থ পরিবারের জন্য যীশু আমাদের আদর্শ হবেন এটাই কি প্রত্যাশিত নয়? এটাই যদি যীশুর মনোভাব হয়ে থাকে তবে আমার সংবেদনশীলতা তাঁকে সমর্থন করতে পারছে না। ... এটা সুস্পষ্ট যে, বিশ্বাসীরা প্রতারণা থেকে অস্বীকারে গিয়েছেন। এখন তারা একটা মোহ বিভ্রমের মধ্যে রয়েছেন যে, তারা ‘যীশু’ নামক এরূপ একটা চরিত্রের ইবাদত, আরাধনা, প্রচার ও অর্থায়ন করছেন।’’[2]
[2] www.thegodmurders.com/id119.html