লগইন করুন
সম্মানিত পাঠক, পূর্ববর্তী ৫টা অধ্যায় আমরা বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তনের বিষয় জেনেছি। আমরা দেখেছি, অনেক স্থানে সংযোজন বা বিয়োজন নিশ্চিত নয়, যেমন বৈপরীত্য ও ভুলভ্রান্তির ক্ষেত্রে। কিন্তু অন্যান্য স্থানে সংযোজন, বিয়োজন বা বিকৃতি অবিসংবাদিত ও সুনিশ্চিত। সুনিশ্চিত বিষয়গুলোকে আমরা কয়েক ভাগে বিভক্ত করতে পারি:
(১) পুস্তকসমূহের সংযোজন-বিয়োজন
আমরা দেখেছি, ইহুদি বাইবেল, প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেল, ক্যাথলিক বাইবেল, অর্থোডক্স বাইবেল ও বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রচলিত অন্যান্য বিশুদ্ধ ও স্বীকৃত (canonical) বাইবেলের মধ্যে পুস্তকের সংখ্যার ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। বিতর্কিত পুস্তকগুলোর ক্ষেত্রে দু’টার একটা সম্ভাবনা আমাদেরকে মানতে হবে: হয় এগুলো সত্যই ঐশ্বরিক পুস্তক বা আসমানী কিতাব, কিন্তু কোনো কোনো সম্প্রদায় এগুলোকে পবিত্র পুস্তক থেকে বাদ দিয়েছেন। অথবা এগুলো ঐশ্বরিক পুস্তক নয়, কিন্তু কোনো কোনো সম্প্রদায় এগুলোকে পবিত্র পুস্তকের মধ্যে সংযোজন করেছেন।
(২) অধ্যায় ও শ্লোকের সংযোজন-বিয়োজন
অবিতর্কিত বা সর্বসম্মত পুস্তকগুলোর ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বাইবেলের মধ্যে অধ্যায় ও শ্লোকের তারতম্য রয়েছে। এ সকল বিতর্কিত ও মতভেদীয় অধ্যায় ও শ্লোকের ক্ষেত্রেও উপরের দু’টা বিষয়ের একটাকে মানতে হবে। হয় এগুলো ঈশ্বরের কথা নয়; কিন্তু কোনো কোনো সম্প্রদায় তা ঈশ্বরের পুস্তকের মধ্যে সংযোজন করেছেন। অথবা এগুলো ঈশ্বরের বাক্য, কোনো কোনো সম্প্রদায় তা বাদ দিয়েছেন।
(৩) শব্দ ও বাক্যের সংযোজন-বিয়োজন
আমরা দেখলাম যে, স্বীকৃত ও বিশুদ্ধ বাইবেলের বিভিন্ন প্রচলিত সংস্করণের মধ্যে শব্দ ও বাক্যের অনেক ভিন্নতা বিদ্যমান। এ সকল ক্ষেত্রেও উপরের দু’টা সম্ভাবনার একটা আমাদের স্বীকার করতে হবে: এগুলো সংযোজিত অথবা বিয়োজিত। হয় এ সকল শব্দ বা বাক্য ‘বিহীন’ সংস্করণকে বিশুদ্ধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সেক্ষেত্রে মেনে নিতে হবে যে, অন্যান্য সংস্করণে ঈশ্বরের বাণীর মধ্যে অতিরিক্ত বাক্য বা শব্দ সংযোজন করা হয়েছে। অথবা অতিরিক্ত শব্দ বা বাক্য সংযোজিত সংস্করণকে বিশুদ্ধ বলে গণ্য করতে হবে। সেক্ষেত্রে মেনে নিতে হবে যে, অন্যান্য সংস্করণে ঈশ্বরের বাণী থেকে কিছু শব্দ বা বাক্য বাদ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বাংলা বাইবেলের মধ্যেও আমরা এ জাতীয় সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তনের কিছু নমুনা দেখেছি।
(৪) পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে সংযোজন-বিয়োজন
আমরা দেখেছি যে, বাইবেলের হাজার হাজার পাণ্ডুলিপির একটার সাথে আরেকটার মিল নেই। পুস্তক, অধ্যায়, শ্লোক, বাক্য ও শব্দের ব্যাপক ভিন্নতা বিদ্যমান পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে। এ ক্ষেত্রেও উপরের দু’টা সম্ভাবনার একটা স্বীকার করতে হবে। আমাদের মানতে হবে যে, কোনো কোনো পাণ্ডুলিপি ঈশ্বরের পবিত্র পুস্তক থেকে কিছু পুস্তক, অধ্যায়, শ্লোক, বাক্য বা শব্দ বাদ দিয়েছে অথবা সংযোজন করেছে।