লগইন করুন
ঈশ্বরের পুত্র (ইবনুল্লাহ) শলোমন দাউদের পরে বনি-ইসরাইলের রাজা হন। তিনি যুদ্ধবিগ্রহে না জড়ালেও রাজত্বের শুরুতেই তাঁর নিজের বড় ভাই, তাঁর পিতার প্রধান সেনাপতি, প্রধান পুরোহিত ও অন্য কয়েকজন মানুষকে হত্যা করেন। তাঁর পিতা দাউদও তাঁকে এদের কয়েকজনকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে যান। দাউদের এ ওসিয়ত থেকে বাইবেলীয় ইবনুল্লাহ ও মসীহদের প্রতিশোধস্পৃহার বিষয়টা জানা যায়।
(ক) দাউদ বৃদ্ধ হলে তাঁর পুত্র- শলোমনের বড় ভাই- আদোনিয় রাজা হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দাউদ শলোমনকে রাজত্ব প্রদান করেন। তখন আদোনিয় ক্ষমা চান এবং সাজদা করে বাদশাহ শলোমনকে সম্মান করেন। শলোমন বলেন: ‘‘সে যদি নিজেকে ভাল লোক হিসাবে দেখাতে পারে তবে তার মাথার একটা চুলও মাটিতে পড়বে না; কিন্তু যদি তার মধ্যে খারাপ কিছু পাওয়া যায় তবে সে মরবে।’’ পরে আদোনিয় শলোমনের মাতা বৎসেবার মাধ্যমে শলোমনের কাছে আব্দার করেন, শূনেমীয়া অবীশগকে তার সঙ্গে বিয়ে দিতে। এতে শলোমন সাথে সাথেই আদোনিয়াকে হত্যা করেন। (১ বাদশাহনামা প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়। বিশেষত ১/৫২-৫৩ ও ২/১৩-২৫)
বাহ্যত এ হত্যাকাণ্ড প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের জন্য। বাইবেলের শরীয়ত অনুসারে অবৈধ কোনো বিবাহ করতে ইচ্ছুক হওয়া মৃত্যুদণ্ড যোগ্য অপরাধ নয়।
(খ) দাউদের প্রধান সেনাপতি যোয়াব দাউদ-রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেন। তালুতের সেনাপতি অবনেরকে দাউদ নিরাপত্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু অবনের যোয়াবের ভাইকে হত্যা করেছিলেন বলে যোয়াব তাকে কৌশলে হত্যা করেন। এছাড়া আরেক সেনাপতি অমাসাকেও যোয়াব হত্যা করেছিলেন। দাউদ এ হত্যার জন্য যোয়াবকে শাস্তি না দিয়ে বদদোআ করেন এবং শলোমনকে নির্দেশ দিয়ে যান যোয়াবকে হত্যা করতে। যোয়াব শলোমনের ভয়ে মাবুদের তাম্বুর মধ্যে আশ্রয়গ্রহণ করেন। শলোমন সেখাইে তাকে হত্যা করেন। (১ রাজাবলি/ বাদশাহনামা ২য় ও ৩য় অধ্যায়)
দাউদ শলোমনকে বলেন: ‘‘সরূয়ার ছেলে যোয়াব আমার প্রতি যা করেছে এবং ইসরাইলীয় সৈন্যদলের দুই সেনাপতির প্রতি, অর্থাৎ নেরের ছেলে অবনের ও যেথরের ছেলে অমাসার প্রতি যা করেছে তা তো তুমি জানই। সে তাদের খুন করেছে, শান্তির সময়েও যুদ্ধের সময়ের মত করে তাদের রক্তপাত করেছে... তুমি তার সংগে বুদ্ধি করে চলবে, তবে বুড়ো বয়সে তুমি তাকে শান্তিতে কবরে যেতে দেবে না। ... মনে রেখো, বহুরীমের বিনইয়ামীন গোষ্ঠীর গেরার ছেলে শিমিয়ি তোমার সংগে আছে। আমি যেদিন মহনয়িমে যাই সেই দিন সে আমাকে ভীষণ বদদোয়া দিয়েছিল। জর্ডানে সে আমার সংগে দেখা করতে আসলে পর আমি মাবুদের নামে তার কাছে কসম খেয়েছিলাম যে, আমি তাকে হত্যা করব না। কিন্তু এখন তুমি তাকে নির্দোষ মনে কোরো না। তুমি বুদ্ধিমান; তার প্রতি তুমি কি করবে তা তুমি নিজেই বুঝতে পারবে। তার বুড়ো বয়সে রক্তপাতের মধ্য দিয়েই তাকে কবরে পাঠিয়ে দেবে।’’ (১ বাদশাহনামা ২/৫-৯, মো.-০৬)
যোয়াব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুদ্ধের ময়দানের বাইরে কৌশলে অবনের ও অমাসাকে হত্যা করেন। (২ শামুয়েল ৩/২২-৩০ ও ২০/৪-১৩) এজন্য দাউদ তাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন। দাউদ তো নিজেই কোনো যুদ্ধ ছাড়াই শান্তিতে বসবাসকারী নাবল ও তার পরিবারের সকল পুরুষকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তাঁকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায়! তাহলে যোয়াবের হত্যার নির্দেশ কি ঈশ্বরের বিধান পালনের জন্য? না যোয়াব দাউদের পুত্র অবশালোমকে যুদ্ধের মাঠে হত্যা করেছিলেন বলে প্রতিহিংসা বশত?
(গ) গেরার ছেলে শিমিয় তালুতের বংশের মানুষ। তালুতের প্রতি মমতা বশত তিনি দাউদকে বদদোআ দিয়েছিলেন। (১ শাময়েল ১৬/৫-১৪)। পরে নিজ বংশের সহস্রাধিক মানুষ নিয়ে দাউদের কাছে এসে ক্ষমা চাইলে দাউদ তাকে ক্ষমা করার ঘোষণা দেন। (১ শামুয়েল ১৯/১৬-২৩) কিন্তু দাউদের এ ওসিয়ত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তৎকালীন পরিস্থিতিতে জনমত নিয়ন্ত্রণের জন্যই তিনি এ ঘোষণা দেন। তাঁর অন্তরে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলছিলই। যেহেতু তিনি নিজে আল্লাহর নামে কসম করেছেন তাকে হত্যা না করার সেহেতু তিনি শলোমনকে দিয়ে তাকে হত্যার ব্যবস্থা করলেন। শলোমন সুযোগমত অজুহাত খুঁজে তাকে হত্যা করেন (১ রাজাবলি ২/৩৪-৪৬)