লগইন করুন
প্রচলিত তৌরাত অনুসারে ধর্ম একান্তই জাগতিক বিষয়। পারলৌকিক জীবন ও পারলৌকিক পুরস্কার বা শাস্তির কোনো কথা কোথাও নেই। ধর্মপালনের পুরস্কার এবং শাস্তি উভয়ই একান্তই জাগতিক। অধার্মিকতার শাস্তি পরাধীনতা ও দুনিয়ার নানাবিধ কষ্ট। আর ধার্মিকতার পুরস্কার দুনিয়ায় বিভিন্ন সমৃদ্ধ দেশ দখল ও পৃথিবীময় কর্তৃত্ব। আর এ বিষয়ক মূল প্রতিশ্রুতি ছিল ‘দুধ ও মধুময় একটি দেশ’।
বনি-ইসরাইল ঈশ্বরের নিজস্ব প্রজা। তাঁরা মিসরে কষ্ট করছিলেন দেখে ঈশ্বর ব্যথিত হন এবং বৃহত্তর ফিলিস্তিনের সমৃদ্ধ ‘দুধ ও মধুময়’ দেশগুলোর সকল মানুষকে হত্যা করে সে দেশগুলো বনি-ইসরাইলকে প্রদান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঈশ্বর তাদেরকে মিসর থেকে বের করে আনেন। ‘‘সত্যিই আমি মিসর দেশে আমার প্রজা (my people) বনি-ইসরাইলদের কষ্ট দেখেছি এবং শাসকদের সম্মুখে তাদের কান্নার আওয়াজ শুনেছি; ফলত আমি তাদের দুঃখ কষ্টের কথা জানি। আর মিসরীয়দের হাত থেকে তাদের উদ্ধার করার জন্য এবং সেই দেশ থেকে উঠিয়ে নিয়ে উত্তম ও প্রশস্ত একটা দেশে, অর্থাৎ কেনানীয়, হিট্টিয়, আমোরীয়, পরিষীয়, হিববীয় ও যিবূষীয় লোকেরা যে স্থানে থাকে, সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে (a land flowing with milk and honey) তাদেরকে নিয়ে যাবার জন্য নেমে এসেছি।’’ (হিজরত ৩/৭-৮, মো.-১৩)
ঈশ্বর বলেন: ‘‘কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলেছি, তোমরাই তাদের দেশ অধিকার করবে, আমি তোমাদের অধিকার হিসাবে সেই দুগ্ধমধু প্রবাহী দেশ দেব।’’ (লেবীয় ২০/২৪, মো.-১৩) এভাবে ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, তিনি মিসর থেকে বের করে বনি-ইসরাইলদের দুগ্ধমধু প্রবাহী দেশে নেবেন। (যাত্রাপুস্তক ৩/১৭; ১৩/৫; ৩৩/৩; গণনাপুস্তক ১৩/২৭; ১৪/৮; দ্বিতীয় বিবরণ ৬/৩; ১১/৯; ২৬/৯; ২৬/১৫; ২৭/৩)
আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে, বাইবেলের বর্ণনায় মিসর থেকে বের হওয়ার সময় লেবীয়রা বাদে বাকি ১১ গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের সংখ্যা ছিল ৬ লক্ষ। তাহলে মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫ লক্ষ হওয়াই স্বাভাবিক। ঈশ্বর তাঁর প্রিয় প্রজা বনি-ইসরাইলের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষকে মিসর থেকে বের করে আনেন ‘দুগ্ধমধুপ্রবাহী’ এ দেশে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। কিন্তু তিনি কি এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন? বাইবেল থেকে জানা যায় যে, এ ত্রিশ লক্ষ মানুষ মূলত এ প্রতিশ্রুত দেশে বসবাস করতে পারেননি।
গণনাপুস্তক ১৪ অধ্যায় থেকে আমরা জানছি যে, বনি-ইসরাইলের অবাধ্যতার কারণে ঈশ্বর সিদ্ধান্ত নেন যে, মিসর থেকে আগত ২০ বছর বা তার অধিক বয়সী সকলেই মরুভূমিতেই মৃত্যুবরণ করবে। কেবলমাত্র যিফুন্নির পুত্র কালেব/ কালুত (Caleb the son of Jephunneh) ও নুনের পুত্র যিহোশূয়/ ইউসা (Joshua the son of Nun) ছাড়া আর কেউ সেই দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। চল্লিশ বছর ধরে বনি-ইসরাইল প্রান্তরে ঘুরে মরবে। কেউই প্রতিশ্রুত ‘দুগ্ধমধুপ্রবাহী’ দেশে যেতে পারবে না। ২ জন বাদে সকলেই মৃত্যুবরণ করলেন, কেউই প্রতিশ্রুতি লাভ করতে পারলেন না। (বেন-সিরা ৪৬/৭-৮: জুবিলী বাইবেল) এমনকি ঈশ্বরের সবচেয়ে অনুগত মোশি, হারোণ ও মরিয়ম কেউই প্রতিশ্রুত দেশে যেতে পারেননি। (গণনাপুস্তক ২০/১; ২০/২৩-২৯)
মোশির মৃত্যুর পরে পরবর্তী নবী যিহোশূয়, ইউসা বা ঈসা বিন নূন বনি-ইসরাইলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। পুরাতন নিয়মের ৬ষ্ঠ পুস্তক যিহোশূয় বা ইউসা। কেউ যদি এ পুস্তকটা ভাল করে পড়েন তবে নিশ্চিত হবেন যে, বনি-ইসরাইলের অবশিষ্ট মানুষদের অধিকাংশই যিহোশূয়ের সময়ে যুদ্ধ বিগ্রহে মৃত্যুবরণ করেন। মোশির সাথে মিসর থেকে বের হওয়া ২৫ লক্ষ মানুষ এবং তাদের সন্তানদের মধ্য থেকে অল্প সংখ্যক মানুষই প্রতিশ্রুত দেশে প্রবেশ ও বসবাস করতে পারেন।